×

সাহিত্য

শিল্পকলায় ‘কফিনবন্দি বাংলাদেশ’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৩, ০৯:০৬ পিএম

শিল্পকলায় ‘কফিনবন্দি বাংলাদেশ’

ছবি: ভোরের কাগজ

শেখ আব্দুল হালিম, টুঙ্গিপাড়ার একজন সাধারণ মৌলবী ও শিক্ষক। যিনি স্বভাব কবিও বটে। ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের কোনো এক রাতে মৌলবী সাহেব ঘুমন্ত অবস্থায় হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। শয্যা পাশে শোয়া স্ত্রী তার স্বামীর আচমকা কান্নায় ভয় পেয়ে চমকে উঠলেন। মৌলবী সাহেবের শরীর থরথর করে কাঁপতে থাকে। স্ত্রীর জিজ্ঞাসায় মৌলবী সাহেব জানায়, যে গত কয়েক রাত ধরে একটি ভয়ঙ্কর স্বপ্ন তাকে তাড়া করছে। সাদাকাফনে জড়ানো অচেনা একটি লাশের দাফন করানোর জন্য কয়েকজন মিলিটারি তাকে বাধ্য করে।

কিন্তু মৌলবী সাহেব সেই অচেনা লাশের মুখনা দেখে দাফনকার্য করতে সম্মত হয় না। এতে মিলিটারিরা তাকে নানাভাবে শারীরিক অত্যাচার করে। কিন্তু পরদিন রাতের স্বপ্নে মৌলবীসাহেব দেখলেন এই লাশ তার খুব কাছের একজনের। কিন্তু লাশের চেহারাটা মনে করতে পারছেন না।

১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট দুপুর। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বঙ্গবন্ধুর মৃতদেহ দাফন নিয়ে যে অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছিল সেই কাহিনি এভাবেই তুলে ধরা হয়েছে সৈয়দ জাকির হোসেন রচিত ও নির্দেশিত ‘কফিনবন্দি বাংলাদেশ’-এ।

বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে ঠাকুরগাও জেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রযোজনায় রেপাটরী নাট্যদলের প্রয়োজনায় ‘কফিনবন্দি বাংলাদেশ’ মঞ্চস্থ হয়। নাটকটিতে বিশজন অভিনেতা ও অভিনেত্রী বিভিন্ন চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেন।

সত্য ঘটনাবলম্বনে নাটকের কাহিনিতে আরো জানা যায়, টুঙ্গিপাড়ায় একটি হেলিকপ্টার অবতরণ করে। মৌলবীসাহেবকে একটি লাশ দাফনের জন্য হঠাৎ তলব করা হয়। খবরটি শোনার পর আঁতকে ওঠেন মৌলবী সাহেব। এ যে তার ভয়ঙ্কর স্বপ্নের নির্মম বাস্তবতা। কবরের নিকট পৌঁছে যখন জানতে পারেন যে কফিনবন্দি এই লাশ আর কারও নয়, এ যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নিথর দেহ। এতে তিনি স্তব্ধ হয়ে যান এবং তার বুকের ভেতরে দম বন্ধ হয়ে আসে। মিলিটারিরা দশ মিনিটের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর কফিনবন্দি লাশ মাটিচাপা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। কিন্তু মৌলবী সাহেব লাশের মুখ না দেখে দাফন কর্ম করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এক পর্যায়ে মৌলবী সাহেব কফিনের ভিতরে শায়িত বঙ্গবন্ধুকে দেখতে পেলেন।

এরপর নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর পবিত্র শবদেহকে পেরেক বন্দি কফিন থেকে উন্মুক্ত করা হয়। প্রয়াণের ত্রিশ-একত্রিশ ঘণ্টার পর বঙ্গবন্ধুর দেহ গলে-খসে পড়ার মতো অবস্থা। গোসল করানো হয় পুকুরের পানিতে। গোসলে ব্যবহৃত হয় কাপড় ধোয়ানোর ৫৭০ বল সাবান। কাফনের জন্য ছিল না অন্তত সাধারণ কোন কাপড়ের টুকরো। শেষ পর্যন্ত সেসময়ের মার্কিন সাদা থানকাপড় বঙ্গবন্ধুর পবিত্র শবদেহকে জড়ানো হয়।

মৌলবী সাহেব তার অবিচল সাহস এবং বুদ্ধিদীপ্ত প্রচেষ্টায় বঙ্গবন্ধুর লাশকে অন্তত ধর্মীয়রীতি মেনে দাফন করাতে সক্ষম হন। যেখানে বঙ্গবন্ধুর লাশকে বেওয়ারিশ লাশের মতো কোনো রকমে মাটিচাপা দেয়ার পায়তারা করছিলো হায়েনাদের দল। বঙ্গবন্ধুর মতো এক বিশাল হৃদয়ের মানুষকে এমনভাবে সমাহিত করা হলো যা ভেবে মৌলবী সাহেব কত রাত যে ঘুমাতে পারেননি তার হিসাব মেলেনি। তবে তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি কবিতা লিখলেন। যখন কঠিন বাস্তবতায় কেউ বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করতে পারতো না, সেইসময়ে। নিজ হস্তাক্ষরে রচিত সেই কবিতার পাতা তিনি বঙ্গবন্ধুর কবরে টানিয়ে রাখলেন। আর জীবন ভর বুকে ধারণ করলেন তার পঙিক্তমালা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App