×

সাহিত্য

চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের শততম জন্মদিন বৃহস্পতিবার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৩, ০৯:০০ পিএম

চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের শততম জন্মদিন বৃহস্পতিবার

চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান। ফাইল ছবি

রঙ তুলির গল্প শিল্পের অন্যতম এক মাত্রা। শিল্প ও শিল্পীর কথা এলেই মনন-মগজে অনুরণিত হয় এক অনবদ্য নাম। এস এম সুলতান।

বিশ্ব বরেণ্যে এই শিল্পীর পুরো নাম শেখ মোহাম্মদ সুলতান, নামটা পরিচিত না হলেও এস এম সুলতান যেন এক সুপরিচিত নাম। দেশের চার স্বীকৃত মাস্টার পেইন্টারের অন্যতম এই শিল্পীর শততম জন্মদিন কাল। ১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মেছিলেন তিনি। ১০ অক্টোবর ১৯৯৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

শিল্পের সাধনায় মুকুটহীন শিল্পী সম্রাটের যাত্রা সৎ এবং মহৎ কবির মতন সেই পথেই, যে পথ নির্জন। নিঃসঙ্গ কিন্তু প্রকৃতির মতই বাতাসে ভরা। সারা জীবনের চর্চায় তিনি ক্যানভাসের পর ক্যানভাস ভরে তুলেছেন জীবনের মর্মরিত স্পন্দনে।

শিল্পের এক নিজস্ব ভুবন নির্মাণ করেছেন প্রায় আয়াশহীন নিরন্তর প্রচেষ্টার মধ্যে। তার ছবির যে প্রকৃতি তা সম্পূর্ণ বাংলাদেশের আবার বিশ্বেরও। তার ছবির রমণীরা এক আপ্লুত যৌবনের স্বতঃস্ফূর্ত উচ্চারণ তা বাংলাদেশের গ্রামীণ রমণীর প্রতিমূর্তি হয়েও এমন এক পৃথিবীর অধিবাসী যা এসএম সুলতানের একান্ত নিজস্ব নির্মাণ। তার চিত্রাবলীতে যে পেশীবহুল পৌরুষের ঔজ্জ্বল্য তাও বাংলাদেশের গ্রামীণ নিয়ত কর্মচঞ্চল কৃষকেরই প্রতিনিধি।

এস এম সুলতানের ছবি আঁকার নেশা ছোটবেলা থেকেই। শৈশবে স্কুলের অবসরে রাজমিস্ত্রি বাবাকে কাজে সহযোগিতা করতেন এবং মাঝে মাঝে ছবি আঁকতেন। ১৯৩৮ সালে পড়ালেখা ছেড়ে তিনি চলে যান কলকাতায়। চিত্রসমালোচক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে তার পরিচয় সেখানেই। বিদ্যায়তনিক যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও সোহরাওয়ার্দীর সুপারিশে ১৯৪১ সালে ভর্তি হন কলকাতা আর্ট স্কুলে।

কলকাতার আর্ট কলেজে পড়তে গিয়েও শেষ করেননি পড়াশুনা। ১৯৪৪ সালে কলকাতা আর্ট স্কুল ত্যাগ করে ঘুরে বেড়ান এখানে-সেখানে। কিছুদিন কাশ্মীরের পাহাড়ে উপজাতিদের সঙ্গে বসবাস এবং তাদের জীবন-জীবিকা ভিত্তিক ছবি আঁকেন সুলতান।

প্রাতিষ্ঠানিকতায় আস্থা রাখতে না পারা মানুষটি চিরদিন চলেছেন শিল্পের খেয়ালে। বেশির ভাগ আঁকা ছবিই বিলিয়ে দিয়েছেন যাকে-তাকে। এখনো আবিষ্কৃত হচ্ছে শিল্পীর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য শিল্পকর্ম।

এস এম সুলতানের প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিলো ১৯৪৫ সালে ভারতের সিমলাতে। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে তার মোট বিশটি প্রদর্শনী হয় যেসব প্রদর্শনীতে ছিলো পিকাসো, দালি, মাতিস এর মতো বিশ্বনন্দিত শিল্পীদের চিত্রকর্ম।

ছবি আঁকার পাশাপাশি সমাজ-কল্যাণেও নিরন্তর কাজ করেছেন সুলতান। নড়াইলে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ১৯৬৯ সালের ১০ জুলাই ‘দি ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৭ সালে শিশুদের জন্য ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করেন শিশুস্বর্গ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

কর্মসূচি শিল্পীর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমি বছরব্যাপী কর্মসূচীর আয়োজন করেছে। কাল শিল্পী এস এম সুলতানের জন্মস্থান নড়াইলে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। নড়াইলে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় থাকছে- সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি, এরপর সকাল সাড়ে ১১টায় শিল্পীর সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি। সকালে শিল্পীর জীবন ও কর্মের ওপর শিশুদের অংকিত চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হবে শিশু স্বর্গ মিলনায়তনে। দুপুরে সারাদেশের ২০ জন বরেণ্য শিল্পীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে আর্টক্যাম্প ও তাদের তত্ত্বাবধানে শিশু চিত্রকর্মশালা।

বিকেল তিনটায় শিশু চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে শিশু স্বর্গ, নড়াইলে। বিকাল সাড়ে ৪টায় শিশুদের নিয়ে থাকবে চিত্রা নদীতে নৌকা ভ্রমণ। সন্ধ্যা ছয়টার আয়োজনে থাকছে নড়াইলের জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে শিল্পী এস এম সুলতানের চিত্রকর্মের পর্যালোচনা। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ। উদ্বোধন করবেন কথাসাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই। অতিথি থাকবেন ইমেরিটাস অধ্যাপক শিল্পী হাশেম খান। বিশেষ অতিথি থাকবেন নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী, সভাপতিত্ব করবেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

এছাড়া, সন্ধ্যায় তারেক মাসুদ নির্মিত ও মিশুক মুনীর ধারণকৃত প্রামাণ্যচিত্র ‘আদমসুরত’ প্রদর্শিত হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App