×

সাহিত্য

শ্রাবণ দিনে রবির কিরণ হাসি ছড়াল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৩, ০৯:২৫ পিএম

শ্রাবণ দিনে রবির কিরণ হাসি ছড়াল

শ্রাবণের আমন্ত্রণে দিনভর সূর্যের দেখা মিললেও মেঘলা দিনে বাঙালির প্রাণের কবি রবির কিরণ যেন হাসি ছড়াল। যার রচনায় রেখে গেছেন স্বপ্ন-কল্পনা-প্রেম। প্রাণে দিয়ে গেছেন সুর ও আলোর স্পর্শ, শুভচেতনা। তার গান গেয়ে শিল্পীরা সেই স্বপ্ন, সেই সুর, সেই শুভ চেতনার বাণী পৌঁছে দিলেন দর্শক-শ্রোতার হৃদয়ে। প্রয়াণ দিবসে কবির গান, কবিতাকে অবলম্বন করে দুঃসময়কে সম্মিলিতভাবে অতিক্রম করার আহ্বান জানালেন শিল্পীরা। আহ্বান জানালেন পৃথিবী থেকে হিংসা বিদ্বেষ দূর করে সবার প্রাণে প্রাণে মনুষ্যত্বের বাণী পৌঁছে দেয়ার। মঞ্চে মঞ্চে উগ্রপন্থার অন্ধকারের বিরুদ্ধে রবির সৃজন আলোর প্রেরণায় জীবনের জয়গান গাইবার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন শিল্পী, সাহিত্যিকরা।

বাংলা একাডেমি একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮২তম প্রয়াণবার্ষিকী পালন করেছে বাংলা একাডেমি। একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনের এই আয়োজনে ‘সমুখে শান্তি পারাবার’ শীর্ষক একক বক্তৃতা দেন প্রাবন্ধিক-গবেষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

শিরীণ আখতার বলেন, রবীন্দ্র প্রয়াণের বেদনা আমাদের বিধুর করে সত্য কিন্তু আমরা উপলব্ধির গভীর কন্দরে দৃষ্টি দিলে দেখি, কবি আমাদের সামগ্রিক জীবনযাপনের মধ্যে আমাদের যাবতীয় কর্ম ও ভাবনার অনুষঙ্গে প্রবলভাবে উপস্থিত। সৃষ্টির পরিমাণ ও বৈচিত্র্য দিয়েই যে তিনি বাঙালিকে সমৃদ্ধ করেছেন তা নয়, চিন্তা ও দর্শনের গভীরতা দিয়ে বাঙালিকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন তার জাতিগত চেতনাবিকাশের প্রয়োজনীয় মুহূর্তে।

মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, রবীন্দ্রনাথ যেমন শুভবোধের জন্মকে তার ঐন্দ্রজালিক সৃষ্টিতে ভাস্বর করেছেন তেমনি মৃত্যুও তার সাহিত্যে উদ্ভাসিত হয়েছে জন্মেরই নতুন স্মারক-রূপে।

সেলিনা হোসেন বলেন, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ আমাদের জন্য বেদনাবহ তবে মৃত্যুকে অমৃত করে আস্বাদনের সূত্র তিনি তার সৃষ্টিতে উজ্জ্বলভাবে রেখে গেছেন।

অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ড. অণিমা রায়, রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিক শিল্পী ড. ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রজ্ঞা লাবণী।

ছায়ানট রবীন্দ্র প্রয়াণ দিবসে অসীম দত্তর গ্রন্থনায় ছায়ানট নিবেদন করল ‘আঘাত করে নিলে জিনে’ শিরোনামে অনুষ্ঠান। ছায়ানট মিলনায়তনে আয়োজিত একক গান ও দলীয় গান দিয়ে সাজানো আয়োজনটি ‘দুঃখের তিমিরে যদি জ্বলে’ সম্মেলক গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর ‘আর রেখো না আঁধারে, আমায়’ একক গান গেয়ে শোনান মাকসুরা আখতার, ‘নয় এ মধুর খেলা’ গাইলেন মোস্তাফিজুর রহমান, লাইসা আহমদ লিসা গাইলেন ‘আঘাত করে নিলে জিনে’, ‘এই করেছ ভালো, নিঠুর হে’ গেয়ে শোনান পার্থ প্রতীম রায়। ‘বজ্রে তোমার বাজে বাঁশি’ আবৃত্তি পরিবেশন করেন পলি পারভীন। ‘এক হাতে ওর কৃপাণ আছে’ সম্মেলক গান গেয়ে শোনান ছায়ানট শিল্পীরা। এছাড়া, একক গান পরিবেশন করেন ইফ্ফাত আরা দেওয়ান, মহুয়া মঞ্জরী সুনন্দা, সেঁজুতি বড়ুয়া, সুতপা সাহা, সেমন্তী মঞ্জরী, আজিজুর রহমান তুহিন, অন্তরা, মোস্তাফিজুর রহমান।

‘আর কোনো পন্থা নাই’ শীর্ষক রবীন্দ্র রচনা থেকে পাঠ করে শোনান দেওয়ান সাইদুল হাসান। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় আয়োজন।

উদীচী গান-আবৃত্তি-কবিতা আর আলোচনায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮২তম প্রয়াণ দিবস পালন করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। সন্ধ্যায় উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজন করা হয় ‘রবীন্দ্রনাথের নাট্য ভাবনা: প্রসঙ্গ বিসর্জন’ শীর্ষক পাঠচক্রটি। কেন্দ্রীয় পাঠাগার ও পাঠচক্র বিভাগের এ আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি নিবাস দে। এতে মুখ্য আলোচক ছিলেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। আলোচনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি জামসেদ আনোয়ার তপন, সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, সহ-সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান, কোষাধ্যক্ষ বিমল মজুমদার প্রমুখ।

পাঠচক্রের শুরুতে সমবেত কণ্ঠে রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। আলোচনা পর্বে বক্তারা বলেন, বাঙালির মানস গঠনে যে কয়েকজন মানুষ অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে প্রধানতম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাংলা সাহিত্যকে সারাবিশ্বের দরবারে পরিচিত করার ক্ষেত্রেও প্রধানতম ভূমিকা রেখেছেন কবিগুরু। যাপিত জীবনের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে বিচরণ করেননি বিশ্বকবি। কবিতা, গান, উপন্যাস ও প্রবন্ধ থেকে শুরু করে সাহিত্যের সবগুলো শাখায় অনায়াস বিচরণ ছিল তার। যার মূল লক্ষ্য ছিল রাজনীতি, অর্থনীতি তথা পুরো সমাজের আমূল পরিবর্তন। সারাজীবনই নতুনের জয়গান গেয়েছেন কবিগুরু। আধমরাদের ঘা দিয়ে বাঁচাতে সবুজ, কাঁচাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বারবার। নানা সংকট, আনন্দ-বেদনায়, আশা-নিরাশায় বারবারই মানুষ রবীন্দ্রনাথের শরণ নিয়েছে। খালি হাতে ফেরাননি বিশ্বকবি। এখনো যখন মাঝেমধ্যেই সাম্প্রদায়িকতার আস্ফালন দেখা যায়, যখন বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়ায় মৌলবাদ, তখনো ঢাল হয়ে দাঁড়ান রবীন্দ্রনাথ।

শিল্পকলা একাডেমী রবীন্দ্র প্রয়াণ দিবসে শিল্পকলা একাডেমী আয়োজন করেছে ‘শিল্পের আলোয় শ্রদ্ধাঞ্জলি: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। আলোচনা করেন সাহিত্যিক কাজল রশীদ।

অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার শুরুতেই ছিল দলীয় রবীন্দ্র সংগীত। ‘আলো আমার আলো/আনন্দলোকে মঙ্গলালোক/আমরা নতুন যৌবনের দূত’ পরিবেশন করেন একাডেমির শিশু-কিশোর দল। ‘পথের শেষ কোথায় কি আছে’ পরিবেশন করেন বুলবুল ইসলাম। সালমা আকবর পরিবেশন করেন ‘তোমায় নতুন করে পারো/তবু মনে রেখো’। মহাদেব ঘোষের কণ্ঠে ‘চরণ ধরিতে দিও গো আমারে’; মনীয়া সরকার গেয়ে শোনান‘গোধূলি গগনে মেঘে ঢেকেছিলো তারা’; মেরী দেবনাথ কন্ঠে বাজল ‘শ্রাবনের ধারার মতো পড়ুক ঝরে’; দেবলীনা সুর এর কন্ঠে ‘তোমার প্রাণ মন লয়ে’; মোহনা দাসের কন্ঠে ‘সমুখে শান্তি পারাবার’/নয়ন ছেড়ে গেলে চলে’। আনিসুর রহমান তুহিনের কন্ঠে শোনা গেল ‘আছে দুঃখ আছে মৃত্যু; অনীমা রায় শোনালেন ‘আমার প্রাণের পরে চলে গেল’; সাব্রিনা খান ‘তোমার খোলা হাওয়া’/জীবন মরণের সীমা ছাড়ায়ে’; বিশ্ব যখন নিদ্রা মগন, গগন অন্ধকার’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ‘বাসা বাড়ী’ আবৃত্তি করেন আশরাফুল আলম।জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত দল পরিবেশন করে রবীন্দ্র সংগীত ‘কান্না হাসির দোল দোলানো’ ও ‘সমুখে শান্তি পারাবার’।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App