×

সাহিত্য

পান্না কায়সারকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা রবিবার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৩, ১০:২৫ পিএম

পান্না কায়সারকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা রবিবার

অধ্যাপিকা পান্না কায়সার। ফাইল ছবি

প্রিয়তমা বাংলাদেশকে ভালোবেসে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ঘাতক দালাল নির্মূল আন্দোলনে সম্মুখ সারির যোদ্ধা, বরেণ্য লেখক, গবেষক, শিশু সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য পান্না কায়সার চলে গেলেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।

শুক্রবার (৪ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান খেলাঘরের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রণয় সাহা। পান্না কায়সারের মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

প্রণয় সাহা বলেন, সকালে তিনি (অধ্যাপিকা পান্না কায়সার) বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়লে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সারের স্ত্রী ছিলেন পান্না কায়সার। অভিনেত্রী শমী কায়সারের মা। তার আরেক সন্তানের নাম অমিতাভ কায়সার।

পান্না কায়সারের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোক জানিয়েছেন বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, অধ্যাপক অনুপম সেন, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, সমাজকর্মী মালেকা খান, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুননবী, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, জননেতা ঊষাতন তালুকদার, চলচ্চিত্রনির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ, অধ্যাপক ডা. কাজী কামরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন (অব.) আলমগীর সাত্তার বীরপ্রতীক, ক্যাপ্টেন (অবঃ) সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীরউত্তম, মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অব.), অধ্যাপক ডা. আমজাদ হোসেন, ড. নূরন নবী, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির (ঘাদানিক) সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। এছাড়া, শোক জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি (ঘাদানিক), কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, বঙ্গবন্ধু পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।

পান্না কায়সারের জন্ম ১৯৫০ সালের ২৫ মে কুমিল্লা জেলার বরুড়া পয়ালগাছা চৌধুরী বাড়ীতে। তার পারিবারিক নাম সাইফুন্নাহার চৌধুরী। কলেজে পড়ার সময় ঢাকায় এক উচ্চবিত্ত পরিবারে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির অমানবিক পরিবেশ তার জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে পড়ালেখায় মন দেন পান্না। এইচএসসি পাস করে কুমিল্লা মহিলা কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি নেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন বাংলায় মাস্টার্স করতে। সে সময়ই পরিচয় হয় তরুণ বুদ্ধিজীবী, লেখক শহীদুল্লা কায়সারের সঙ্গে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল এক দিনে কারফিউয়ের মধ্যে তাদের বিয়ে হয়।

কিন্তু আড়াই বছরের মাথায় মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে স্বামীকে হারান পান্না কায়সার। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আলবদর বাহিনীর কিছু সদস্য শহীদুল্লা কায়সারকে তার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। তার আর ফেরা হয়নি। এরপর থেকে পান্না কায়সার একাই যুদ্ধ করে মানুষ করেছেন তার দুই সন্তান শমী কায়সার এবং অমিতাভ কায়সারকে। শিক্ষকতা করেছেন বেগম বদরুন্নেসা কলেজে, সেই সঙ্গে করে গেছেন লেখালেখি।

লেখালেখির জগতে পান্না কায়সারের প্রবেশ ১৯৯১ সালে। তার প্রথম গ্রন্থ ‘মুক্তিযুদ্ধ: আগে ও পরে’। অন্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘মুক্তি’, ‘নীলিমায় নীল’, ‘হৃদয়ে একাত্তর’, ‘আমি ও আমার মুক্তিযুদ্ধ’, ‘মুক্তিযুদ্ধ-সমগ্র’, ‘একাত্তরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার’, ‘মুক্তিযুদ্ধের কথকতা’, ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’ ‘অন্য কোনখানে’, ‘মানুষ’, ‘তুমি কি কেবলি ছবি’, ‘রাসেলের যুদ্ধযাত্রা’, ‘দাঁড়িয়ে আছ গানের ওপারে’, ‘আমি; না পান্না না চুনি’ ‘অন্য রকম ভালোবাসা ও সুখ’ উল্লেখযোগ্য।

পান্না কায়সার শিশু কিশোরদের সংগঠন খেলাঘরের সঙ্গে আজীবন সক্রিয় ছিলেন। ১৯৭৩ সাল থেকে ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য আর ১৯৯০ সালে এ সংগঠনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আসেন। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির (ঘাদানিক) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। এছাড়া, উদীচীসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পান্না কায়সার বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২১ পেয়েছিলেন। ১৯৯৬-২০০১ সাল মেয়াদে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন পান্না কায়সার।

এদিকে, গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা রাজধানীর গুলশানের আজাদ মসজিদে পান্না কায়সারের প্রথম নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। আজাদ মসজিদে জানাজা শেষে বেলা পৌনে তিনটার দিকে পান্না কায়সারের মরদেহ রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের গাউস নগর আবাসিক এলাকার বাসায় নেয়া হয়। সেখানে জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘর আসরের পক্ষ থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এছাড়া, সাহিত্যিক, শিল্পী, প্রকাশকসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিরা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। বাদ আসর ইস্কাটনে তার বাড়ির কাছে আরেক দফা জানাজা হয়।

পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয় পান্না কায়সারের মরদেহ বারডেম হাসপাতালে রাখা হয়েছে। রবিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার কফিন রাখা হবে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য।

সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে আরেক দফা নামাজে জানাজা হবে। পরে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শায়িত হবেন শহীদজায়া পান্না কায়সার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App