পুরুষশাসিত সমাজে নারীর প্রতি পুরুষের প্রবঞ্চনাকে উপজীব্য করে লেখা ‘আমিনা সুন্দরী’ নাটকটির প্রদর্শনী হলো। এর মধ্য দিয়ে প্রায় এক বছর বিরতির পর মঞ্চে ফিরল থিয়েটার আর্ট ইউনিটের সাড়া জাগানো এ নাটকটি। শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে এর প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।

প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো চট্টগ্রামের প্রচলিত লোককাহিনি নছর মালুম ও ভেলুয়া সুন্দরী অবলম্বনে ‘আমিনা সুন্দরী’ নাটকটি লিখেছেন প্রয়াত নাট্যবক্তিত্ব এসএম সোলায়মান। রোকেয়া রফিকের নির্দেশনায় ঢাকার মঞ্চের নন্দিত নাটকটি দেশ-বিদেশে মঞ্চায়িত হয়ে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।

পতিনিষ্ঠ আমিনা সুন্দরীর স্বামী নছর পেশায় ব্যবসায়ী। ব্যবসার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় ভিনদেশে। স্বামীর এই বিদায় আমিনার জীবনে নেমে আসে বিভীষিকা। নছর ভিনদেশি নারীকে বিয়ে করে সংসার বাধে। আমিনা নানা ঘাত-প্রতিঘাতের পরে বন্দী হয় এক সওদাগরের ঘরে। এমনই নাটকীয় গল্পের সংগীতনির্ভর নাটক আমিনা সুন্দরী।

প্রবল প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েও আমিনা স্বপ্ন দেখে বেঁচে থাকার, দীপ্তকণ্ঠে সে বলে, ‘জীবন তো একটাই। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না সব এই এক জীবনের মধ্যে। জীবন শেষ তো বেবাক শেষ।’ এমন স্বগতোক্তির মধ্য দিয়ে আমিনা সুন্দরী যেনো বলতে চাইলেন, আমিনার গল্প কোনো নির্দিষ্ট সময়ের গল্প নয়, এ গল্প সর্বকালের, পৃথিবীর সব মানুষের জীবনের সত্য।

নির্দেশক রোকেয়া রফিক বেবী বলেন, আমিনা সুন্দরী আমার কাছে কোনো সময়ের গল্প নয়, সবকালে পৃথিবীর সব প্রান্তেই এ গল্প সত্যনিষ্ঠ। তাই এক আমিনার গল্পে আমি উপস্থাপন করেছি বহু আমিনার গল্প। আমিনা সুন্দরীর গল্প এ নাটকে তুলে আনা হয়েছে হাজার নারীর গল্প হিসেবে।

তিনি জানান, বাঙালি সমাজে বহমান ‘নছর মালুম’ ও ‘ভেলুয়া সুন্দরী’ উপাখ্যানে আশ্রয় করে নতুন এক গল্প ‘আমিনা সুন্দরী’। বাঙালি নারীর চিরন্তন প্রেমের স্বরূপ এতে প্রস্ফুটিত। পুরুষশাসিত সমাজে নারীর প্রতি পুরুষের প্রবঞ্চনার অধুনা দৃষ্টিভঙ্গি এতে বিধৃত। নাটকের গল্প শুরু হয় ‘আমিনা’র অপেক্ষার মধ্য দিয়ে। আমিনার ভালোবাসার মানুষ নছর বর্মামুল্লকে (বর্তমানে মিয়ানমার) গিয়েছে বাণিজ্যে। কিন্তু পুরুষশাসিত সমাজে নারীর মনমানসিকতা, চাওয়া-পাওয়ার কোনো মূল্যই নেই। একের পর এক সমাজের নানা কুচক্রী নানা সমস্যার বিস্তার ঘটাতে থাকে। কিন্তু আমিনা মনপ্রাণ সঁপে নছরের জন্যই প্রতীক্ষা করতে থাকে। একসময় আমিনার পরিবার সমাজের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের কাছে হার মানে। অথচ আমিনার আদ্যোপ্রান্ত অপেক্ষাই নছরকে ঘিরে। নাটকের একপর্যায়ে দেখা যায় নিজের সম্মান ও অর্থলোভে নিজের মা কৌশলে আমিনাকে অন্যত্র বিয়ে দিতে চায়। বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে রক্ষা পেলেও শেষ পর্যন্ত আমিনাকে পরাস্ত হতে হয় পুরুষশাসিত সমাজের কৌশলের কাছে। পলায়নরত আমিনা ধৃত হয় ভোলো সওদাগরের কাছে। ভোলো সওদাগরকে নানা কৌশলে অবদমিত করেও নছরের জন্যই প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে থাকে আমিনা।

নাটকটিতে অভিনয় করছেন সেলিম মাহবুব, কামরুজ্জামান মিল্লাত, সঙ্গীতা চৌধুরী, অপ্সরা মৌ, পল্লবী, ফরিদা লিমা, কামাল রায়হান, শিল্পী চৌধুরী, রেজাউল সুজন, ফেরদৌস আমিন বিপ্লব, হাসনাত প্রদীপ, নুরুজ্জামান বাবু, স্বাধীন শাহ, হাসনাত প্রদীপ, নীল চৌধুরী, চন্দন রেজা প্রমুখ।

থিয়েটার আর্টের ১২তম প্রযোজনা ‘আমিনা সুন্দরী’। এই সংগীতনির্ভর নাটকটির প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিল ২০০৭ সালে।