×

সাহিত্য

শিল্পকলায় দ্যুতি ছড়াচ্ছে জামদানি শাড়ি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৩, ১০:০৪ পিএম

শিল্পকলায় দ্যুতি ছড়াচ্ছে জামদানি শাড়ি

শাড়িটির রং গাঢ় অফ হোয়াইট। এর পুরো জমিনজুড়ে হালকা কারুকাজে ভরপুর। পাড়জুড়ে পুরো কালো সুতোয় বোনা অনন্য কারুকাজ। কাছাকাছি একই রং এবং নকশার আরেকটি শাড়ি পাশাপাশি দেয়ালজুড়ে স্বমহিমায় উজ্জল ঐতিহ্যের দ্যুতি ছড়াচ্ছে। প্রদর্শিত আদি জামদানি শাড়ি দুটি দুইশ বছরের পুরোনো। দুটো শাড়ির সংগ্রাহকই কলকতার উইভার্স স্টুডিওর স্বত্বাধিকারী দর্শন মেকানি শাহ। এছাড়া, ৪০-৫০ বছরের পুরনো জামদানির মোটিফে তৈরি বিভিন্ন নকশার ২৫টি শাড়ি প্রদর্শনীতে উপস্থাপিত হয়েছে। এ শুধু জামদানি শাড়ি নয়, ঐতিহ্যের স্মারক। যেন চোখ বুজে যাওয়া সুন্দরের সামনে মহাকাল এসে দাড়িয়েছে। আর এসবের সামনে থমকে দাড়িয়ে অবাক বিস্ময়ে দেখছিল আগত দর্শনার্থীরা।

বুধবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের সহায়তায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেবা নারী ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র (সেবা) আয়োজিত ‘অনন্য বয়নে জামদানি উৎসব’ শীর্ষক এগার দিনের এই উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান। সেবা নারী ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের (সেবা) নির্বাহী পরিচালক সাইদা রোকসানা খানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্বব্যাংকের অ্যাক্টিং কান্ট্রি ডিরেক্টর ফর বাংলাদেশ অ্যান্ড ভূটান গেইল মার্টিন, বিশ্বব্যাংকের এসইপি টাস্ক টিম লিডার ইউন জু অ্যালিসন ই, টেক্সটাইল বিশেষজ্ঞ, সংগ্রাহক ও কলকাতার দ্য উইভার্স স্টুডিওর স্বত্ত্বাধিকারী দর্শন মেকানি শাহ, বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের সভাপতি চন্দ্রশেখর সাহা।

পিকেএসএফ’-এর সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্টের আওতায় জামদানির প্রচার, প্রসার, উন্নয়ন ও এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের জীবনমানের উন্নয়নের লক্ষ্যে ১১দিনের জামদানি উৎসব।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, জামদানি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির অংশ। জামদানি নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। স্বাধীনতার এই ৫২ বছরে আমাদের এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলোকে আমরা তুলে ধরতে পারিনি। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমাদের ঐতিহ্য নিয়ে ভাবে। যার কারণে আমাদের সরকার আমাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উন্নয়ন ও প্রসারে কাজ করছে। আমাদের অন্যতম এই ঐতিহ্য জামদানি বর্তমানে হুমকির মুখে। দেশীয় ঐতিহ্য জামদানির প্রচার ও উন্নয়নে এগিয়ে আসার জন্য পিকেএসএফ ও সেবা;কে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই।

চন্দ্রশেখর সাহা বলেন, সমসময়ের প্রেক্ষাপটে বিশ্বজুড়ে জামদানির পৃষ্ঠপোষকতা পূর্ণিমার চাদের মতোই প্রশংসিত। জ্যোৎস্নার মতো উদ্ভাসিত এর আগামীর সম্ভাবনা। সন্দেহাতীতভাবেই বলা যায়, সবার পৃষ্ঠপোষকতায় আগামি দিনে বাংলাদেশের জামদানি বয়নশিল্পের শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে।

সাইদা রোকসানা খান বলেন, স্পর্শকাতর এই শিল্পের স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে পারাটাই হলো আজকের মূল চ্যালেঞ্জ। পূর্বসূরিদের কাছ থেকে বয়ননৈপুণ্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিল্পীরা কতটা আয়ত্ত করতে পারছেন, তার ওপরই নির্ভর করছে এই শিল্পপরম্পরা বজায় থাকা। সেবার লক্ষ্য কেবল জামদানিকে টিকিয়ে রাখা নয়, বরং জামদানির ঐতিহ্যকে তুলে ধরা ও বয়নশিল্পীদের জীবনমানের টেকসই উন্নয়ন, বয়নশিল্পকে পরিবেশবান্ধব করা। আর এই ঐতিহ্যবাহী বয়নশিল্পকে কলুষিত হওয়া থেকে রক্ষা করা।

প্রদর্শনীতে আদি জামদানি নকশায় বোনা শাড়ি, নকশার নমুনা, প্রাকৃতিক রংয়ের উপকরণ, জামদানি কাপড়ে তৈরি বিভিন্ন পণ্য, ইনস্টলেশন ও জামদানি বয়নশিল্পীদের জীবন ও অভিজ্ঞতা নিয়ে তৈরি নানা ইলাস্ট্রেশন স্থান পেয়েছে।

প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ৭ নাম্বার গ্যালারিতে সবার জন্য উন্ম্ক্তু থাকবে এই প্রদর্শনী। ২৯ জুলাই শেষ হবে ১১দিনের এই প্রদর্শনী।

উৎসবের প্রদর্শনী উপলক্ষে ২৩ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে জামদানি ভবিষৎ সম্ভাবনা নিয়ে সেমিনার। ২৯ জুলাই সমাপনী ছাড়া প্রতিদিনই থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই প্রদর্শনী সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। তবে এখানে কোন ধরণের ফটোগ্রাফি ও ভিডিওগ্রাফি করা যাবে না। এই উৎসব উপলক্ষ্যে একটি বইও প্রকাশিত হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App