×

সাহিত্য

তিনি ছিলেন একজন পূর্ণাঙ্গ শিল্পী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৩, ০৯:০০ পিএম

তিনি ছিলেন একজন পূর্ণাঙ্গ শিল্পী

আলোচনা শেষে মঞ্চস্থ হয় মেরাজ ফকিরের মা নাটকটি

প্রয়াত অভিনেতা, নাট্যকার, নির্দেশক ও চলচ্চিত্র পরিচালক আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ আল-মামুন ছিলেন টেলিভিশন নাটকের একজন পথিকৃৎ। চলচ্চিত্র নির্মাণেও তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ছাড়াও অসংখ্য পদক ও সম্মাননায় তিনি ভূষিত হয়েছেন। আজ ছিল খ্যাতিমান এই নাট্যজনের ৮১তম জন্মদিন। দিনটি ঘিরে নানা আয়োজন করেছে তারই প্রতিষ্ঠিত নাট্যদল ‘থিয়েটার’।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে আবদুল্লাহ আল-মামুন স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করেছে নাট্যদলটি।

থিয়েটারের সাংগঠনিক পরিচালক নাট্যজন রামেন্দু মজুমদারের সঞ্চালনায় ও থিয়েটার সভাপতি ফেরদৌসী মজুমদারের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা দেন বিশিষ্ট অভিনয়শিল্পী ও সংসদ সদস্য সুবর্ণা মুস্তাফা। স্মৃতিচারণ করেন বিশিষ্ট অভিনেতা কেরামত মওলা। আবদুল্লাহ আল মামুনের বর্ণিল জীবন নিয়ে কথা বলেন নাট্যকার অধ্যাপক আব্দুস সেলিম, বিমল মজুমদার, তোসাদ্দেক মান্না, ত্রপা মজুমদাসহ অনেকে।

স্মারক বক্তা সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, আমার এই শিল্পিত জীবনে বাব-মার পরে সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে আবদুল্লাহ আল-মামুনকে। মামুন ভাই ছিলেন বলেই আমি আজকের এই সুবর্ণা মুস্তাফা। আমার শিল্পজীবনের পুরোটাজুড়েই রয়েছে তার উপস্থিতি। তার নির্দেশনায় কাজ করার সমান্তরালে তার সঙ্গে অভিনয়েরও সুযোগ ঘটেছে। অন্যদিকে আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে তিনি ছিলেন উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ প্রযোজক। অনেক প্রযোজকের সঙ্গে আমি কাজ করার সুযোগ পেলেও তার মতো এমন প্রতিভাবান কাউকে মনে হয়নি। আমরা যে হাজার বছরের বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা বলি, সেটাকে ধারণ করেই তিনি শিল্প সৃজন করেছেন। বর্তমান প্রজন্ম তার মতো একজন শিল্পীকে পায়নি- এটা তাদের দুর্ভাগ্য। সমকালে অনেক প্রতিভাবান তরুণ শিল্পী রয়েছেন। কিন্তু তাদের গড়ে ওঠার জন্য একজন আবদুল্লাহ আল-মামুন নেই। কারণ, শিল্পীর ভেতরের বোধ তৈরি করতে পারতেন মামুন ভাই।

সুবর্ণা বলেন, তিনি ছিলেন একজন পূর্ণাঙ্গ শিল্পী। তার সততার জায়গাটি ছিল প্রবল। সে কারণে তিনি ছিলেন সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ এক শিল্পী। স্বৈরশাসক এরশাদের শাসনামলে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) সরকারি চাকরি করেও তিনি কখনো আপস করেননি। আপসহীনতার কারণেই চাকরি জীবনে তার যথার্থ মূল্যায়ন হয়নি। কারণ, সমসাময়িক অন্যায়-অবিচার নিয়ে সব সময় সোচ্চার ছিলেন। তার এসব প্রতিবাদের রূপায়ন ঘটেছে মঞ্চ নাটকে।

রামেন্দু মজুমদার বলেন, আবদুল্লাহ-মামুন জানতেন কিভাবে মঞ্চসফল নাটক লিখতে হয়। সংলাপ রচনায় ছিল তার বিশেষ পারঙ্গমতা। অন্যদিকে তার নাটকে প্রথম পাঁচ মিনিটে এমন কিছু ঘটতো যা দর্শককে টেনে রাখতো। এ কারণে আশির দশকে প্রায় সকল নাট্যদলই তার নাটক মঞ্চস্থ করেছে। সেই সুবাদে যতদিন মঞ্চ নাটক থাকবে ততদিন তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। অন্যদিকে টেলিভিশন নাটকের ক্ষেত্রে তিনি অনেক শিল্পী তৈরি। চলচ্চিত্র নির্মাণেও রেখেছেন সফলতার স্বাক্ষর। সারেং বৌ, এখনই সময়সহ বেশ কিছু আলোচিত ও সমাদৃত ছবি নির্মাণ করেছেন।

কেরামত মওলা বলেন, আমরা বন্ধু ছিলাম। তার বিয়ে থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সেই সম্পর্ক অটুট ছিল। চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন মিডিয়ার পার্থক্যটা খুব ভালোভাবে বুঝতেন আবদুল্লাহ আল-মামুন। সারেং বৌ ও সংশপ্তক দেখলে সেটা বোঝা যায়। সেই বাস্তবতায় টিভি মিডিয়ার রাজা ছিলেন তিনি।

ফেরদৌসী মজুমদার বলেন, আমার মঞ্চে দাঁড়ানো থেকে সংলাপ প্রক্ষেপণ ও অভিনয়- সবটাই তার হাত ধরে হয়েছে। তিনদিনে একটি নাটক লিখেছেন তিনি। এমন প্রতিভাবান নাট্যকার সহজে মেলে না। তাই তিনি আমাদের সঙ্গে আছেন এবং থাকবেন।

অনুষ্ঠানে নাট্যজন আতাউর রহমানের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার।

স্মারক বক্তৃতা শেষে সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় থিয়েটারের কালজয়ী প্রযোজনা ‘মেরাজ ফকিরের মা’। আবদুল্লাহ আল-মামুন রচিত ও নির্দেশিত এই নাটকের এটি ছিল ২০৫তম প্রদর্শনী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App