×

সাহিত্য

আমৃত্যু সংস্কৃতির সংগ্রামে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৩, ০৯:৪৭ পিএম

আমৃত্যু সংস্কৃতির সংগ্রামে

ছবি: ভোরের কাগজ

আমৃত্যু সংস্কৃতির সংগ্রামে
আমৃত্যু সংস্কৃতির সংগ্রামে
আমৃত্যু সংস্কৃতির সংগ্রামে

গান-কবিতা আর সহযোদ্ধাদের সশ্রদ্ধ স্মৃতিচারণে ভাষা সংগ্রামী, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা, বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাবেক সভাপতি কামাল লোহানীর ৯০তম জন্মদিন উদযাপন করল বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।

সোমবার (২৬ জুন) বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা মিলনায়তন কেন্দ্রে উদীচী আয়োজন করে কামাল লোহানীর ৯০তম জন্মদিন উদযাপন অনুষ্ঠান।

উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে ‘কামাল লোহানী: এক অন্তহীন পান্থ’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট নাট্যজন এবং উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি ড. রতন সিদ্দিকী। স্মৃতিচারণ করেন নারী নেত্রী ফওজিয়া মোসলেম, সংস্কৃতিজন ও শিক্ষক কাজী মদিনা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রাফিউর রাব্বি এবং কামাল লোহানীর ছোট বোন কবি দিলারা মেজবাহ। সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।

শুরুতে কামাল লোহানীর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উদীচী কেন্দ্র্রীয় সংসদ, ঢাকা মহানগর সংসদ, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ, সরগম ললিতকলা একাডেমী, সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, প্রগতি লেখক সংঘ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা জাতীয় কমিটি, সোমেন চন্দ চর্চা কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, থিয়েটার বায়ান্ন, সৎসঙ্গ ফাউন্ডেশন ও কামাল লোহানীর পরিবারের পক্ষ থেকে তার কন্যা ও বোন। এরপর ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’ গানের সঙ্গে ৯০টি প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে কামাল লোহানীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা।

স্মারক বক্তা রতন সিদ্দিকী বলেন, কামাল লোহানী তার দীর্ঘ জীবনে ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন ও কারাবরণ করেছেন। যুক্তফ্রন্টের অনুকূলে জনমত সংগঠন করেছেন। পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রে পূর্ববাংলার নাম পরিবর্তনের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষে বরীন্দ্রবৈরিতার বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক সংগ্রাম করেছেন। শরীফ শিক্ষানীতি ও হামিদুর রহমানের শিক্ষা কমিশন এর প্রতিবাদে ছাত্র সমাজের লড়াইয়ে সহযোগী হয়েছেন। শহিদ মোস্তফা, ওয়াজিউল্লাহ, বাবুলের রক্তস্নাত পথে হেঁটেছেন অক্লান্তিতে।

তিনি বলেন, প্রায় সাত দশকের আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অভিঘাত তার সে অভিজ্ঞানের জন্ম দিয়েছিল। তাই তাকে উদীচীতে স্থায়ী করে ঠিকানা দিয়েছিল। আজ অকপটে বলা যায় আমৃত্যু শিল্পীসংগ্রামী কামাল লোহানী এবং উদীচী চলেছে সমান্তরালে ও স্বলক্ষাভিমুখে। কামাল লোহানীর সেই পথচলা বস্তুত অন্তহীন পান্থর বিরতীহীন পথচলা।

স্মারক বক্তা আরো বলেন, পাক-ভারতের ষড়যন্ত্রমূলক যুদ্ধে আইউবি চক্রান্তের প্রতিবাদ করেছেন। ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, গণঅভ্যুত্থান, নির্বাচন ও মহান মুক্তিযুদ্ধÑসবখানেই ছিল তার যথার্থ ও উল্লেখ্য ভূমিকা। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংবাদ বিভাগের প্রধান হিসেবে রেখেছেন কার্যকর অবদান। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর নিয়াজির আত্মসমর্পনের সংবাদ তো নিজে লিখে নিজে পাঠ করেছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে’।

তিনি বলেন, জাতীয় যৌবনকালের দৃঢ় যুবক কামাল লোহানী ছায়ানট, ক্রান্তিÑদুই সংগঠনে থেকে নৃত্য, আবৃত্তি, অভিনয় করেছেন ও সঙ্গীতে কণ্ঠ মিলিয়েছেন। সে গেল তার শিল্পীসত্তার বাহ্যপ্রকাশ। সে কাজ অনেকেই করেন এবং একটি সময়ের পর আর করেন না অনেকে। আবার কেউ কেউ আমৃত্যু সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে থাকেন। কিন্তু সংস্কৃতির সঙ্গে থাকেন না। কিন্তু তিনি আমৃত্যু থেকেছেন সংস্কৃতির সঙ্গে এবং সংস্কৃতির সংগ্রামে।

কামাল লোহানীর শৈশবের নানা স্মৃতিচারণ করে ছোট বোন দিলারা মেজবাহ বলেন, কলেজ জীবন থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন কামাল লোহানী। আজীবন তিনি আত্মত্যাগসহ অনন্য সব মানবিক গুণাবলিকে ধারণ করে গেছেন।

আলোচনা পর্বের শুরুতে দু’টি দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সঙ্গীত বিভাগের শিল্পীরা। এর মধ্যে কামাল লোহানীকে নিয়ে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি প্রবীর সরদারের লেখা এবং উপমহাদেশের বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ কল্যাণ সেন বরাট-এর সুরে ‘আমাদের চেতনার বাতিঘর, মানুষ গড়ার কারিগর’, ‘মানুষ হ মানুষ হ, আবার তোরা মানুষ হ’ গানটি। কামাল লোহানীর লেখা ‘এই দেশ, এই জনগণ আমার অস্তিত্বের সগর্ব উচ্চারণ’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য শিখা সেন গুপ্তা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App