শোষণ-বৈষম্যমুক্ত-অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন এ দেশের গনমানুষের নেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য। যে কোনো অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে কখনো কুণ্ঠাবোধ করেননি, কোনো রক্তচক্ষুকে ভয় করেননি। মন্ত্রী হয়ে ক্ষমতার স্বাদ নেয়ার অনেক সুযোগ ছিল, প্রস্তাব ছিল। কিন্তু ক্ষমতার মোহ কখনো তাকে টানতে পারেনি। পারেনি তাকে তার আদর্শের জায়গাটি থেকে সরাতে। তার মতো এমন ত্যাগী-সাহসী রাজনীতিবিদের চলে যাওয়া আমাদের সমাজে, রাজনীতিতে ও লড়াই করার জায়গাটিতে বিরাট শূণ্যতার সৃষ্টি হয়েছে। শূন্যতা পূরণ হবে না। তবে নতুন প্রজন্ম যদি তার মতো রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বের জীবনাদর্শ থেকে কিছু শিখে দেশ গড়ার কাজে লাগাতে পারে সেটাই হবে আমাদের জন্য প্রাপ্তি।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে শনিবার সন্ধ্যায় প্রয়াত ‘জননেতা পঙ্কজ ভট্ট্রাচার্য নাগরিক স্মরণ সভা কমিটি, চট্টগ্রাম’-এর উদ্যোগে আয়োজিত সভায় রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিক এ অভিমত ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, রাজনীতি যে শুধুই আত্মস্বার্থ আর ভোগবিলাস নয়, জীবন নিবেদিত অধ্যায় তার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে গেছেন জননেতা পংকজ ভট্টাচার্য। স্মরনসভার শুরুতে একমিনিট নীরবতা পালন করেন উপস্থিত নাগরিকবৃন্দ। শোকসঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী শীলা মোমেন। প্রয়াত-ত্যগী এই রাজনীতিবিদের জীবনী পাঠ করে শোনান উদীচী শিল্পী গোষ্টীর সংগঠক শীলা দাশগুপ্ত।

স্মরণ সভা কমিটির আহ্বায়ক কবি-প্রাবন্ধিক আবুল মোমেনের সভাপতিত্বে ও সমন্বয়ক অশোক সাহার সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, প্রবীন শ্রমিক নেতা আহসানুল্লাহ চৌধুরী, কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কমরেড মো. শাহ আলম, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ অ্যাডভোকেট সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক রনজিত কুমার দে, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র চট্টগ্রামের সভাপতি তপন দত্ত, প্রবীণ রাজনীতিক আবু তাহের মাসু, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মফিজুর রহমান, পরিবারের পক্ষ থেকে ডা. মানস বোস প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, পংকজ ভট্টাচার্য জীবনের শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছেন অসীম সাহসে। ক্ষমতার মধু আহরণ করেননি কখনো। কোনোরকম লোভাতুর আহ্বানেও সাড়া দেননি। পঙ্কজ ভট্টাচার্য ছিলেন আপাদমস্তক একজন প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ। একসময় ছাত্র আন্দোলনের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক পঙ্কজ ভট্টাচার্য সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সাহসী সংগ্রাম করেছেন। তিনি একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ছিলেন ন্যাপ- কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন যৌথ গেরিলা বাহিনীর নেতা ছিলেন। তার দীর্ঘ বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন সময় শোষকগোষ্ঠী, প্রতিক্রিয়াশীল মহলের হামলা, অত্যাচার, জেলজুলুম-নিগ্রহ সব সহ্য করেছেন। কিন্তু সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন চরম ধৈর্য নিয়ে, এতটুকুও দমেননি।