×

সাহিত্য

সমরেশ মজুমদার বেঁচে থাকবেন অনুপম উচ্চতায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৩, ০৯:১৭ পিএম

সমরেশ মজুমদার বেঁচে থাকবেন অনুপম উচ্চতায়

শনিবার জনপ্রিয় লেখক সমরেশ মজুমদার স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত। ছবি: ভোরের কাগজ

জন্মভূমি জলপাইগুড়ির সবুজ প্রকৃতি ও চা শ্রমিকের দারিদ্র্যক্লিষ্ট জীবন সমরেশ মজুমদারকে লেখার রসদ যুগিয়েছিল। পরবর্তীতে কলকাতা জীবনে থিতু হয়ে নাগরিক জীবনের চালচিত্র তিনি এঁকে গেছেন নিজস্ব ভঙ্গিমায়। গল্প বা উপন্যাসের চরিত্রগুলো কালান্তরে বাঙালি পাঠকের মনে গেঁথে গেছে নান্দনিক বাঙময়তায়। ফলে দেশকালের গণ্ডি পেরিয়ে সমরেশ রয়ে গেছেন চিরন্তন। তার কাছে ক্ষমতা, মোহ এবং রাজনীতির চেয়ে বন্ধুত্বের মূল্যই ছিল বেশি। যতদিন বাঙালি থাকবে ততদিন সমরেশ মজুমদার বেঁচে থাকবেন অনুপম উচ্চতায়।

শনিবার (১৩ মে) বিকালে আবিস্কার পাবলিকেশনের আয়োজনে জাতীয় প্রেসক্লাবে দুইবাংলার জনপ্রিয় লেখক সদ্য প্রয়াত সমরেশ মজুমদারের স্মরণসভায় এভাবেই তাকে স্মরণ করেন লেখক, কবি ও সাংবাদিকরা।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি হাসান হাফিজের সঞ্চালনায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমীনের সভাপতিত্বে আয়োজিত স্মরণ সভায় বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি, বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি ফারুক মাহমুদ, কবি ফরিদ আহমেদ দুলাল, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, নবযুগ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী অশোক রায় নন্দী, ভারত বিচিত্রার সাবেক সম্পাদক নান্টু রায়সহ আরও অনেকে। সমরেশ মজুমদারের ‘প্রথম জীবন দ্বিতীয় জীবন’ শিরোনামের গল্প থেকে পাঠ করেন কবি শামীমা চৌধুরী। ভার্চুয়ালি যুক্ত হন কলকাতা পাবলিশার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব চ্যাটার্জি। স্বাগত বক্তব্য দেন আবিষ্কার পাবলিকেশনের কর্নধার দেলওয়ার হাসান।

প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, সত্তরের শেষ দিকে নকশালবাড়ি আন্দোলন সমরেশ মজুমদারের ‘কালবেলা’ ও ‘কালপুরুষ’ উপন্যাসে উঠে এসেছে রোমান্টিসিজম ও বিপ্লবের মিশেলে। বাঙালি পাঠক ‘মাধবীলতা’ ও ‘দীপাবলী’ উপন্যাসের চরিত্রগুলোতে এখনও নিজেকে খুঁজে পায়। এখানেই তো একজন নন্দিত লেখকের স্বার্থকতা।

তিনি বলেন, কোনো লেখক জনপ্রিয় হওয়ার জন্য লেখেন না। প্রতিটি লেখক তার নিজস্ব লেখার ধারায় লেখা দিয়েই নিজেকে অতিক্রম করে যান। সমরেশ মজুমদারও তার সাহিত্যে বেচে থাকবেন তার নিজস্ব এবং অনন্য বৈশিষ্ট্যের মধ্য দিয়ে।

শ্যামল দত্ত বলেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে সমরেশ মজুমদারের মেশার কোনো দেয়াল ছিল না। যতদিন পর্যন্ত বাঙালি থাকবে ততদিন তিনি পাঠকের মধ্যে অনন্তকাল বেচে থাকবেন। বাংলাদেশ তাকে মনে রাখবে।

ফরিদা ইয়াসমীন বলেন, সমরেশ মজুমদারের ‘দীপাবলী’ পড়ে নিজেকে আমি জীবনযুদ্ধের জন্য তৈরি করেছি। পাঠককে তিনি তাগিদ দিয়ে গেছেন সমাজ পরিবর্তনের জন্য নিজের করণীয় সম্পর্কে। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সমরেশ মজুমদারের মেয়ে দোয়েল মজুমদার তার বাবার সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে বলেন, হাসপাতালে ৭৯ বছর বয়সী বাবাকে দেখে মনে হচ্ছিল, আমার বাবা নয়, যেন আমার ছেলে শুয়ে আছেন।

কলকাতা পাবলিশার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব চ্যাটার্জির স্মৃতিচারণে পশ্চিমবঙ্গের বাড়িতে অতিথিপরায়ণ সমরেশ মজুমদারের সরস কথোপকথনের স্মৃতি উঠে আসে তার কথোপকথনে। তেমনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাঙালি লেখকদের সঙ্গে কলকাতার প্রকাশকদের মিথস্ক্রিয়ার কথাও জানান তিনি।

সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি বলেন, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের মধ্যে এক ধরণের দ্বন্দ্ব রয়েছে। কলকাতার লেখকরা মনে করেন তারা যা লিখেন, তাই শ্রেষ্ঠ। আর এদেশে লেখকরা যারা কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাদের নিয়ে অন্যরা ভাবে ওই লেখকরা কলকাতার তোষণ করেন। সমরেশ মজুমদার এ পক্ষ-বিপক্ষকে এক করতে চেয়েছেন। সমরেশ মজুমদার তার লেখনীর কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছিলেন বাংলাদেশকে।

৩ দশকের সম্পর্কের স্মৃতিচারণ করে নঈম নিজাম বলেন, তার কাপছে ক্ষমতা মোহ রাজনীতির চেয়ে সম্পর্কের মূল্য ছিল বেশি। আড্ডার ব্যাপারেও তিনি ছিলেন বেশ রাজসিক।

নান্টু রায় বলেন, জলপাইগুড়িতে তার লেখালেখির শুরু হলেও তার বিকাশ ঘটেছিল। এর জন্য দীর্ঘসময় ধরে তাকে লিখতে হয়েছে। তিনি ছিলেন বিরল প্রজাতির লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App