বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন দেশের মঞ্চ নাট্যদলগুলোর সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম। দেশের নাট্য সংগঠনগুলোর অভিভাবক সংগঠন এটি। দেশের নাট্য আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষে সংগঠনটির যাত্রা শুরু করে ১৯৮০ সালের ২৯ নভেম্বর। সম্প্রতি গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন থেকে পুরনো নাট্য সংগঠন ঢাকা থিয়েটারের সদস্যপদ প্রত্যাহারের ঘটনায় ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করে ফেডারেশনের সভাপতি লিয়াকত আলী লাকীকে চিঠি পাঠিয়েছেন দেশের চার শীর্ষ নাট্য সংগঠন প্রধান। চিঠির চার লেখকই একেক মেয়াদে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

ফেডারেশনকে ‘সংকট’ সমাধানে সময় বেঁধে দিয়ে ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ঢাকা থিয়েটারের সদস্যপদ ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় তারা ‘মর্মাহত’।

লিয়াকত আলী লাকীকে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে গত ১৩ এপ্রিল। এতে দেখা যায়, ‘নাট্যচক্রের’ পক্ষে ম. হামিদ, ‘নাট্যদল থিয়েটার’-এর পক্ষে রামেন্দু মজুমদার, ‘আরণ্যক’-এর পক্ষে মামুনুর রশীদ ও ‘নাগরিক’-এর পক্ষে সারা যাকের চিঠিতে সই করেছেন।

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের প্রতিষ্ঠাতা দল হিসেবে আমরা দীর্ঘদিন ধরেই ফেডারেশানের সাংগঠনিক সংকট উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করে আসছি।

সম্প্রতি ঢাকা থিয়েটারের পক্ষে ফেডারেশানের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক (ও পরবর্তীতে চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দীন ইউসুফ) চিঠি দিয়ে ফেডারেশান থেকে ঢাকা থিয়েটারের সদস্যপদ প্রত্যাহারের যে সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন, তা আমাদের মর্মাহত করেছে।

ঢাকা থিয়েটার এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে জানিয়ে এই চার অগ্রজ বলেছেন, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সাধারণ পরিষদের সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ঢাকা থিয়েটার প্রতিনিধি কামাল বায়েজীদকে কেন্দ্রীয় কমিটি যেভাবে অব্যাহতি দিয়েছে, সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করে ঢাকা থিয়েটার ১৪ এপ্রিল একটি পত্র দেয়।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, আপনারা এ পত্রের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ হয়ে ঢাকা থিয়েটার এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।

আমরাও মনে করি কামাল বায়েজীদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর একটা নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন ও তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া দরকার। সেখানে সে দোষী সাব্যস্ত হলে, তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

চিঠিতে বলা হয়, আমরা বিভিন্ন সময়ে বলে এসেছি যে ফেডারেশানে আমরা কোনো বিভাজন চাই না। আমাদের সমবেত চেষ্টায় গড়ে ওঠা এতদিনের ঐক্য বজায় থাকুক- এটা আমাদের কাম্য।

ফেডারেশনকে সময় বেঁধে দিয়ে চিঠিতে বলা হয়, আমাদের বিশেষ অনুরোধ, আগামী ৩০ মে’র মধ্যে এ বিষয়ে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সমাধান আপনারা দেবেন। আপনাদের কোনো পদক্ষেপ যেন নাট্যাঙ্গনে বিভাজন সৃষ্টি না করে- এটা আমাদের আন্তরিক প্রত্যাশা।

এ বিষয়ে কথা বলতে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতি লিয়াকত আলী লাকীকে একাধিকার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

গত ২২ মার্চ ফেডারেশনের সভাপতি লিয়াকত আলী লাকীকে লেখা এক চিঠিতে ঢাকা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফ ফেডারেশন ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানান।

কামাল বায়েজীদকে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কারের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা থিয়েটার ওই পদক্ষেপ নেয়।

প্রায় অর্ধ শতক পেরিয়ে আসা ঢাকা থিয়েটার গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। আফজাল হোসেন, হুমায়ুন ফরীদি, সুবর্ণা মুস্তাফা, রাইসুল ইসলাম আসাদ, জহির উদ্দিন পিয়ার, শহীদুজ্জামান সেলিম, শমী কায়সারে মত অনেক তারকার পাঠশালা এই নাট্য সংগঠন। সেলিম আল দীনের অধিকাংশ নাটক মঞ্চে এসেছে ঢাকা থিয়েটারের মাধ্যমে।

ঢাকা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, অগঠনতান্ত্রিকভাবে কামাল বায়েজীদকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার প্রতিবাদে ফেডারেশন থেকে সদস্যপদ প্রত্যাহার করেছে ঢাকা থিয়েটার।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২২ জানুয়ারি ফেডারেশনের সম্পাদক (প্রচার) মাসুদ আলম বাবুর স্বাক্ষরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কামাল বায়েজীদ (সাধারণ সম্পাদক) ও রফিকুল্লাহ সেলিমকে (অর্থ সম্পাদক) অব্যাহতি দেয়ার বিষয়টি জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও সাংগঠনিক স্বেচ্ছাচারিতার দায়ে সেক্রটারি জেনারেল ও অর্থ সম্পাদককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলন করে কামাল বায়েজীদ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এভাবে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কাউকে অব্যাহতি দেয়া ‘অগণতান্ত্রিক’।