×

সাহিত্য

বইমেলায় আড্ডা ঘোরাঘুরি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৩৯ এএম

বইমেলায় আড্ডা ঘোরাঘুরি

ছবি: সংগৃহীত

সন্ধ্যার দিকে খুনশুটি করতে করতেই টিএসসি অভিমুখে যাচ্ছিলেন ইডেন মহিলা কলেজের দুই শিক্ষার্থী পুষ্পিতা আর সুমাইয়া। অমর একুশে বইমেলায় আজই তাদের প্রথম পদার্পণ। এত এত মানুষ, এত বইয়ের স্টল দেখে তারা বিস্মিত। অনেকটা আত্মহারা। মেলাজুড়েই দুই বান্ধবী মিলে ঘুরেছেন। তবে বই কেনেননি। জানালেন, পরে এসে তারা বই কিনবেন।

মেলার চত্বরে খোশগল্পে মেতেছিলেন দুই বন্ধু শিহাব আর সৌরভ। তারা এসেছেন পুরান ঢাকা থেকে। লেকের পাশে বসে আড্ডা দেয়ার সময় বললেন, শুরু থেকেই আসছি প্রায় প্রতিদিনই, অফিস শেষে এখানে চলে আসি। বেশ ভালো লাগে। অনেকের দেখা মেলে। অবশ্য বইও কিনব। পছন্দের লেখকও আছেন। তবে কদিন পর।

তবে সবাই যে আড্ডা আর ঘোরাঘুরিইে ব্যস্ত এমনটা নয়, কেউ কেউ স্টলে ঘুরছেন, বইও কিনছেন। তাদেরই একজন রোহান, তিনি বললেন, স্টলগুলোতে এখনো সব বই আসেনি। তালিকা সংগ্রহ করলাম বেশ কয়েকটি স্টল থেকে। আরেকটিতে পছন্দের একটি বইও পেলাম। বাকি বইগুলো পরে এসে কিনব।

শনিবার বইমেলার চতুর্থ দিনে এমন চিত্রই দেখা গেছে। তবে অনেক স্টল এখনো খানিকটা এলোমেলো। মেলা চত্বরজুড়ে কিছুটা অপরিচ্ছতা রয়েই গেছে। এ ব্যপারে অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে তরুণদের প্রধান আকর্ষণ লিটলম্যাগ চত্বর এখনো অপ্রস্তুত। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন লিটলম্যাগ সম্পাদক ও কবি ওবায়েদ আকাশ। তিনি বললেন, লিটলম্যাগের প্রতি এবারো অবহেলা করা হয়েছে। এখনো লিটলম্যাগ প্রাঙ্গণ সাজানো হয়নি, এটা কেমন আচরণ? বারবার লিটলম্যাগের প্রতি আয়োজকদের উপেক্ষা নিয়ে আন্দোলন করতে হবে কেন? অথচ লিটলম্যাগ বইমেলারই প্রাণ।

এবারের বইমেলা নিয়ে আক্ষেপ করে ওবায়েদ আকাশ আরো বলেন, শুরুতেই মেলা জমে উঠেছে। তবে অনেকটা পুরান ঢাকার মতোই মনে হচ্ছে। এর বিন্যাস ভালো লাগছে না। এলোমেলো ধুলোবালি উড়ছে।

কবি ওবায়েদ আকাশের সঙ্গে কণ্ঠ মেলালেন আরেক কবি শিহাব শাহরিয়ার। তিনি জানালেন, ধুলোবালিতে মেলা প্রাঙ্গণ একাকার। কেউ দেখার নেই। এদিকে টানা দুদিন সরকারি ছুটি দিন ঘিরে প্রকাশক আর স্টল

মালিকদের প্রত্যাশা ছিল মেলা হবে জমজমাট আর একই সঙ্গে বেচাবিক্রিও হবে বেশ। প্রথমদিন শুক্রবার সকালে শিশুপ্রহর থেকে রাত অবধি পাঠক, বইপ্রেমী আর দর্শনার্থীদের সমাগম ছিল প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। যদিও কাক্সিক্ষত বেচাকেনা হয়নি। তবে দ্বিতীয় দিন গতকাল শনিবারও ছিল মোটামুটি একই চিত্র। সমাগম হয়েছে ব্যাপক। তবে বেচাবিক্রি মোটেই হয়নি। মেলা চত্বরজুড়ে দেখা গেছে শুধুই আড্ডা আর ঘোরাঘুরি। এমনকি শিশুপ্রহরেও শিশুদের উপস্থিতি তেমন ছিল না।

স্টলের বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, মেলা চত্বরে উপচে পড়া ভিড় রয়েছে সত্য, তবে স্টলের দিকে ঝোঁক কম। দলবেঁধে সবাই শুধু ঘোরাফেরা করছেন। কেউ কেউ দলবেঁধে আবার আড্ডায় মশগুল। বইকেনার দিকে তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। তবে কেউ কেউ আবার স্টলে এসে কিছু বই কিনেছেন। আর অনেকেই তালিকা নিয়ে ফিরে গেছেন।

মূল মঞ্চের আয়োজন : বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : ড. আকবর আলি খান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আমিনুল ইসলাম ভুইয়া। আলোচনায় অংশ নেন ফারুক মঈনউদ্দীন, মো. মোফাকখারুল ইকবাল এবং কামরুল হাসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মোহাম্মদ সাদিক।

প্রাবন্ধিক বলেন, ড. আকবর আলি খান প্রশাসনের বহু পদে সাফল্যের সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। মুজিবনগর সরকারে তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ছিলেন। পাকিস্তান সরকার তার বিরুদ্ধে জেলদণ্ডও ঘোষণা করেছিল। বহুকাল তিনি অর্থসচিব হিসেবে কাজ করেছেন, সরকারি প্রাশাসনের শীর্ষপদ- মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন। বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক ছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টাও ছিলেন। সরকারি প্রশাসনিক কর্মে এসব সাফল্য সত্ত্বেও মনে করা যায় যে, আকবর আলি খানের মূল পরিচয় তার পাণ্ডিত্যপূর্ণ লেখায় ছড়িয়ে আছে। পণ্ডিত হিসেবে তিনি অত্যন্ত উচ্চমানের সৃষ্টি রেখে গেছেন।

আলোচকরা বলেন, ড. আকবর আলি খানের কাজের পরিধি ছিল বিস্তৃত। প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে থেকেও সৎ ও নির্ভীক আকবর আলি খান কঠোর ভাষায় অন্যায়, অদক্ষতা ও দুর্নীতির সমালোচনা করেছেন। এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির কথা ভাবতেন তিনি। সামাজিক বৈষম্য ও দারিদ্র্য দূর করে দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তিনি তার মেধা ও মননকে কাজে লাগিয়েছেন। অর্থনীতি ও ইতিহাস ছাড়াও নৃ-বিজ্ঞান ও সাহিত্য-সমালোচনার ক্ষেত্রেও তিনি প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। বহুবিচিত্র বিষয়ে তার আগ্রহ তাকে একজন বহুমাত্রিক পণ্ডিতের পর্যায়ে উন্নীত করেছে।

সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ সাদিক বলেন, অর্থনীতি, ইতিহাস নৃ-বিজ্ঞান ও সাহিত্য নিয়ে গভীর তাত্ত্বিক আলোচনা ড. আকবর আলি খানকে যেমন অমর করেছে, তেমনি বাঙালি জাতিকে করেছে ঋদ্ধ। এমন একজন বিবেকবান, স্পষ্টভাষী, সৎ ও নির্মোহ মানুষ আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য নিঃসন্দেহে অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবেন।

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন ফারুক হোসেন, আবদুল বাছির, ইসহাক খান এবং আফরোজা সোমা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি অসীম সাহা, অঞ্জনা সাহা এবং ফরিদ কবির। আবৃত্তি করেন আবৃত্তিশিল্পী মো. রফিকুল ইসলাম, অলোক কুমার বসু এবং মিজানুর রহমান সজল। এছাড়া ছিল গোলাম কুদ্দুছের নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বহ্নিশিখা’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী দিল আফরোজ রেবা, চন্দনা মজুমদার, আব্দুল লতিফ শাহ এবং শাহ আলম দেওয়ান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App