×

সাহিত্য

উদীচী’র ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২২, ০৯:০২ পিএম

উদীচী’র ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
উদীচী’র ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রতিষ্ঠার ৫৪তম বার্ষিকী উদযাপন করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। ছবি: ভোরের কাগজ

উদীচী’র ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
উদীচী’র ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
‘শোষণের বেড়াজালে মানুষের প্রাণ মুক্তির মিছিলে লড়াইয়ের গান’

বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রতিষ্ঠার ৫৪তম বার্ষিকী উদযাপন করলো লড়াই-সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। শোষণের বেড়াজালে মানুষের প্রাণ, মুক্তির মিছিলে লড়াইয়ের গান এই শ্লোগানকে ধারণ করে শনিবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য এ আয়োজন।

উদ্বোধনী আয়োজনের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত ও সংগঠন সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। এর সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন আয়োজনের উদ্বোধক এবং অতিথিরা। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন ৬টি ভিন্ন ক্ষেত্রের ছয়জন কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব। তারা হলেন, উদীচীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা গোলাম মোহাম্মদ ইদু, উদীচীর প্রতিষ্ঠাকালীন সংগঠক ও বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আখতার হুসেন, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপজয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের বেশ কয়েকজন ফুটবলারকে গড়ে তোলার অনন্য কৃতিত্বের অধিকারী মালা রানী সরকার, পাটকল বন্ধের হঠকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক মোহাম্মদ নওশের আলী, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা-শ্রমিকদের যৌক্তিক ও সফল আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সন্ধ্যা ভৌমিক এবং টিপ পড়ার কারণে পুলিশ কনস্টেবল কর্তৃক প্রকাশ্যে নিগ্রহের শিকার হয়েও রুখে দাঁড়ানো শিক্ষক লতা সমাদ্দার।

এছাড়াও, অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ কমিউনিস্ট নেত্রী লীনা চক্রবর্তী। জাতীয় ও সংগঠন সঙ্গীত ছাড়াও দুটি দলীয় গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা।

এরপর উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে শুরু হয় আলোচনা পর্ব। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খানের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, বর্তমানে নানা ধরনের শোষণ-বঞ্চনা-নিপীড়নের বেড়াজালে ওষ্ঠাগত দেশের মানুষের প্রাণ। একদিকে সমাজে বিরাজ করছে অসম্ভব রকমের বৈষম্য, অসামঞ্জস্যতা, অনিয়ম, অরাজকতা, অন্যদিকে প্রায় সব স্তরেই দেখা যাচ্ছে দলীয় প্রভাব, দুর্বৃত্তায়ন। এমনকি শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকদের প্রতি ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ, তাদেরকে অসম্মান বা প্রকাশ্যে নির্যাতন ও প্রাণনাশের ঘটনাও ঘটেছে সম্প্রতি। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক, সহিংস আচরণও দিনদিন বেড়েই চলেছে। কৃষিপ্রধান রাষ্ট্র হলেও কৃষকদের মনে শান্তি নেই। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য তারা পান না। অথচ পাইকারি বা খুচরা বাজারে ধান ও চালের দাম আকাশছোঁয়া। অর্থাৎ, লাভের গুড় খেয়ে যাচ্ছে কিছু অসাধু মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দোহাই দিয়ে আমাদের দেশে উৎপাদিত পণ্যসহ সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ইচ্ছেমত বাড়িয়ে দিচ্ছে এই সিন্ডিকেট কিন্তু তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা তো দূরের কথা, বরং বারবার তাদের কাছেই মাথা নোয়াচ্ছে সরকার।

বক্তারা আরো বলেন, গত কয়েক বছরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রায় একই কৌশলে বারবার ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, নির্যাতন, ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হলেও সেসব ঘটনার একটিরও বিচার শেষ করতে পারেনি রাষ্ট্র।

এরপর উদীচী কেন্দ্রীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় দুর্নীতিবিরোধী গীতি-কাব্য-নাট্যালেখ্য ধর ধর, চোর চোর। মুকাভিনয় পরিবেশন করেন নিরব নিথর, একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন মাহমুদ সেলিম ও হাবিবুল আলম, সুরাইয়া পারভীন, অবিনাশ বাউল এবং জাকির হোসেন। আবৃত্তি পরিবেশন করেন নায়লা তারান্নুম কাকলী এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাচিক শিল্পী শম্পা দাস, দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যম-এর রিপন এবং ছোঁয়া।

এছাড়া, উদীচী কেন্দ্রীয় নাটক বিভাগের পরিবেশনায় ছিল সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী পথনাটক অজ্ঞাতনামা। এছাড়া, প্রদর্শিত হয় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল পল্লী উচ্ছেদের ঘটনার উপর ভিত্তি করে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ ঘোষ নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ভূমিহীন ভূমিপুত্র। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কংকন নাগ এবং হালিমা নূর পাপন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App