×

আইন-বিচার

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার করা সম্ভব?

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ১০:২৮ এএম

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার করা সম্ভব?

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হত্যা, গণহত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগে করা এ মামলার তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)। গত বুধবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী এমএইচ তানিম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় এ সংক্রান্ত অভিযোগ রুজু করেন।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ‘আইসিটিতে বিচারের উদ্যোগ নেয়া হবে’ বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। প্রশ্ন উঠছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য করা এই আইনে কি শেখ হাসিনার বিচার করা সম্ভব? আইনটিতেই বা কী বলা আছে? খবর বিবিসি বাংলার। 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের একটি বিষয় ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার। ১৯৭৩ সালে প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনেই অভিযুক্তদের তদন্ত এবং বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়। মূলত ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের বাংলাদেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্যই এই আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছিল। তবে ২০১০ সালের আগে আইনে কারো বিচার বা সাজা হয়নি।

২০০৯ সালে সংসদ অধিবেশনে ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার’ বিষয়ে একটি মৌখিক প্রস্তাব পাশ হয়। পরবর্তী সময়ে ট্রাইব্যুনালে ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীকেও বিচারের আওতায় আনা এবং স্বাধীনভাবে ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ পরিচালনার বিধান যুক্ত করে আইনে কিছু সংশোধনী আনা হয়। এর মাধ্যমেই ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল, আইনজীবী প্যানেল এবং তদন্ত সংস্থা গঠন করা হয়।

আরো পড়ুন : মানবতাবিরোধী অপরাধ: শেখ হাসিনাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যার তদন্ত শুরু

যা আছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে

১৯৭৩ সালে প্রণীত আইনের ৩(১) ধারায় বলা আছে, আইনের দুই নং উপধারায় উল্লিখিত যেকোনো অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী [বা সংস্থা] বা কোনো সশস্ত্র, প্রতিরক্ষা বা সহায়ক বাহিনীর কোনো সদস্যের জাতীয়তা যাই হোক না কেন, তা যদি এই আইন প্রবর্তনের আগে বা পরে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে সংঘটিত হয়, তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তার বিচারের এবং শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা থাকবে।

অর্থাৎ মানবতাবিরোধী অপরাধ, শান্তিবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, জেনেভা কনভেনশন বিরোধী কাজসহ আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে যেকোনো অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা দল, সেনাবাহিনী কিংবা তাদের সহযোগী সশস্ত্রবাহিনীর বিচারের ক্ষমতা ট্রাইব্যুনালকে দেয়া হয়েছে। এই আইনের অধীনেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার করা সম্ভব বলে জানান বাংলাদেশ সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, ১৯৭৩’র যে আইনটা আছে, ওখানে ক্রাইম অ্যাগেইনস্ট হিউম্যানিটির (মানবতাবিরোধী অপরাধ) সংজ্ঞা অনুসারে এটি অফেন্স (অপরাধ) হিসেবে আসে, অন্যগুলোর মধ্যে না। অর্থাৎ, আইনের তিন নং ধারার ২(ক) উপধারায় উল্লিখিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা যেতে পারে।

আরো পড়ুন : শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরো দুই হত্যা মামলা

এই ধারা অনুযায়ী, হত্যা, নির্মূল, দাসত্ব, নির্বাসন, কারাবরণ, অপহরণ, বন্দীকরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ বা কোনো বেসামরিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘটিত অন্যান্য অমানবিক কাজ বা রাজনৈতিক, জাতিগত বা ধর্মীয় ভিত্তিতে নিপীড়নের মতো ক্ষেত্রগুলোতে এই ট্রাইব্যুনালে বিচার করা যাবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রসিকিউটর হিসাবে কাজ করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। তবে গত ১৩ আগস্ট তিনি পদত্যাগ করেছেন।

রানা দাশগুপ্ত বলেন, 'এই আইনের একটা লম্বা প্রেক্ষাপট আছে। এটা করা হয়েছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। সেখানে যারা যুদ্ধাপরাধ করেছে, তাদের বিচার করার জন্য এই আইনটি করা হয়।' ফলে এখন যে প্রেক্ষাপটে বিচারের কথা বলা হচ্ছে, তা প্রযোজ্য হয় না বলে তিনি মনে করেন।

তবে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ মনে করেন, আইনে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিচারে কোনো বাধা নেই। যে আইন এর আগের সরকার সংশোধন করেছিল, সেখানে আইন যেভাবে আছে সেই বিবেনায় ক্রাইম অ্যাগেইনস্ট হিউম্যানিটি বা জেনোসাইড- এসব বিষয় সেখানে বিচার করার সুযোগ আছে।

এছাড়াও ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা এবং কোন কোন অপরাধে বিচার করা যাবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে আইনে বলা এবং ব্যাখ্যা দেয়া আছে বলেও মন্তব্য করেন এই আইনজীবী। সেক্ষেত্রে ‘এ নিয়ে কোনো বিতর্কের সুযোগ নেই' বলেই মত তার।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যত মামলা

গত ৫ আগস্ট সাভারে গুলিবিদ্ধ নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আলিফ আহমেদ সিয়াম চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাত আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে মামলা করা হয়। সিয়ামের বাবা বুলবুল কবিরের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী এমএইচ তানিম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় এ সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করেন।

মিরপুরে কলেজ শিক্ষার্থী ফয়জুল ইসলাম রাজনকে হত্যার অভিযোগে একইদিন সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়াও বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় শাহাবুদ্দিন নামে এক অটোরিকশা চালককে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

টাইমলাইন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

‘অন্তর থেকে ভুল বুঝতে পারলে সুযোগ পেতে পারে আ.লীগ’

‘অন্তর থেকে ভুল বুঝতে পারলে সুযোগ পেতে পারে আ.লীগ’

সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গ্রেপ্তার

সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গ্রেপ্তার

ইউএইয়ের মধ্যস্থতায় রাশিয়া-ইউক্রেনের ২০৬ যুদ্ধবন্দী বিনিময়

ইউএইয়ের মধ্যস্থতায় রাশিয়া-ইউক্রেনের ২০৬ যুদ্ধবন্দী বিনিময়

১৪ সেপ্টেম্বর: সারাদিন যা যা ঘটলো

১৪ সেপ্টেম্বর: সারাদিন যা যা ঘটলো

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App