×

আন্তর্জাতিক

ভালোবাসার কাছে যেন করোনার পরাজয়!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২১, ০৫:৪০ পিএম

ভালোবাসার কাছে যেন করোনার পরাজয়!

মুখে মুখ চেপে করোনা আক্রান্ত স্বামীকে অক্সিজেন দেওয়ার চেষ্টা। ছবি: টুইটার থেকে

এ যেনো ভালোবাসার কাছে করোনার পরাজয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্টে ছটফট করছেন করোনা আক্রান্ত স্বামী। এ দৃশ্যে স্থির থাকতে পারেননি পাশে থাকা স্ত্রী। প্রাণঘাতী করোনার ভয় তার কাছে তুচ্ছ হয়ে যায় মুহূর্তেই। জেনে শুনে ‘বিষ পান’ করতে যেনো ঝাঁপিয়ে পড়েন এই নারী। অক্সিজেন মেশানো বাতাস নিজের বুক ভরে টেনে নেন, আর নিজের মুখ নিয়ে বারবার স্বামীর মুখে চেপে ধরেন। এভাবেই স্বামীর বুকে একটু অক্সিজেন পাঠানোর প্রাণপণ চেষ্টা চলতে থাকে তার। তার আশা, হাসাপাতালে পৌছানো পর্যন্ত করোনার দখলে থাকা স্বামীর ফুসফুসটি যেনো অক্সিজেন পেয়ে জীবনের পক্ষে লড়াইটুকু অব্যাহত রাখতে পারে। কিন্তু শেষপর্যন্ত করোনার পরাজয় ঘটেনি। ঘটেছে ভালোবাসারই পরাজয়। স্বামীকে বাঁচাতে পারেননি তিনি। স্বামীর কাছ থেকে এরই মধ্যে ওই নারীর দেহেও প্রাণঘাতী করোনার ছড়িয়ে পড়েছে কিনা তা অবশ্য এখন পরীক্ষা করে দেখার বিষয়।

মোগল সম্রাট শাহজাহান ছিলেন এক অতুলনীয় প্রেমিক। প্রিয়ার স্মৃতি ধরে রাখতে ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রা শহরে তিনি নির্মাণ করেছিলেন নির্মিত চিরন্তন প্রেমের প্রতীক তাজমহল। এর জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত এ শহরটি । আর আগ্রাতেই ঘটেছে করোকালের এই করুণ ঘটনা। এ শহরটিতে এ ঘটনা যেনো আরেক দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠেছে। প্রিয় মানুষ হারানোর বেদনাকে অমর করে রাখার অতুলনীয় সৌন্দর্যের সমাধিসৌধ স্থাপন নয়, বরং এর উল্টো। এ হলো করোনায় মরণপথগামী স্বামীকে জীবনের দিগন্তে ধরে রাখার উজ্জ্বল সংগ্রাম। এ দৃশ্য এখন নেট দুনিয়ায় ভাইরাল।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, করোনা রোগীর মুখে মুখ চেপে শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়ার কৌশল কোনোভাবেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়, বরং খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এতে উল্টো রোগী থেকে সেবাপ্রদানকারীর শরীরে করোনা ছড়িয়ে পড়বে। কারো জন্যই এমন কাজ সঠিক পদক্ষেপ নয়।

বর্তমানে ভারতজুড়েকরোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহ হয়ে ওঠেছে।  দেশটিতে তীব্র অক্সিজেন সংকট। দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে বিরোধী দলের নেতা বা মুখ্যমন্ত্রীরা এই সংকটের কথা আগেই জানিয়েছেন। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দাবি করেছিলেন, তার রাজ্যে অক্সিজেনের কোনো ঘাটতি নেই। সেই যোগীর রাজ্যেরই এখনো চিতার আগুন নিভছে না। গণচিতা এখন হয়ে উঠেছে দেশটির করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। একের পর এক করুণ ঘটনা হতবাক করে দিচ্ছে ভারত ও বিশ্বের নাগরিকদের। টুইটারে ভাইরলা হওয়া আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, একটি লাল সেডানের ছাদে সাদা চাদরে মোড়া একটি লাশ। এটি আগ্রার মোহিত নামের এক ব্যক্তির বাবার মরদেহ বলে জানা গেছে। তিনি সম্প্রতি করোনায় মারা গেছেন। কিন্তু শেষকৃত্যের জন্য লাশবাহী কোনো গাড়ি পাননি। পরে নিজের প্রাইভেটকারের ছাদে বাবার লাশ বেঁধে আগ্রার মোক্ষধামে নিয়ে যান শেষকৃত্যের জন্য। তবে এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। উত্তরপ্রদেশে শেষকৃত্যের জন্য শ্মশানের বাইরে রীতিমতো টিকিট কেটে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হচ্ছে মানুষকে।

তৃতীয় আরেকটি ঘটনা উত্তর প্রদেশের কানপুরের। এটিও হতবাক করেছে ভারতীয় নাগরিকদের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় চলছে। কয়েক দিন ধরে রাস্তায় পড়েছিলেন করোনা আক্রান্ত এক নারী। অবশেষে তাঁকে তুলে হাসপাতালে ভরতি করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শেষ পর্যন্ত সেখানে তাঁর মৃত্যুই হয়। আর এর জন্য তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কারণ তিনি নাকি তাঁর মাকে অসুস্থ অবস্থায় রাস্তায় ফেলে গিয়েছিলেন। কানপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বাসিন্দা বিশাল। সম্প্রতি তাঁর মায়ের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অবস্থার অবনতি হতে আরম্ভ করে। এর পর বিশাল তাঁর মাকে নিয়ে গিয়ে চাকেরি এলাকায় বোনের বাড়ির সামনে এক রকম ফেলে দিয়ে পালিয়ে আসেন। এবার বিশালের বোনও মায়ের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেন। করোনা আক্রান্ত সন্দেহ করায় বিশালের বোন মাকে ঘরেই ঢুকতে দেননি। রাস্তাতেই পড়েছিলেন ওই মহিলা। অবশেষে স্থানীয় কয়েকজন তাঁকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App