সারা বিশ্বে ঘটে যাওয়া আজকের উল্লেখযোগ্য ঘটনা (১৪.০৭.২৪)
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৪, ১১:০৬ পিএম
হত্যাচেষ্টা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৫মিনিটে পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের বাটলারে এক নির্বাচনী জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় হামলার শিকার হন ট্রাম্প। তার কানে গুলি লাগে। তবে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছেন এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। হামলার পরপরই তিনি মাটিতে পড়ে যান। এসময় তার মুখমণ্ডলে রক্ত দেখা গেছে। আর একটু এদিক-ওদিক হলেই কান ছুঁয়ে যাওয়া বুলেটে প্রাণ যেতে পারতো এ রিপাবলিকান নেতার। তবে এই হামলায় ট্রাম্প বেঁচে গেলেও প্রাণ হারিয়েছেন তার একজন সমর্থক, আহত হয়েছেন আরও একজন। এদিকে হামলার পরপরই সন্দেহভাজন হামলাকারী সিক্রেট সার্ভিসের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলার ঘটনাকে হত্যাচেষ্টা বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। সংস্থাটির পক্ষ থেকে স্থানীয় সময় শনিবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের বাটলারে এফবিআইয়ের বিশেষ এজেন্ট কেভিন রোজেক সাংবাদিকদের বলেন, আজ সন্ধ্যায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর যে হামলার ঘটনা ঘটেছে তাকে আমরা হত্যাচেষ্টাই বলছি।
তার এমন বক্তব্য থেকে এটা পরিষ্কার হলো যে, হামলাকারী ট্রাম্পকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে পেনসিলভানিয়ার বাটলারে এক নির্বাচনী জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় হামলার শিকার হন ট্রাম্প। তার কানে গুলি লাগে। তবে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছেন এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলার ঘটনায় হামলাকারীর পরিচয় সামনে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলাকারীর নাম প্রকাশ করেছে। অভিযুক্ত ওই হামলাকারীর নাম থমাস ম্যাথিউ ক্রুকস।
সময়ের সাথে সাথে আরও তথ্য সামনে আসছে এবং ট্রাম্পকে আক্রমণকারী থমাস ম্যাথিউ ক্রুকস একজন নিবন্ধিত রিপাবলিকান ছিলেন বলেও জানা যাচ্ছে। রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টাকারী বন্দুকধারীকে ২০ বছর বয়সী থমাস ম্যাথিউ ক্রুকস হিসাবে চিহ্নিত করেছে এফবিআই। মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস এক বিবৃতিতে বলেছে, এজেন্টদের গুলিতে নিহত হওয়ার আগে বন্দুকধারী ‘সমাবেশের বাইরে একটি উঁচু অবস্থান থেকে মঞ্চের দিকে একাধিক গুলিবর্ষণ করে’।
এদিকে, ট্রাম্পের ওপর এই হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের সহিংসতার কোনো জায়গা নেই। তিনি আরও জানিয়েছেন, ফেডারেল এজেন্সিগুলো এই হামলার ঘটনার তদন্ত করছে।
তিনি বলেন, পেনসিলভানিয়ায় ঘটে যাওয়া সহিংসতার ঘটনায় সবারই নিন্দা জানানো উচিত। আমরা কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দিতে পারি না। আমরা এমন হতে পারি না। আমরা এ ধরনের ঘটনায় ক্ষমা করতে পারি না। এদিকে হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হামলার ঘটনার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, আজ সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট বাইডেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে তাদের দুজনের মধ্যে কি কথা হয়েছে সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, পেনসিলভানিয়ার গভর্নর জোস শ্যাপিরো এবং বাটলারের মেয়র বব ড্যানডয়ের সঙ্গেও কথা বলেছেন বাইডেন।
নির্বাচনী প্রচারণায় হামলার ঘটনায় বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকেই দায়ী করছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং সমর্থকরা। সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে ট্রাম্পের ওপর হামলার ঘটনায় বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিরুদ্ধে ‘হত্যার উসকানি দেওয়ার অভিযোগ’ এনেছেন এক রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য।
সিনেটর জেডি ভ্যান্স বলেছেন, বাইডেনের নির্বাচনী প্রচারণার বক্তব্য সরাসরি এই ঘটনার দিকেই নিয়ে গেছে। এই সিনেটর ট্রাম্পের ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যান্য রিপাবলিকান রাজনীতিবিদরাও প্রায় একই ধরনের অভিযোগ তুলেছেন।
এদিকে, এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। সেই সঙ্গে ট্রাম্পের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন তারা।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেসের এক মুখপাত্র ট্রাম্পের ওপর গুলির ঘটনার নিন্দা করেছেন। এটিকে ‘রাজনৈতিক সহিংসতা’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি।
ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেন, ‘গণতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করে এমন যে কোনো ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার বলেন, আমাদের সমাজে কোনো প্রকার রাজনৈতিক সহিংসতার স্থান নেই।
হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ বলেন, হামলার এ ঘটনা ছিল উদ্বেগজনক।
হামলার ঘটনার ভিডিও দেখে অসুস্থ বোধ করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সহিংসতা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়।’
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ট্রাম্পের ওপর গুলির এ ঘটনাকে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন। ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ট্রাম্পকে বন্ধু বলে অভিহিত করে তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এদিকে, এ হামলার ঘটনায় ট্রাম্পের সমর্থন বৃদ্ধি পেতে পারে বলে বেশ কয়েকজন বিশ্লেষক জানিয়েছেন। রোববার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ রাজ্যগুলোতে বাইডেন ও ট্রাম্পের মধ্যে খুব কম পরিমাণে ব্যবধান দেখা গেছে। তবে এ ঘটনা নভেম্বরের নির্বাচনে একটি পার্থক্য তৈরি করতে পারে।
জরিপে দেখা গেছে, গত মাসে বাইডেনের দুর্বল বিতর্কের পারফরম্যান্সে ট্রাম্পও কিছুটা উচ্ছ্বসিত। যদিও ভোটারদের মধ্যে ফলাফল তুলনামূলকভাবে কোনও পরিবর্তন হয়নি।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত একটি এনপিআর/পিবিএস নিউজআওয়ার/মারিস্ট জরিপে দেখা গেছে, বাইডেন ৫০ শতাংশ জনপ্রিয়তা নিয়ে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন। যেখানে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা ছিল ৪৮ শতাংশ।
এদিকে ট্রাম্পের ওপর হামলার পর এখন আর কোনও হুমকি নেই বলে জানিয়েছেন পেনসিলভানিয়া রাজ্য পুলিশের শীর্ষ এক কর্মকর্তা।
গাজা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে টানা তিনদিন ধরে এবং গভীর আলোচনার পর গ্রহণযোগ্য কোনো ফলাফল না আসায়, আবারও যুদ্ধবিরতির আলোচনা স্থগিত করেছে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো। আলোচনা স্থগিত হওয়া এবং গ্রহণযোগ্য কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারার জন্য তারা ইহুদিবাদী ইসরাইলকে দোষারোপ করেছে। হামাস ও মিশরের নিরাপত্তা সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে আরব নিউজ এ খবর দিয়েছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে ইসরাইলের মধ্যে প্রতিশ্রুতির ঘাটতি রয়েছে বলেই অভিযোগ করেছে মিশরের নিরাপত্তা সূত্রগুলো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে মিশরিয় সূত্রগুলো বলেছে, ইসরাইলি আলোচকদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ মতভেদ দেখা দিয়েছে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে তাদের আলোচনার ব্যাপারে আন্তরিকতার বিষয়টি প্রশ্নের মুখে পড়ে। তবে ইসরাইলি সরকার এখনো আলোচনার প্রক্রিয়া বন্ধ করেনি বলে দাবি করেছে দেশটির সংবাদ মাধ্যম ইয়েদিওথ আহারোনথ। এদিকে গাজা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে গভীর আলোচনার মধ্যেই বর্বর ইসরাইলি বাহিনী গাজা উপত্যকায় বিরতিহীনভাবে হামলা চালিয়ে গেছে। এর মধ্যে কমপক্ষে দুটি বর্বর হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে, যাতে সাড়ে ৪ শতাধিক ফিলিস্তিনি হতাহত হয়েছেন। ইসরাইলের এই গণহত্যা গাজা যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলেছে বলে দাবি হামাসের।
এদিকে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়েছে ৭০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। বারবার বাস্তুচ্যুত হওয়ায় এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গাজার সরকারি সংবাদমাধ্যমের কার্যালয় জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজা উপত্যকার বিভিন্ন অংশে বাস্তুচ্যুত হওয়ার কারণে কমপক্ষে ৭১ হাজার ৩৩৮ জন হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়েছে। শনিবার আল জাজিরার প্রতিবেদনে উঠে আসে এ তথ্য।
ইসরাইলের হামলার ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছে গাজার অধিকাংশ মানুষ। ফলে অবরুদ্ধ অঞ্চলটিতে বাড়ছে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা। এ পরিস্থিতির কারণে এখন পর্যন্ত ১৭ লাখের বেশি মানুষ বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া ইসরাইলি সেনাবাহিনী প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহে বাধা দেওয়ায় গাজায় দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
অন্যদিকে আবারও গাজায় শুরু হয়েছে ইসরাইলি তাণ্ডব। খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরের তাঁবুতে ইসরাইলি হামলায় শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছেন। শনিবার এই হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। হামাস পরিচালিত মিডিয়া অফিসের বরাতে এএফপির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আল মাওয়াসি ক্যাম্পে ইসরাইলের হামলায় শনিবার ৭১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ২৮৯ জন।