সারা বিশ্বে ঘটে যাওয়া আজকের উল্লেখযোগ্য ঘটনা (১১.০৭.২৪)
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৪, ১১:০৪ পিএম
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও দখলদার ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তির একটি কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, চুক্তির এ কাঠামোতে রাজি হয়েছে উভয় পক্ষ। এখন চুক্তিটি কীভাবে কার্যকর করা হবে সেটি নিয়ে আলোচনা করছে তারা।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে হামাস। ওই সময় উপত্যকাটির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে রাখবে না ইসরায়েলও। এর বদলে গাজায় প্রতিষ্ঠিত হবে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আর এর নিয়ন্ত্রণে থাকবে ফিলিস্তিনি অথরিটির সমর্থিত বাহিনী।
যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তার বরাতে ওয়াশিংটন পোস্টে মার্কিন সাংবাদিক ডেভিড ইগনাটিয়াস লিখেছেন, ‘চুক্তির কাঠামোতে দুই পক্ষ সম্মত। কীভাবে এটি কার্যকর করা হবে এ নিয়ে তারা আলোচনা করছে।’
তবে চুক্তির কাঠামো তৈরি হলেও চুক্তি যে এখনই হয়ে যাবে এমন কিছু নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় আলোচনায় যোগ দিতে ইসরাইলের একটি প্রতিনিধি দল কাতারে পৌঁছেছে। ইসরাইলি দৈনিক হারেৎজ এ বিষয়ে জানিয়েছে, কাতার, মিশর এবং মার্কিন প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে দোহায় চার পক্ষের একটি বৈঠকে যোগ দেবে ইসরাইলের মোসাদ প্রধান ডেভিড বার্নিয়ার নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল।
কাতারে পৌঁছে ইসরাইলি প্রতিনিধিদল দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি ও সিআইএ পরিচালক উইলিয়াম বার্নস এবং মিশরীয় গোয়েন্দা প্রধান আব্বাস কামেলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। আর এই বৈঠকের ওপরই নির্ভর করছে আগামী দিনে ইসরাইল, ফিলিস্তিন ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব কিনা। এর আগে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে মিশর, কাতার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক মাস ধরে চেষ্টা চালালেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।
এদিকে, যখন যুদ্ধ বিরতি নিয়ে আলোচনা চলছে ঠিক তখনও থেমে নেই ইসরায়েলের হামলা ও দখলদারিত্ব। এবার অবরুদ্ধ গাজা সিটি থেকে অধিবাসীদের দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। উত্তর গাজায় অভিযান জোরদার হওয়ার মুখে বুধবার ইসরায়েল বিমান থেকে লিফলেট ছড়িয়ে জরুরি ভিত্তিতে অধিবাসীদের সরে যেতে বলেছে।
তবে ফিলিস্তিনিরা বলছে, তাদের যাওয়ার নিরাপদ কোনও জায়গা নেই। দক্ষিণের বিভিন্ন স্থানেও তারা হামলার মুখে পড়ছে। বেশির ভাগ মানুষই তাঁবুতে গাদাগাদি করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। আরব নিউজ জানায়, গাজার মধ্য, দক্ষিণ এবং উত্তরে বোমা হামলা চলছে। ওদিকে, কর্মকর্তারা কাতারে বসে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
আরব গণমাধ্যমের কয়েকটি খবরে বলা হয়েছে, নুসেইরাত শরণার্থী শিবির এবং দক্ষিণ গাজায় সকালের দিকে ইসরায়েলের হামলায় ৪ শিশুসহ অন্তত ৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। খান ইউনিসের কাছেও মঙ্গলবার একটি স্কুলে হামলায় সেখানে আশ্রয় নিয়ে থাকা অন্তত ২৯ জন নিহত হয়।
ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেম বা আল-কুদস শহর থেকে গত ৯ মাসে ৯ হাজার ৬০০ ফিলিস্তিনিকে অপহরণ করেছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনের বন্দি বিষয়ক কমিশন, ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স ক্লাব, আদামির প্রিজনার্স সাপোর্ট এবং হিউম্যান রাইটস অ্যাসোসিয়েশন বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে।
সংগঠনগুলোর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অপহৃত ফিলিস্তিনি নাগরিকদের মধ্যে ৩২৫ জন নারী, ৬৭০টি শিশু এবং ৮৮ জন সাংবাদিক রয়েছেন। পাশাপাশি অক্টোবর মাসের প্রথম দিক থেকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সাড়ে ৭ হাজার কথিত প্রশাসনিক আটকাদেশ জারি করেছে ইসরাইল। বহু সংখ্যক নারী ও শিশুর বিরুদ্ধেও এই আটকাদেশ জারি করা হয়।
ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইল যেসব অমানবিক নীতি চর্চা করে আসছে, তার মধ্যে এই প্রশাসনিক আটকাদেশ অন্যতম। এই আটকাদেশের মাধ্যমে ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের অনির্দিষ্টকালের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়াই কারাগারে আটক রাখতে পারে। এ সময় ফিলিস্তিনিরা কোনো আইনজীবীও নিয়োগ দিতে পারবে না।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি গণহত্যা নিয়ে বরাবরই সরব ফরাসি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ফ্রাঁসোয়া বুরগাট। শুধু তাই নয়, ফ্রান্সে মুসলমানদের প্রতি বৈষম্য বিষয়ে সরকারের কট্টর সমালোচকও তিনি। ইসরাইল ইস্যুতে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যাওয়ায় এবার গ্রেফতার হন বুরগাট। ৯ জুলাই গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানিয়েছেন বুরগাটের আইনজীবী।
ফ্রেঞ্চ ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চ-এর গবেষণা প্রধান ফ্রাঁসোয়া বুরগাট। আরব বিশ্ব, ইসলাম এবং রাজনীতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে ভাবা হয় ফিলিস্তিনির প্রতি সহমর্মী বুরগাটের বিরুদ্ধে ফরাসি পুলিশের অভিযোগ, তিনি ‘সন্ত্রাসবাদ সমর্থন’ করছেন।
বুরগাটের আইনজীবী রফিক চেককাত বার্তা সংস্থা আনাদোলুকে বলেছেন, ইউরোপীয় ইহুদি সংস্থা বুরগাটের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাক্স-এন-প্রোভেন্স বুরগাটকে আটক করে।
আটকের পর সন্ধ্যায় মুক্তি পান বুরগাট। ৭৬ বছর বয়সি এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানীকে হেনস্তা করার ঘটনাকে ‘কলঙ্কজনক’ আখ্যা দিয়েছেন রফিক।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান যখন গাজা যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভুমিকা পালন করছেন, তখন এবার নতুন করে আলোচনায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনীতে তুর্কি নাগরিক থাকার বিষয়টি। জানা গেছে, যে সব তুর্কি নাগরিক ইসরাইলি বর্বর বাহিনীতে কাজ করছেন এবং যারা গাজায় বর্বর আগ্রাসনে জড়িত রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে তুরস্কের জাতীয় সংসদে বিল উত্থাপন করা হয়েছে।
‘টার্কিশ ফ্রি কজ পার্টি’ কুর্দি প্রভাবিত ও ইসলামপন্থী দলটির নেতা সার্কান রামানলি বুধবার তুর্কি সংসদে বিলটি উত্থাপনের পর বলেছেন, তুরস্কের যেসব নাগরিক ইসরাইলে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে বসবাস করেন এবং যারা গাজায় বর্বর আগ্রাসনে যুক্ত, তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি, তুর্কি-ইসরাইলি দ্বৈত নাগরিকদের সম্পদ জব্দ করার দাবিও জানানো হয়েছে ওই বিলে।
রামানলি বলেন, আমরা মনে করি, তুর্কি-ইসরাইলি দ্বৈত নাগরিক যারা গাজায় মানবতা-বিরোধী অপরাধে জড়িত, তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া উচিত।
বিলটি আইনে পরিণত হলে তা ইসরাইলে কর্মরত কতজন তুর্কি সেনার ওপর প্রভাব ফেলবে, তা পরিষ্কার নয়। কারণ ইসরাইলের সামরিক বাহিনীতে কাজ করা এ ধরনের দ্বৈত নাগরিকদের সংখ্যা স্পষ্ট নয়।
অন্যদিকে, এক রাতেই লেবাননের কয়েকটি স্থানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, লেবাননের আইতা আল শাব, রাব এল-থালাথিন, আল আদৌসিয়েহ এবং খিয়াম এলাকাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে হামলা চালানো হয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, হিজবুল্লাহর একটি পর্যবেক্ষণ পোস্ট এবং একটি রকেট লঞ্চার বহনকারী ট্রাকসহ বেশ কয়েকটি স্থান লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।
এর আগে ইসরায়েলি বাহিনী জানায়, অবরুদ্ধ গোলান মালভূমিতে হিজবুল্লাহর ড্রোন হামলায় তাদের এক সেনা সদস্য আহত হয়েছেন।
মাত্র দুদিন আগেও সিরিয়া এবং লেবাননে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সোমবার সিরিয়ার বন্দর নগরী বানিয়াসে বিমান হামলা চালানো হয়। এদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর ক্রমাগত হামলায় আতঙ্কিত হয়ে দক্ষিণ লেবাননের ৯০ হাজারের বেশি বাসিন্দা নিজেদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে বাস্ত্যুচুত হয়ে পড়েছেন।
যুক্তরাজ্যের পূর্ব ইংল্যান্ডের হার্ডফোর্ডশায়ারের বুশে শহরে বিবিসির এক সাংবাদিকের স্ত্রী এবং তার দুই মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। উত্তর লন্ডনের একটি কবরস্থানের কাছে ২৬ বছর বয়সী কাইল ক্লিফোর্ড নামের ওই সন্দেহভাজনকে আহত অবস্থায় আটক করা হয়। তাকে ধরতে বড় ধরনের অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।
বিবিসি ফাইভ লাইভের রেসিং বিভাগের ধারাভাষ্যকার জন হান্টের স্ত্রী এবং দুই মেয়ে হার্টফোর্ডশায়ারের বুশের অ্যাশলিন ক্লোজে অবস্থিত নিজ বাড়িতে অবস্থানকালেই হামলার শিকার হন। তাদেরকে ক্রসবো দিয়ে হত্যা করা হয়। হামলার ঘটনায় জন হান্টের স্ত্রী ক্যারল হান্ট, তার দুই মেয়ে হান্না হান্ট এবং লুইস হান্ট গুরুতর আহত হন এবং সবাই ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। তবে, ঠিক কী কারণে একসঙ্গে তিনজনকে হত্যা করা হলো সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়।