ফিলিস্তিনের দক্ষিণে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত এক মায়ের গর্ভ থেকে জীবিত জন্ম নেয়া সেই মেয়ে শিশুটি আর বেঁচে নেই। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) শিশুটি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। তাকে তার মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে রাফাহর একটি হাসপাতালে শিশুটি মারা গেছে বলে নিশ্চিত করে জানানো হয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রবিবার মধ্যরাতের পরপরই রাফাহ হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে শিশু সাবরিন আল-সাকানিরের জন্ম হয়। সেখানকার ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে চিকিৎসকরা শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য চরম লড়াই করেন। হাত পাম্প ব্যবহার করে তার ফুসফুসে বাতাস পৌঁছানোর চেষ্টা করেন তারা।

পরে রাফাহর একটি হাসপাতালে শিশুটিকে অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে ইনকিউবেটরে রাখা হয়। তার কোমরে একটি টেপ বেঁধে রাখা হয়। এতে লেখা হয় ‘শহীদ সাবরিন আল-সাকানির সন্তান।’ 

বৃহস্পতিবার সেই শিশুটি মারা গেছে। ইতোমধ্যে তাকে তার মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।

গত সপ্তাহে রাফাহর একটি আবাসিক ভবন লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি বাহিনীর পৃথক বিমান হামলায় রাফাহতে অন্তত ১৬ শিশু মারা যায়। শিশু সাবরিন তাদের একজন। হামলায় ভবনটিতে থাকা ১৬ শিশুর সবাই মারা গেছে।

আরো পড়ুন: গাজায় ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারে ১৪ বছর লাগতে পারে

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, তারা হামাসের যোদ্ধা ও তাদের অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।

গত শনিবার মধ্যরাতে আল-সাকানি পরিবারের বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান থেকে বোমা হামলা চালানো হয়। সাবরিনের মা সাড়ে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। হামলার সময় তিনি, তার স্বামী শুকরি ও তাদের তিন বছরের মেয়ে মালাক ঘুমিয়ে ছিলো। হামলায় গুরুতর আহত হন সাবরিন। আর তার স্বামী ও মেয়ে মারা যায়। পরে সাবরিনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তিনি মারা যান। এরপর সেই মৃত মায়ের পেট থেকে জন্ম নেয় শিশু সাবরিন।

পরে শিশুটিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালের ইনকিউবেটরে রাখা হয়। সেখানে চারদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার না ফেরার দেশে পাড়ি জমায় শিশু সাবরিন।

জন্মের সময় শিশুটির ওজন ছিলো ১ কেজি ৪০০ গ্রাম। জন্মের পরপরই তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয় শিশুটির। সেই সময় চিকিৎসকরা জানান, অকাল জন্মের কারণে শিশুটির শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।

শিশু সাবরিনের জন্মের পর রাফাহর এমিরাতি হাসপাতালের জরুরি নবজাতক পরিচর্যা বিভাগের প্রধান ডা. মোহাম্মদ সালামা বলেছিলেন, ‘‘এই শিশুটির এই সময়ে মায়ের গর্ভে থাকার কথা ছিলো। 

উল্লেখ্য, ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে অন্তত দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু।