×

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হচ্ছে টিকটক, বিল পাস

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫২ পিএম

যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হচ্ছে টিকটক, বিল পাস

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে আনা একটি বিতর্কিত বিল অনুমোদন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট। এর আওতায় টিকটকের চীনা মালিক প্রতিষ্ঠান, বাইটড্যান্সকে, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের শেয়ার আগামী ছয় মাসের মধ্যে বিক্রি করে দিতে হবে। অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্রে এই অ্যাপটি ব্লক করে দেয়া হবে। বিলটি এখন স্বাক্ষরের জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে যাবে এবং তার স্বাক্ষরের পর এটি আইনে পরিণত হবে। এটি হলে বাধ্যতামূলকভাবে টিকটক বিক্রির বিষয়ে চীনা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন চাইতে হবে বাইটড্যান্সকে, যা বেইজিং ইতোমধ্যেই শক্তভাবে বিরোধিতা করেছে। খবর: বিবিসির। 

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে চারটি বিলের একটি প্যাকেজের সঙ্গে এ বিলটি পাস হয়েছিলো, যার সঙ্গে আরো ছিলো ইউক্রেইন, ইসরায়েল, তাইওয়ান এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারদের জন্য সামরিক সহায়তা সংক্রান্ত বিষয়ও। সিনেটে এ বিল বড় ধরনের সমর্থন পেয়েছে। সেখানে ৭৯ জন সিনেটর এর পক্ষে আর ১৮ জন এর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। ভিডিও শেয়ারের এই অ্যাপটির বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ব্যবহারকারী আছে। তবে এখন এর সঙ্গে চীনা সরকারের যোগসূত্র এবং এর ব্যবহারকারীদের তথ্য উপাত্তের নিরাপত্তা নিয়ে ক্রমশ প্রশ্ন উঠছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ও সিনেট উভয় ফোরামেই টিকটিক বিষয়ে বিল পাশ হলো। প্রেসিডেন্ট বাইডেন আগেই এটি স্বাক্ষর দিয়ে আইনে পরিণত করার কথা বলেছেন।

 কেন টিকটক বন্ধ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্রে

বিবিসির প্রযুক্তি বিষয়ক রিপোর্টার লিভ ম্যাকমােহন লিখেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের বড় দুটি দলের আইন প্রণেতারা আইনে পরিণত করার জন্য যে বিলটি পাশ করেছেন তাতে একটি নন-চীনা কোম্পানির কাছে অ্যাপটি বিক্রি না হলে যুক্তরাষ্ট্রের এর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হবে। তাদের ভয় যে চীনা সরকার যুক্তরাষ্ট্রের এক কোটি সত্তর লাখ ব্যবহারকারীরা তথ্য উপাত্ত তাদের কাছে হস্তান্তরের জন্য টিকটককে বাধ্য করতে পারে। টিকটক অবশ্য বলেছে যে বিদেশি ব্যবহারকারীদের তথ্য তারা চীনা সরকারকে দেবে না।

গত ২১ এপ্রিল কংগ্রেস ৯৫ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সহায়তা বিল পাশ করেছিলো যাতে টিকটকের বাধ্যতামূলক বিক্রির বিষয়টিও আছে। তবে টিকটকের বিষয়ে আমেরিকান কর্তৃপক্ষের এমন উদ্যোগ এবারই নতুন নয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ২০২০ সালে হোয়াইট হাউজে থাকার সময়ে এই অ্যাপটি বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। ট্রাম্প ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী। তিনি অবশ্য নতুন আইনের সমালোচনা করে বলেছেন-টিকটক সীমিত করা হলে সেটি ফেসবুককে লাভবান করবে।

কখন টিকটক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হতে পারে

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বাক্ষর করার পর তাৎক্ষণিকভাবেই টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না। আমেরিকানরা এই অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারছেন না- এটি নিশ্চিত করতে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। কারণ বাইটড্যান্স অ্যাপটির জোরপূর্বক বিক্রয় ঠেকাতে সুপ্রিম কোর্টেও যেতে পারে। এছাড়াও পাশ হওয়া বিলে বাইটড্যান্সকে নয় মাস সময় দেয়া হয়েছে কোন আমেরিকান ক্রেতার কাছে টিকটক বিক্রির জন্য। সেটি না হলে এরপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার জন্য গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে আরও তিন মাস সময় পাবে বাইটড্যান্স। এর মানে হলো ২০২৫ সালের কোন এক সময় বিক্রির সময়সীমা উত্তীর্ণ হবে। ততদিনে যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ী ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে তিনি এই নিষেধাজ্ঞাকে আটকে দিতে পারেন।

কীভাবে টিকটক নিষেধাজ্ঞা কাজ করবে

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে সহজ পথ হলো অ্যাপল ও অ্যান্ড্রয়েড বিভিন্ন অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপটি সরিয়ে ফেলা। স্মার্ট ফোন ও ট্যাবলেট ব্যবহারকারীরা অ্যাপ স্টোর থেকেই তাদের পছন্দনীয় অ্যাপগুলো ডাউনলোড করে থাকেন। ফলে অ্যাপ স্টোর থেকে সরিয়ে ফেললে টিকটক নতুন ব্যবহারকারীরা আর পাবে না। আবার এখন যারা ব্যবহার করছেন অ্যাপ স্টোরে না থাকলেও তারা ভবিষ্যতে অ্যাপটি আপডেট করতে পারবেন না।

যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদিত বিলে দেশটির ভেতরে ও বাইরে অ্যাপটি আপডেট ও রক্ষণাবেক্ষণে মানা করার সুযোগ আছে, যা দেশটির প্রেসিডেন্টকে রাশিয়া, চীন, ইরান ও উত্তর কোরিয়ায় অ্যাপটির কার্যক্রম সীমিত করার ক্ষমতা দিতে পারে।

টিকটক যা বলছে

টিকটক প্রস্তাবিত আইনটির সমালোচনা করে বলেছে এটি যুক্তরাষ্ট্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি একটি অসম্মান। এর প্রধান নির্বাহী সো জি চিউ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এ বিলি ‘অন্য সামাজিক মাধ্যমগুলোকে অধিকতর শক্তিশালী করবে’ এবং অনেক আমেরিকানের চাকরি হুমকির মুখে ফেলবে। বাইটড্যান্সকে টিকটক বিক্রির জন্য চীনা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। বেইজিং আগেই এ ধরনের উদ্যোগের বিরোধিতা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারকারীরা যা বলছে

যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ব্যবহারকারী প্রস্তাবিত আইনের সমালোচনা করেছেন। লস এঞ্জেলসের তরুণ অধিকারকর্মী টিফানি ইয়ু প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করেন। হোয়াইট হাউজের সামনে বিক্ষোভের সময় বিবিসিকে তিনি বলেছেন যে তার কাজের জন্য এই প্লাটফরমটি গুরুত্বপূর্ণ। টিকটক তার এক কোটি সত্তর লক্ষ ব্যবহারকারীদের তাদের জনপ্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করে বিলটিতে তারা যেন সমর্থন না করে সেটি বলতে বলেছিলো। কিছু রাজনীতিক বলেছেন ক্যাম্পেইনের কারণে তাদের যে উদ্বেগ সেটি আরও তীব্র হচ্ছে এবং আইনটি পাশের বিষয়ে তাদের আরও সংকল্পবদ্ধ করেছে।

অন্য কোন দেশে টিকটক বন্ধ আছে?

শেষ পর্যন্ত বিলটি আইনে পরিণত হলে অন্য জায়গাতেও একই পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহ তৈরি হতে পারে। ভারত ইতোমধ্যেই টিকটকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ২০২০ সালের জুনে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের আগে দেশটি এই অ্যাপের একটি বড় বাজার ছিলো। এছাড়া ইরান, নেপাল, আফগানিস্তান ও সোমালিয়াতেও টিকটক বন্ধ আছে। ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যের সরকার ও সংসদে তাদের কর্মীদের ডিভাইসে টিকটক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ইউরোপিয়ান কমিশনও তাই করেছে।নিরাপত্তা নিয়ে ভয়ের কারণে বিবিসিও তাদের কর্মীদের কর্পোরেট ফোন থেকে এই অ্যাপটি ডিলিট করার পরামর্শ দিয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App