×

আন্তর্জাতিক

ইরানে কীভাবে হামলা চালাবে, ছক কষছে ইসরায়েল!

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪২ পিএম

ইরানে কীভাবে হামলা চালাবে, ছক কষছে ইসরায়েল!

ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলে প্রথমবারের মতো নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ পুরো বিশ্ব রাজনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে ইরান।

আপাতদৃষ্টিতে ইরানের হামলা হজম করলেও ইহুদী রাষ্ট্রটি যে ছেড়ে কথা বলবে না, তা দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কথাতেই স্পষ্ট।

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের ইরানি কনস্যুলেটে গত ১ এপ্রিল ইসরায়েলের বিমান হামলার পর প্রতিশোধ হিসেবে গত শনিবার মধ্যরাতে ইসরায়েলে ৩ শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইরান।

হামলার পর ইসরায়েলকে সংযত থাকতে পশ্চিমা মিত্ররা আহ্বান জানালেও নেতানিয়াহু বলেছেন, হামলার জবাব সময়মতো দেয়া।

দেশটির যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রিসভারও একই মনোভাব। ইরানে সম্ভাব্য হামলার চক কষতে ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করছে এই মন্ত্রিসভা।  

তবে কবে, কীভাবে হামলার জবাব দেয়া হবে, তার কোনো বিস্তারিত জানায়নি দেশটি।

ইসরায়েল হামলা চালালে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু স্থাপনা আক্রান্ত হতে পারে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে পরমাণু স্থাপনা, সামরিক স্থাপনাসহ আরও কিছু লক্ষ্য রয়েছে। 

আকাশপথে পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত: ইসরায়েল এবং এর মিত্রদের বহুস্তর বিশিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষার তুলনায় ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা বেশ দুর্বলই বলা যায়। ফলে ধরে নেয়া যায়, ইরানে ইসরায়েলের মূল আঘাতটি হতে পারে আকাশপথে, আর এর লক্ষ্য হতে পারে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো।

এক্ষেত্রে বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর ঘাঁটি কিংবা পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রসহ ইরানের কৌশলগত অবস্থানগুলো সম্ভাব্য ইসরাইলি বিমান হামলার লক্ষ্য হতে পারে।

তবে এটি ইসরায়েলের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং আগ্রাসী পছন্দ হতে পারে, কারণ এতে ইসরায়েল আবারও ইরানের ভয়াবহ রোষের মুখে পড়ে পারে, যা আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়িয়ে দিতে পারে। আর এই শঙ্কাই এড়াতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব।

নিজেদের নিরাপত্তায় হুমকি অনুভব করলে যেকোনো স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলা চালানোর ইতিহাস বেশ পুরনো। ১৯৮১ সালে ইরাকে পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর এবং ২০০৭ সালে সিরিয়ায় পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা ফেলেছিল দেশটি।

ইরানে পারমাণবিক কর্মসূচিকে নিজেদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে আসছে ইসরায়েল।

তেহরান বরাবরই এই কর্মসূচিকে পুরোপুরিই শান্তিপূর্ণ বলে আসলেও ইসরায়েলের ধারণা তলে তলে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে ইরান। 

ইরানে কয়েকটি ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক প্রকল্প রয়েছে, সেগুলোতে হামলা চালানোটা বেশ চ্যালেঞ্জিং।

বিশেষজ্ঞ অনেকেই মনে করেন, ইরানের এসব স্থাপনায় হামলা চালাতে হলে ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা নিতে হতে পারে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এরই মধ্যে পরিষ্কার করেছেন, ইসরায়েল ইরানে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিলে তিনি সেনা পাঠাবেন না।

ইরানের বোনাব অ্যটোমিক রিসার্চ সেন্টার হতে পারে ইসরায়েলি হামলার আরেকটি লক্ষ্য। এটি ইসরায়েল ভূখণ্ডের সবচেয়ে কাছে এবং তাদের মিত্র আজারবাইজান থেকে ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। 

যদিও কেন্দ্রটি ইরানের কম গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর একটি, তারপরও এখানে হামলা ইসরায়েলের সামরিক শক্তির একটা সংকেত দেবে ইরানকে।   

সামরিক স্থাপনা: ইসরায়েলের সম্ভাব্য সরাসরি বিমান বা সাইবার হামলার লক্ষ্য হতে পারে ইরানের সামরিক স্থাপনা বা গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলো।

ইসরাইলির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের গবেষণা বিভাগের সাবেক প্রধান সিমা শাইনের মতে, বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে ইরানি ভূখণ্ডে হামলার একটি কৌশল হতে পারে এটি।

ইরানের মাটিতে ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন হামলাও ইসরায়েলের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হলেও এমন হামলা দেশটির জন্য নতুন কিছু নয়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট দাবি করেছেন, তার নির্দেশে ২০২২ সালে ইসরায়েলি বাহিনী ইরানে একটি ড্রোন ঘাঁটি ধ্বংস করেছিল।

সাইবার হামলা: ইরানের সামরিক-বেসামরিক বিভিন্ন ওয়েবসাইট আক্রান্ত হওয়া, দেশটির কয়েকজন পারমাণু বিজ্ঞানী গুপ্ত হত্যা এবং বিভিন্ন সময় গোয়েন্দা কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ রয়েছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বহুদিন ধরেই। যদিও ইহুদী রাষ্ট্রটি এসব অভিযোগ কখনই স্বীকার করেনি।

ধারণা করা হয়, ইরানের পেট্রোল পাম্প থেকে শুরু করে অনেক শিল্প কারখানা এবং পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বিভিন্ন সময় সাইবার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এখন ইরানের হামলার জবাবে আবারও একই পথে হাঁটতে পারে দেশটি।

সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মনে করছেন, সাধারণ মানুষের যাতে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়, সে জন্য ইসরায়েল হাসপাতালের মতো স্থাপনাগুলোতে হামলা এড়িয়ে চলবে। 

মধ্যপ্রাচ্যে সহযোগীদের ওপর আক্রমণ: ইরানে সরাসরি হামলার বদলে লেবাননের হিজবুল্লাহ কিংবা ইয়েমেনর হুতিদের ওপর আঘাত হানতে পারে। ইরাক ও সিরিয়াতেও কয়েকটি সশস্ত্র দল রয়েছে, ইসরায়েলে হামলা করতে ইরান দলগুলোকে সহায়তা দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। 

গাজায় বেশি নজর: ছয় মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধ এবং হামাস ও রাফাহ শহর ধ্বংসে আরো মনোযোগী হতে পারে ইসরায়েল। দেশটির সরকারের ধারণা, রাফাহতে হামাসের প্রায় ৮ হাজার যোদ্ধা এখনো লুকিয়ে আছে।

ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক গবেষণা প্রধান ইয়োসি কুপারওয়াসারের মতে, ইরানের কাছ থেকে অর্থায়ন ও সামরিক প্রশিক্ষণ পডাওয়া হামাসের পরাজয় ইসরায়েলের কাছে বড় ধরনের একটি বিজয় হতে পারে।

গোপন অভিযান: ধারণা করা হয়, ইসরায়েল আগেও বিভিন্ন সময় ইরান ভূখণ্ডে অনেকবারই গোপন অভিযান পরিচালনা করেছে। এর মধ্যে দেশটির কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানীর গুপ্ত হত্যাও রয়েছে বলে মনে করা হয়।

কূটনীতি: সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার ইচ্ছার পাশাপাশি ইসরায়েল ইরানকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছন্ন করতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও বাড়িয়েছে ইসরায়েল। 

ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন কর্মসূচির ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের করার কথা বলেছে।

টাইমলাইন: ইরান–ইসরায়েল উত্তেজনা

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App