×

আন্তর্জাতিক

ইসলামি দেশ জর্ডান কেন ইসরায়েলকে সমর্থন দিচ্ছে?

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২০ পিএম

ইসলামি দেশ জর্ডান কেন ইসরায়েলকে সমর্থন দিচ্ছে?

ছবি: ইন্টারনেট

সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলায় চরম ক্ষিপ্ত হয়েছে তেহরান। পাল্টা প্রতিশোধে ইসরায়েলে শতাধিক ড্রোন ও মিসাইল ছুড়ে হামলা চালিয়েছে ইরান। কিন্তু ইরানের সেই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কাবু করতে পারেনি ইসরাইয়েকে। কেননা, তেল আবিবের প্রতিরক্ষায় ঢাল হয়ে পাশে ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের মত মিত্র দেশগুলো। পাশাপাশি কিছু আরব দেশগুলো রেখেছে সক্রিয় ভূমিকা।

সৌদি আরবের পাশাপাশি ইরানের সেই ড্রোন হামলাকে নস্যাৎ করার জন্য ‘দেহরক্ষীর’ মতো পাশে ছিলো প্রতিবেশী দেশ জর্ডানও। আরব দেশ হয়েও ইসরায়েলের সহযোগী শক্তি হিসাবে জর্ডানের এমন অবস্থান ছিলো রীতিমতো অবাক করার মতো। আলজাজিরা, জেরুজালেম পোস্ট।

এছাড়াও জর্ডান বা সৌদি আরবের মতো দেশগুলো যে ইরানের মিসাইল ও ড্রোন আক্রমণকে নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য সক্রিয় ছিলো, সেটাকে স্বাভাবিক বলেই অভিহিত করেছেন অনেক বিশ্লেষক।

ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের বিরোধটা অনেক পুরোনো। তারপরও গাজায় ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞের পর অনেকেই ধারণা করেছিল ইরানের এই হামলায় সৌদি আরব বুঝি তাদের পক্ষ নেবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। সৌদির অবস্থান কিছুটা বোঝা গেলেও জর্ডানের ভূমিকা অনেককেই অবাক করেছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যখন জর্ডানের ওপর দিয়ে ইসরায়েলের দিকে যাচ্ছিল, জর্ডান তার বেশ কয়েকটিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এভাবে জর্ডান ইসরায়েলের সহযোগী শক্তি হিসাবেই এবার আবির্ভূত হয়েছে। কেবল ইরানের ড্রোনগুলো ধ্বংসই নয়, একই সঙ্গে জর্ডান তার আকাশকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের জন্য খুলেও দিয়েছে। 

ব্রিটেনের প্রভাবশালী মিডিয়া দি ইকোনমিস্ট জানায়, সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি উপসাগরীয় দেশ এই সংঘাতে পরোক্ষভাবে ইসরায়েলের পক্ষ অবলম্বন করছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলের পক্ষাবলম্বনকারী দেশের যুদ্ধবিমানের তেল নেয়ার জন্য তাদের বিমানবন্দরগুলো উন্মুক্ত করে দিয়েছে।

আরো পড়ুন: ইসরায়েলি হামলা হলে সেকেন্ডের মধ্যেই জবাব দেবে ইরান

মধ্যপ্রাচ্যের মতো অশান্ত অঞ্চলে জর্ডান অপেক্ষাকৃত একটি দুর্বল দেশ। ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের পর আঞ্চলিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে জর্ডান। পাশাপাশি সামরিক এবং অর্থনৈতিক দুদিক থেকেই নড়বড়ে হয়ে পড়ে তাদের অবস্থান। ফলে যুদ্ধবিগ্রহগ্রস্ত অঞ্চলটিতে গা বাঁচিয়ে চলতে হয় দেশটিকে। এমনকি আর্থিকভাবে সাহায্যের জন্যও জর্ডানকে অন্য দেশের দারস্থ হতে হয়। 

অন্যদিকে ইসরায়েলের সঙ্গে সীমান্ত ভাগাভাগি করে জর্ডান। ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে যে কোনো বৈরী সম্পর্ক অর্থনৈতিকভাবে দেশটিকে আরো ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও মিত্রতার সম্পর্ক জর্ডানের। ফলে নিজেদের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আত্মরক্ষার স্বার্থেই ইরানের হামলায় ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে দেশটি। 

এছাড়াও ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ানোর পেছনে জর্ডানের কূটনৈতিক বিষয় ছাড়াও পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাসও। এর মধ্যে রয়েছে ইসরায়েল-জর্ডান শান্তি চুক্তি। ওয়াদ্দি আরাবা নামে সেই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয় ১৯৯৪ সালের ২৬ অক্টোবর। এই চুক্তিটি দুই দেশের মধ্যে ভূমি, পানি, ব্যবসা এবং ভ্রমণের ক্ষেত্রে সম্পর্ক স্থাপিত করে। এই চুক্তিটির আরো একটি অঙ্গীকার ছিলো কোনো দেশই তাদের ভূমি ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশকে আক্রমণ করতে পারবে না। 

ফলে শনিবার এ হামলার পর রবিবার নিজেদের অবস্থান নিয়ে বিবৃতি দেয় জর্ডান সরকার। 

বিবৃতিতে বলা হয়, তাদের এই সামরিক পদক্ষেপ শুধুমাত্র নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য করা হয়েছে, ইসরায়েলের সুবিধার জন্য নয়। সেই বিবৃতিতে আরো বলা হয়, গত রাতে আমাদের আকাশসীমায় প্রবেশ করা ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আমাদের নাগরিকদের এবং আবাসিক ও জনবহুল এলাকার নিরাপত্তাকে বিপন্ন না করেই প্রতিরোধমূলকভাবে মোকাবিলা করা হয়েছে।

তবে জর্ডানের এই পদক্ষেপের কারণে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ আরব বিশ্বে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে খেপেছে। অনেকে আবার হাস্যরসাত্মকভাবে নিন্দা করছে দেশটির। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসরায়েলি সামরিক ইউনিফর্মে বাদশাহর একটি মিম ভাইরাল হয়েছে। এমনকি জর্ডানের এই পদক্ষেপের কারণে ক্ষুব্ধ স্থানীয় নাগরিকরাও।

টাইমলাইন: ইরান–ইসরায়েল উত্তেজনা

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App