×

আন্তর্জাতিক

ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকর

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৪, ১০:৪৯ পিএম

ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকর

ছবি: সংগৃহীত

ভারতে কার্যকর করা হলো সিটিজেন অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ)। 

সোমবার (১১ মার্চ) দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। আগামী মে মাসে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে ভারত সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) কার্যকর করল। 

প্রসঙ্গত, ২০১৯ এর নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) পাসের পর থেকেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছিল বিক্ষোভ। এমনকি দাঙ্গাও বাঁধে দিল্লিতে। ২০২০ সালেও সেই সিএএ বিরোধী ঝড় অব্যাহত থাকে।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, বাংলায় কিছুতেই সিএএ চালু করতে দেবেন না। মোদী সরকারকে নিশানা করে তিনি বলেন, ‘সাহস থাকলে (সিএএ) আগে করতেন। লোকসভা ভোটের আগেই করতে হল কেন? 

সোমবার বিকেলে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, নির্বাচন এলে কিছু একটা খাইয়ে দেয়ার চেষ্টা করে ওরা। আমার কথা হল, ২০২০ সালে সিএএ পাশ হয়েছিল। তার পর চার বছর লেগে গেল! আজ নির্বাচনের দু-তিন দিন আগে সিএএ চালু করার প্রয়োজন হল? আসলে এটা রাজনৈতিক পরিকল্পনা।

আরো পড়ুন: নুসরতকে বাদ দিয়ে কাকে প্রার্থী করলেন মমতা

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার ২০১৯ সালে আইনটি পাস করে। বিতর্কিত আইনটি ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আসা অমুসলিম শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্বের অনুমতি দেয়। এ আইন অনুযায়ী, মুসলমান ছাড়া সব ধর্মের লোকদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। ভারতের প্রতিবেশী আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং গুজরাট, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, হরিয়ানা, পাঞ্জাবের মতো রাজ্যে বসবাসকারী অ-মুসলিমদের (হিন্দু, শিখ, জৈন এবং বৌদ্ধ) ভারতীয় নাগরিকত্ব দেয়া হবে এমনটাই জানিয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে মুসলমান ছাড়া অন্য সবাই যাতে অবিলম্বে আবেদন করেন, সেই আমন্ত্রণবার্তাও দেয়া হয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। 

জি নিউজের খবরে বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫ এবং ২০০৯ সালে প্রণীত নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের (সিএএ) অধীনে এ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। ২০১৯ সালে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী নয়। 

এদিকে, আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়েছে, আইনে পরিণত হলেও প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে সিএএ-র ধারা-উপধারা যুক্ত হয়নি। ফলে বাস্তবে এই আইন কার্যকরও হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি সই করার ছয় মাসের মধ্যে আইনের নির্দিষ্ট ধারা-উপধারা যুক্ত করতে হয়। অন্যথায় লোকসভা কিংবা রাজ্যসভার নির্দিষ্ট কমিটিগুলির কাছে বিশেষ অনুমতি নিতে হয়। 

এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০২০ সাল থেকে আইন কার্যকর করার সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন জানিয়ে আসছিল। এই বিলম্ব নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে কটাক্ষও করছিল বিরোধী দলগুলি। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর সিএএ পাশ করিয়েছিল কেন্দ্রের মোদী সরকার। ওই আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো মুসলিম ধর্মাবলম্বী দেশ থেকে যদি সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে এ দেশে আশ্রয় চান, তা হলে তা দেবে ভারত। সংসদের দু’কক্ষে পাশ হওয়ার পরে দেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দও অনুমোদন দিয়েছিলেন সিএএ বিলে। 

কিন্তু এতদিন ধরে সিএএ কার্যকর করা নিয়ে কোনো বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, লোকসভা নির্বাচনের আগেই দেশে সিএএ কার্যকর হবে। শুধু তা-ই নয়, শাহ এ-ও বলেছিলেন, শীঘ্রই সিএএ কার্যকরের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে যাবে।

আরো পড়ুন: পাসপোর্ট ছাড়াই যাওয়া যাবে সৌদি আরব

মতুয়া অধ্যুষিত নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনার সভায় এসে সিএএ নিয়ে মুখ খোলেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে বনগাঁর বিজেপি প্রার্থী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর বলেছিলেন, ভোটের আগে সিএএ কার্যকর হচ্ছেই। ভোট ঘোষণার এক-দু’দিন বা তিন দিন আগে হলেও সিএএ কার্যকর হবে। এমনকি, নির্বাচন বিধি চালু হওয়ার এক ঘণ্টা আগেও সিএএ কার্যকর হতে পারে।’ বিরোধী তৃণমূল অবশ্য বিষয়টিকে ‘উদ্বাস্তু মানুষদের ভাঁওতা দেয়ার চেষ্টা’ বলে কটাক্ষ করে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিএএ-কে ‘ক্যা ক্যা’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। তৃণমূল নেতৃত্ব বরাবরই সিএএ প্রসঙ্গে দাবি করে আসছেন, যে নাগরিকেরা ভোট দেন, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড আছে, তারাই এ দেশের নাগরিক। তাই তাদের নতুন করে নাগরিকত্ব দেয়ার প্রয়োজন নেই।

গত মাসেই সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত এক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, সিএএ কার্যকরের বিজ্ঞপ্তি লোকসভা নির্বাচনের অনেক আগেই জারি হয়ে যাবে। এই আইনের নিয়ম বা ধারা তৈরি হয়ে গিয়েছে। নাম নথিভুক্তকরণের জন্য অনলাইন পোর্টালও প্রস্তুত। তিনি আরো বলেছিলেন, সিএএ-র গোটা প্রক্রিয়াই অনলাইনে হবে। সেখানে আবেদনকারীদের শুধু জানাতে হবে তারা কবে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন।

সিএএ কার্যকর করা নিয়ে দীর্ঘদিন কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যেই টালবাহানা চলছিল। অন্যদিকে, করোনা পর্বের আগে থেকেই দেশের নানা প্রান্তে সিএএ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। সারা দেশে সিএএ-বিরোধী আন্দোলনে প্রাণ যায় প্রায় ১০০ জনের। বিজেপি বিরোধী দলগুলিই এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলো। পশ্চিমবঙ্গের মতো বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলি ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে সিএএ কার্যকরের বিরোধী। এখনো পর্যন্ত লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন। তার আগেই গোটা দেশে চালু হয়ে গেল সিএএ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App