×

আন্তর্জাতিক

কেমন ছিল নাভালনিকে রাখা সেই বন্দিশালা!

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:২০ পিএম

কেমন ছিল নাভালনিকে রাখা সেই বন্দিশালা!

ছবি: সংগৃহীত

ষাটের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজনৈতিক বিরোধী ও বন্দিদের রাখা হত আইকে-৩ জেলে। শীতকালে সেখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নামে। ১৯৬১ সালে গড়ে তোলা ওই বন্দিশালায় রাখা হত দুর্ধর্ষ সব আসামিদের, বাধ্য করা হত জোরপূর্বক শ্রমে।

ভয়ানক অপরাধীদের এই কারাগারটিতে রাখার কথা থাকলেও রাশিয়ার বিরোধী দলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনিকে সেখানে রাখা হয়েছিল বিভিন্ন অভিযোগে। গত ডিসেম্বর থেকে ওই কারাগারে বন্দি ছিলেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক নাভালনি। কিন্তু শুক্রবার হঠাৎ তার মৃত্যুর খবর দেয় রুশ কর্তৃপক্ষ। তার এমন মৃত্যু নিয়ে গোটা বিশ্বেই হচ্ছে আলোচনা-সমালোচনা। যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো নাভালনির মৃত্যুর পেছনে পুতিনকেই দায়ী করেছে। তাকে খুন করা হয়েছে বলেও দাবি তুলেছে নাভালনির পরিবার ও বিরোধী শিবির। খবর বিবিসির।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, নাভালনির শিবির বলছে, তার মৃত্যুর বিষয়টি তারা নিশ্চিত নন। তবে কারা কর্তৃপক্ষ তার মৃত্যুর যে খবর জানিয়েছে, সেটি তাদের নাভালনিকে খুন করারই স্বীকারোক্তি বলে তারা মানছেন। গত বছর আগষ্টে ১৯ বছরের কারাদণ্ড পাওয়ার পর জেলেই ছিলেন নাভালনি।  ৪৭ বছর বয়সী নাভালনিরের স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে।

জানা যায়, আইকে-৩ এর আগে নাভালনি বন্দি ছিলেন মেলেখভো কলোনিতে। মস্কো থেকে ৪ ঘণ্টার দূরত্বের এই কলোনিতে তিনি ২ বছর জেলে কাটিয়েছেন। এ সময় নানা স্বাস্থ্য সমস্যায়ও ভুগছিলেন তিনি। সম্ভবত সেটি ২০২০ সালে নভিচক বিষক্রিয়ার প্রভাবে। তার পিঠ ও পেটে ব্যথা, পা অসাড় হয়ে যাওয়ার কথা জানা গিয়েছিল। তাকে সঠিক চিকিৎসার সুযোগ না দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

আইকে-৩ কারাগারে রুশ জাতীয় সংগীত বাজানোর জন্য কারারক্ষীরা কীভাবে ভোর ৫টায় বন্দিদের জাগিয়ে তোলে, গত ২২ জানুয়ারি সেই বর্ণনা দিয়েছিলেন নাভালনি। জাতীয় সংগীত বাজানোর পরপরই দেশের দ্বিতীয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গান শামানের ‘ইয়া রাস্কি’ বা ‘আমি রাশিয়ান’ বাজানো হত, যেটি মূলত ভ্লাদিমির পুতিনের অনানুষ্ঠানিক সংগীত হয়ে উঠেছে।

গত ডিসেম্বরে তাকে মেলেখভো থেকে ১ হাজার ৯৩০ কিলোমিটার দূরে খার্পে নেয়া হয়। ওই যাত্রার বর্ণনা দেয়ার সময়ও তিনি হাসছিলেন। এসময় রসিকতা করে নাভালনি বলেছিলেন, ‘আমাকে সেখানে নেওয়ার ২০ দিন ছিল ক্লান্তিকর। কিন্তু আমি এখনো খোশ মেজাজে আছি, অনেকটা সান্তাক্লজের মত।’

আরো পড়ুন: তিউনিসিয়া উপকূলে অগ্নিকাণ্ডে বাংলাদেশিসহ নিহত ৯

আইকে-৩ বা পোলার উলফ কারাগারে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে বন্দীদের দেওয়া হয় কঠিন শাস্তি। মাইনাস ৩০ ডিগ্রিতে নামা তাপমাত্রায় কোট ছাড়াই বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। আর যারা দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না, তাদের ডোবানো হয় বরফপানিতে। গরমের সময় বন্দিদের কোমর পর্যন্ত নগ্ন করে রাখা হয় মশার ঝাঁকের মধ্যে। এছাড়া গরমের মৌসুমে সেখানে সূর্যাস্ত যায় না। ফলে একটানা দীর্ঘ সময় কেবল দিনই থাকে, রাতের দেখা মেলে না। এগুলোর সবই বন্দিদের জন্য শারীরিক কঠিন নির্যাতন। মস্কোর পূর্বে মেলাখভোতে আইকে-৬ কারাগারে নিঃসঙ্গ ছিলেন নাভালনি। এরপর গত ডিসেম্বর থেকে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে বিচ্ছিন্ন রাখা হচ্ছিল আইকে-৩ কারাগারে। কিন্তু সেখানে হঠাৎ অসুস্থ হওয়ার পর তিনি মারা গেছেন বলে খবর ছড়িয়েছে।

রুশ কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘নাভালনি হাঁটার পর অসুস্থ বোধ করেন এবং একটু পরই জ্ঞান হারান। দ্রুত চিকিৎসক ও অ্যাম্বুলেন্স দলকে ডাকা হয়। এসময় জ্ঞান ফিরিয়ে আনা চেষ্টা করা হলেও ব্যর্থ হন চিকিৎসকরা। পরে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে কর্তৃপক্ষ। মৃত্যুর কারণ জানতে তদন্ত চলছে।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App