চলতি বছরের নভেম্বরেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এদিকে এ নির্বাচনে যেই জিতে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হবেন সুপার পাওয়ার রাশিয়া তার সঙ্গেই কাজ করবে বলে জানিয়েছেন পুতিন।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্টের দৌরে রাশিয়ার পছন্দের ব্যাপারে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন ভ্লাদিমির পুতিন। পুতিন জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডনাল্ড ট্রাম্পকে নয় বরং বাইডেনকেই পছন্দ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের।

পুতিন বলেন, জো বাইডেন অনেক বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষ, যাকে বুঝতে পারা যায়। তাই ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে জো বাইডেনকে পছন্দ করি। তবে যে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গেই কাজ করতে রাজি।   

বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এভাবেই নিজের পছন্দের কথা জানিয়ে অনেককে অবাক করেছেন পুতিন। সাক্ষাৎকারটি নেন রুশ সাংবাদিক পাভেল জারুবিন। 

পুতিনের কাছে পাভেল জানতে চান, ডেমোক্র্যাট বাইডেন ও রিপাবলিকান ট্রাম্পের মধ্যে কে রাশিয়ার জন্য ভালো? উত্তরে বিনাদ্বিধায় পুতিন বলেন, বাইডেন। তিনি আরো অভিজ্ঞ, অনুমেয় ব্যক্তি। তিনি পুরনো ধারার রাজনীতিবিদ। পরক্ষণেই সামান্য হেসে পুতিন বলেন, তবে আমরা যে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাজ করবো, যার ওপর আমেরিকান জনগণ আস্থা রাখে।

এদিকে ২০২৪ সালের নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেন ও ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো পরস্পরের মুখোমুখি হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমান সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চমাত্রায় রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক এখন তলানিতে।

এমন যখন প্রেক্ষাপট, ঠিক সেই সময়টাতেই আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে প্রথম প্রকাশ্যে মন্তব্য করলেন পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট পুতিন। তবে তার এই মন্তব্য আন্তরিক হিসেবে বিবেচিত না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

তবে সাক্ষাৎকারে পুতিন যে বাইডেনের প্রশংসাই করেছেন তা কিন্তু নয়। বরং ইউক্রেইন যুদ্ধ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন যেভাবে নিন্দা জানিয়েছেন সেটিকে ‘খুবই ক্ষতিকর এবং ভ্রান্ত’ বলে বর্ণনা করেছেন পুতিন।

পুতিনের এভাবে বাইডেনের প্রশংসা করা এবং খোলাখুলি ট্রাম্পের চাইতে বাইডেনকে তার বেশি পছন্দ করার কথা জানানো নিয়ে অনেকের মনে সংশয় রয়েছে। কেউ কেউ ধারণা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে দিয়ে আবারো কথার খেলা শুরু করেছেন পুতিন।

এদিকে, সম্প্রতি ট্রাম্প নেটো সদস্যভুক্ত যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন এই সামরিক জোটের পরিচালনায় নিজেদের ভাগের অর্থ প্রদানে ব্যর্থ হচ্ছে সেসব দেশে রাশিয়াকে আক্রমণ করতে ‘উৎসাহ’ দেবেন বলে মন্তব্য করে দারুণ সমালোচিত হচ্ছেন।

অন্যদিকে ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালে পুতিনের সমালোচনা করতে তিনি অনাগ্রহী ছিলেন। সম্প্রতি ট্রাম্প বলেন, ন্যাটোর চাঁদা দিতে ব্যর্থ সদস্য দেশে হামলা চালাতে রাশিয়াকে উৎসাহিত করবেন তিনি। ট্রাম্পের এমন দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে তার অনেক সমালোচকের ধারণা, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে পুতিনকে সুবিধা দেবেন।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এর প্রতিক্রিয়ায় দেশটির বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের ধারাবাহিক পদক্ষেপে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব পদক্ষেপের মধ্যে আছে সামরিক জোট ন্যাটোর সম্প্রসারণ, মস্কোর ওপর দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ, কিয়েভকে বিপুল অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করা।