×

আন্তর্জাতিক

আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না: ইমরান খান

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:৩০ পিএম

আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না: ইমরান খান

সরকার গঠন করতে যদি পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ে তাহলে এমন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হতে আমি চাই না বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। 

পাকিস্তানের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, পাকিস্তানে এবার জাতীয় নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। কারাগারে থাকা ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বেশি সংখ্যক আসনে বিজয়ী হলেও তাদের সরকার গঠনের সুযোগ কম। অন্যদিকে দেশটির বড় দুটি দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) মধ্যে জোট সরকার গঠন নিয়ে জোর আলোচনা চলছে।

তবে দল দুটি একসঙ্গে মিলে সরকার গঠন করলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সেটা নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। কারণ, পিএমএল-এন প্রধান নওয়াজ শরিফ এবং পিপিপি প্রধান বিলওয়াল ভুট্টো দুজনই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। কেউই ছাড় দিতে রাজি নন। এই অবস্থায় ক্ষমতা কীভাবে ভাগাভাগি করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা চলছে দলটির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে।

ইতোমধ্যে দল দুটির নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। সেখানে ক্ষমতা ভাগাভাগির ব্যাপারে নতুন ফর্মুলা সামনে এনেছেন তারা। পাঁচ বছর মেয়াদী সরকারে উভয় দল আড়াই বছর করে প্রধানমন্ত্রীত্বের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটা হলে পাকিস্তানের ইতিহাসে তা নতুন ইতিহাস হবে। তবে এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

পিটিআইয়ের কারাবন্দি নেতা ইমরান খান বলেছেন,  পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সঙ্গে জোট সরকার গঠন করব না। এছাড়া মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম-পি) এর সঙ্গেও জোট গঠন নাকচ করেছেন ইমরান। তবে তিনি জানিয়েছেন, অন্য দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠনের ব্যাপারে আলোচনা করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

ইমরান পিপিপি ও পিএমএল-এনকে অর্থপাচারকারী হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, যাদের ক্ষমতায় নিয়ে আসা হয়েছে তারা সবাই পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় অর্থপাচারকারী। গত ৮ ফেব্রুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছে; সেটি পাকিস্তানে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনবে।দেশটির সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন তিনি জানতে পারেন নওয়াজ শরীফ ও তার মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ সাংবাদিক সম্মেলন বাতিল করেছেন; তখনই তিনি বুঝতে পারেন তারা দুজনই নির্বাচনে হেরে গেছেন।

এদিকে, লতিফ খোসা নামে পিটিআই’র এক নেতা এবং পাঞ্জাবের সাবেক গভর্নর সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে বলেছেন, এই ফল ‘ফর্ম ৪৫’ জারি করা পর্যন্ত সঠিক ছিল। তার মতে, ‘স্বতন্ত্র’ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও পিটিআই-সমর্থিত প্রার্থীরা দলের বৈধ সদস্য, যারা আইন ও সংবিধানের সীমার মধ্যে কাজ করেন। 

তিনি বলেন,  ফর্ম ৪৫ অনুযায়ী, আমাদের ১৭০ জন প্রার্থী বিজয়ী হচ্ছে। তারা স্বতন্ত্র নয়, কারণ পিটিআই একটি আইনি ও সাংবিধানিক দল হিসেবে বিদ্যমান। আমাদের স্বতন্ত্র বলা ভুল এবং অবৈধ। সংরক্ষিত আসনের সম্ভাব্য সংযোজনের কথা উল্লেখ করে তিনি দাবি করেন, জাতীয় পরিষদে পিটিআই’র আসন সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যাবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনের নীতির প্রতি জোর দিয়ে লতিফ বলেন, ‘নির্বাচনে আবির্ভূত বৃহত্তম রাজনৈতিক দলকে সরকার গঠনের অধিকার দেয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি করার ধারণাটিকে গণতান্ত্রিক নীতির বিরোধী বলে সমালোচনা করেন এই পিটিআই নেতা। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘গণতন্ত্র নিয়ে কি তামাশা করা হচ্ছে?’

পিটিআই নেতা ইমরান খানকে বাদ দিয়ে সংসদ কার্যকরভাবে কাজ করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন লতিফ। ইমরানকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইমরান খানকে ছাড়া কোনো সরকার গঠন করা যাবে না।

তিনি পিটিআই’র নির্বাচনী শক্তিকে অবমূল্যায়ন করার বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেন, বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে পিটিআই প্রধানমন্ত্রীর পদের ন্যায্য দাবিদার। লতিফ আরো বলেন, পিটিআই বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হওয়ায় তিনি (ইমরান খান) প্রধানমন্ত্রী হবেন এবং কেউ তাকে আটকাতে পারবে না। 

পাকিস্তানি গণমাধ্যম জি নিউজের প্রদর্শিত ফলাফল অনুযায়ী, ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে কারাগারে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান-তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পার্লামেন্টে ৯২টি আসন পেয়েছে, আর পিএমএল-এন পেয়েছে ৭৯টি ও পিপিপি ৫৪টি। এ অবস্থায় পিএমএল-এন ও পিপিপির মধ্যে জোট সরকার গঠনে সমঝোতা হলে নির্বাচনী ফলাফলে প্রথম স্থানে থাকা ইমরানের অনুসারীদের ক্ষমতার বাইরেই থাকতে হবে। 

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের যে বহুদলীয় জোট ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল তার প্রধান দুই অংশীদার ছিল পিএমএল-এন ও পিপিপি। ইমরানকে হটানোর পর পিএমএল-এনের শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে পরবর্তী ১৬ মাস এই জোট সরকার পাকিস্তানকে শাসন করেছে।  

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App