×

আন্তর্জাতিক

মিয়ানমারের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর এত বেশি প্রভাবের কারণ কী

Icon

বিবিসি

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:০৪ এএম

মিয়ানমারের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর এত বেশি প্রভাবের কারণ কী

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ১৯৪৮ সালে দেশটির স্বাধীনতার পর থেকেই বেশির ভাগ সময়ে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আধিপত্য বজায় রেখে আসছে। ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পর এ পর্যন্ত দেশটিতে বেশ কয়েকটি সেনা অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে। এরমধ্যে সর্বশেষ ২০২১ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন বর্তমান শাসক ও সেনাপ্রধান মিন অং লাইং।

দেশটির রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যারা নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টিকে আছে। এমনকি ১৯৯০ এবং ২০০০-এর দশকে কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাও সামরিক জেনারেলদের উপর তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। প্রশ্ন উঠেছে যে, মিয়ানমারে এতো দীর্ঘ সময় ধরে কীভাবে সামরিক বাহিনী তাদের আধিপত্য বজায় রেখে আসছে এবং ভবিষ্যতেও তারা এই অবস্থা বজায় রাখতে যাচ্ছে কিনা। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন প্রশ্নের উত্তর আসলে দেশটির ইতিহাসের সাথে জড়িত। কারণ 'মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটির চেয়ে বেশি পুরনো'। জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির এশিয়ান স্টাডিজ বিভাগের ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক ডেভিড আই স্টেইনবার্গ ‘দ্য মিলিটারি ইন বার্মা/মিয়ানমার’ নামে তার বইয়ে লিখেছেন, সামরিক বাহিনী তাদের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা কখনও ধরে রেখেছে বিভিন্ন ডিক্রি জারি করে, রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা এবং তাদের নিয়ন্ত্রণ করে এবং সংবিধানে বিধি অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে।

তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী বিভিন্ন সময় সংবিধানে নিজের অনুকূলে নানা বিধি অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং এগুলো তাদের অনুমোদন ছাড়া সংশোধনের উপায় নেই। তিনি মনে করেন, চতুর্থ ও সর্বশেষ সেনা অভ্যুত্থানের পেছনে মূল কারণ হচ্ছে শীর্ষ জেনারেল মিন অং লাইং এবং রাজনৈতিক নেতা অং সান সু চির মধ্যকার ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব। বিশেষ করে ২০২০ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির কাছে সেনা সমর্থিত রাজনৈতিক দলের পরাজয় সামরিক বাহিনীর জন্য অপমানকর ছিল।

কত বছর শাসন করেছে সামরিক বাহিনী?

অধ্যাপক ডেভিড আই স্টেইনবার্গ তার বইয়ে লিখেছেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী কখনওই যে গণতন্ত্র চায়নি তা তাদের শাসনকাল পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায়। মিয়ানমারের স্বাধীনতার ৭২ বছরের মধ্যে তারা ডিক্রি জারির মাধ্যমে শাসন করেছে ৩৭ বছর (১৯৫৮-৬০, ১৯৬২-৭৪, ১৯৮৮-২০১১, ২০২১-বর্তমান)।

সাংবিধানিক ক্ষমতার মাধ্যমে শাসন ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করেছে ১৯ বছর (১৯৭৪-৮৮, ২০১১-১৬), এবং ২০১৬-২১ পর্যন্ত পাঁচ বছর শাসন ক্ষমতায় নির্ধারিত নিয়ন্ত্রণ ছিল। সে হিসেবে মাত্র ১২ বছর দেশটির শাসন ক্ষমতা বেসামরিক প্রশাসনের অধীনে ছিল, যদিও এই সময়েও সামরিক বাহিনীর ভূমিকা ছিল। 'তাতমাদোও'-এর (মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী) ক্ষমতা যত বেড়েছে, এর পরিসরও বেড়েছে।

১৯৫৮ সালে সামরিক বাহিনীর সদস্য ছিল এক লাখ ১০ হাজার। ১৯৬৫ সালে এটি বেড়ে হয় এক লাখ ৪০ হাজার, ১৯৮৮ সালে এটি দুই লাখ এবং ১৯৯৯ সালে এটি বেড়ে চার লাখে দাঁড়ায়। সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা পাঁচ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্য ছিল। এছাড়া আরো ৮০ হাজার পুলিশ সদস্যও সামরিক বাহিনীর অধীনে ছিল। সামরিক বাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের প্রায় সবাই ছিল বৌদ্ধ এবং বার্মান জাতিগোষ্ঠীর। ২০১৪ সালে মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল ২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা সরকারের মোট ব্যয়ের ১৪ শতাংশ। ২০১৩ সালে এটি ছিল দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের সাড়ে চার শতাংশ, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।

মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ইয়োশিহিরো নাকানিশি তার বই ‘স্ট্রং সোলজার্স, ফেইলড রেভ্যুলিউশন’ নামে বইতে লিখেছেন, ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইনের নেতৃত্বে সেনা অভ্যুত্থানের পর সোশ্যালিস্ট রেভ্যুলিউশন ব্যর্থ হলেও তিনি দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সামরিক বাহিনীর জন্য উপযোগী করে পরিবর্তিত করতে সফল হয়েছিলেন। এরফলে সামরিক বাহিনী এবং রাষ্ট্রের মধ্যে একটি শক্ত সংযোগ স্থাপিত হয়। এর অংশ হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি ছিল, সামরিক বাহিনী থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের তাদের পদ অনুযায়ী বেসামরিক প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া। সাধারণত জেনারেল পদে থাকা সামরিক কর্মকর্তাদের মন্ত্রী পদে নিয়োগ দেওয়া হত। এই ব্যবস্থা এখনো বহাল আছে।

সংবিধানে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা

২০০৭ সালে বিক্ষোভ এবং আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০০৮ সালে একটি সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। তবে এতে এমন একটি ব্যবস্থা করা হয় যাতে করে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা বজায় থাকে। পার্লামেন্টে সামরিক বাহিনীর জন্য ২৫ শতাংশ আসন বরাদ্দের মাধ্যমে সামরিক বাহিনীকে ভেটো ক্ষমতা দেওয়া এবং এর মাধ্যমে সাংবিধানিক পরিবর্তন আনতে হলে সামরিক বাহিনীর অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়।

প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র এবং সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রণালয় সামরিক বাহিনীর হাতে ন্যস্ত থাকে। তিনজনের মধ্যে একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট সামরিক বাহিনীর হওয়া বাধ্যতামূলক করা এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা কাউন্সিলে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রাখার ব্যবস্থা করা হয়। একই সাথে বিদেশি নাগরিকত্ব থাকলে প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। যার কারণে অং সান সু চি প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। ২০০৮ সালে একটি রেফারেন্ডামের মাধ্যমে সাংবিধানিক এসব পরিবর্তন আনা হয়।

এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের সংবিধান ‘ক্যু ক্লজ’ বা ‘সেনা অভ্যুত্থানের’ ধারা রাখা হয়েছে। সংবিধানের এক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে,  প্রেসিডেন্ট চাইলে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন এবং তিনি ক্ষমতা সামরিক বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করতে পারেন। সামরিক বাহিনীর অর্থনৈতিক ক্ষমতাও কম নয়। ১৯৯০-এর দশকে সামরিক বাহিনী ইউনিয়ন অব মিয়ানমার ইকোনমিক হোল্ডিংস কর্পোরেশন এবং মিয়ানমার ইকোনমিক কর্পোরেশন নামে দুটি বৃহৎ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বা কনগ্লোমারেটস প্রতিষ্ঠা করে, যাদের বিভিন্ন ধরণের অভ্যন্তরীণ ব্যবসা ছাড়াও বিদেশি বিভিন্ন ফার্মের সাথে যৌথ ব্যবসা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান মিয়ানমারের অর্থনীতির একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে।

যেভাবে টিঁকে আছে

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী যা তাতমাদোও নামে পরিচিত, তারা আধুনিক এশিয়ার সবচেয়ে এলিট ও দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা বাহিনী। অর্ধ শতকেরও বেশি সময় ধরে তারা দেশটির ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করেছে, দেশটিকে পরিচালনা করেছে এবং ১৯৪৮ সালের স্বাধীনতার পর থেকে তারা রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে। মিয়ানমারের স্বাধীনতার কারিগর এবং বর্তমান গ্রেফতারকৃত সাবেক স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির বাবা জেনারেল অং সান ১৯৪০-এর দশকের শুরুর দিকে বার্মা ন্যাশনাল আর্মি নামে একটি সামরিক বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন। জেনারেল অং সানকে ১৯৪৭ সালে হত্যা করা হয়। তবে তার প্রতিষ্ঠিত বাহিনী টিকে যায় এবং আরো ক্ষমতাধর হয়ে উঠে। পরবর্তী বছরগুলোতে সামরিক বাহিনী ব্যাপক জনসমর্থন পায় কারণ তাদেরকে এমন একটি বাহিনী হিসেবে দেখা হয় যারা দেশকে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত করেছে।

ইউনিভার্সিটি অব আরলানগেন, নুরেমবার্গের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এবং মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মার্কো বুনটে ডয়েচে ভেলেকে এর আগে বলেছিলেন, “ভুলে গেলে চলবে না যে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাষ্ট্রটির তুলনায় বেশি বয়স্ক। ১৯৪৭ সালে থাইল্যান্ডে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এবং তখন এর নাম ছিল ‘বার্মা ইন্ডিপেনডেন্স আর্মি’।" "দেশটির স্বাধীনতার জনক অং সান এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অর্থ এবং অন্যান্য সহায়তা দিয়েছিল জাপান।”

স্বাধীনতা পরবর্তী মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর মূল দায়িত্ব ছিল কমিউনিস্ট এবং জাতিগত সহিংসতা দমন করা এবং দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখা। সামরিক বাহিনী সবসময়ই নিরাপত্তাকে সবার উপরে স্থান দিয়েছে এভাবে তারা একটি “প্যারানয়া সিকিউরিটি কমপ্লেক্স” বা নিরাপত্তা নিয়ে এক ধরনের ‘ভ্রান্ত ভয়’ সৃষ্টি করেছে যা এখনও চলছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। বুনটে বলেন, “মিয়ানমার রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত শত্রুদের দ্বারা বেষ্টিত হয়ে থাকার এই ধরণের দৃষ্টিভঙ্গি দূর হয়নি।” এই একই ধারণা জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির এশিয়ান স্টাডিজ বিভাগের ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক ডেভিড আই স্টেইনবার্গ ‘দ্য মিলিটারি ইন বার্মা/মিয়ানমার’ নামে তার বইয়েও তুলে ধরেছেন।

এতে তিনি বলেন, মিয়ানমারে সামরিক শাসনের বৈধতা আদায়ের চিরাচরিত একটি যুক্তি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক আক্রমণ থেকে দেশটিকে রক্ষা করা। অভ্যন্তরীণ শত্রু হিসেবে মনে করা হতো বার্মা কমিউনিস্ট পার্টিকে যারা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থিত ছিল। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণের শঙ্কা এবং তা ঠেকানোর জন্য নাগরিকদের আধা সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদানের মতো ঘটনাগুলো এই প্যারানয়ার অংশ।

তিনি বলেন, এই ভয় দেশটির জনগণের কাছে খুব একটা বোধগম্য না-হলেও তা সামরিক বাহিনীর ক্ষমতায় টিঁকে থাকাকে অভ্যন্তরীণ বৈধতা দিয়েছে। বুনটে বলেন, “মিয়ানমার শুরু থেকে একটি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত কৃষি-প্রধান দেশ। অনেক নাগরিকের কাছে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়াটা আকর্ষণীয় ছিল। তাই এটা অবাক করার মতো কিছু নয় যে, দেশটির বিরোধী দলীয় নেতারাও সামরিক বাহিনীর সাবেক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হবেন।”

উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের বেশির ভাগই ছিলেন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা। মিয়ানমার স্বাধীন হওয়ার পর পরবর্তী কয়েক বছর আধা-গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় চলার পর ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইন এর নেতৃত্বে সেনা অভ্যুত্থান হয়। এরপরপরই সামরিক বাহিনী দেশটির সব বিরোধী রাজনৈতিক দলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। একই সাথে তারা দেশটির প্রধান প্রধান শিল্প এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করে।

১৯৮৮ সালে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে এবং গণতান্ত্রিক সংস্কারের দাবিতে দেশ জুড়ে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। সামরিক বাহিনী তা কঠোর হাতে দমন করে এবং প্রায় পাঁচ হাজার বিক্ষোভকারীকে হত্যা করা হয়।

তবে এ ঘটনার পর জনসমর্থন হারায় সামরিক বাহিনী। একই বছরের সেপ্টেম্বরে দেশটির তৃতীয় সেনা অভ্যুত্থান ঘটে এবং আবারো সামরিক শাসনের ভিত মজবুত করা হয়। জেনারেল স মং এর নেতৃত্বে একটি জান্তা সরকার গঠিত হয় যার নাম দেয়া হয় স্টেট ল এন্ড অর্ডার রেস্টোরেশন কাউন্সিল (এসএলওআরসি)।

তিনি বহু দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেন। এর জের ধরে ১৯৯০ সালের মে মাসে নির্বাচন উপলক্ষে ৯৩টি দল নিবন্ধন করে। এসব দলের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) - যার নেতৃত্বে ছিলেন অং গাই, যিনি একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা। অং সান সু চি সেসময় মিয়ানমারে ছিলেন এবং তাকে দলের সেক্রেটারি করা হয়। দ্রুতই তিনি জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তিনি তার এক ভাষণে সামরিক বাহিনীকে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের অধীনস্থ একটি বাহিনীর মতো আচরণ করার আহ্বান জানান, যা তৎকালীন সামরিক সরকারকে ক্ষিপ্ত করে তোলে। তাকে গৃহবন্দী করা হয় ১৯৮৯ সালে, যা প্রায় ১৬ বছর ধরে চলে।

১৯৯০ সালের নির্বাচনে এনএলডি ব্যাপক ভোটে পার্লামেন্টের ৮২ শতাংশ আসনে জয় পায়। খারাপ করে সামরিক বাহিনী সমর্থিত ন্যাশনাল ইউনিটি পার্টি। এসএলওআরসি এই নির্বাচনকে বাতিল করে দেয় এবং ঘোষণা করে যে শুধু জান্তারাই “বৈধ ক্ষমতার” অধিকারী এবং তারাই “জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং তারাই দেশের ভবিষ্যৎ সংবিধান প্রণয়ন করবে"। ১৯৯২ সাল নাগাদ এসএলওআরসি-এর হাতে দেশটির নিরঙ্কুশ ক্ষমতা চলে যায় এবং সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ জেনারেল খিন নিয়ন্ত এর নেতৃত্বে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। তিনি এসএলওআরসি-এর প্রধান সেক্রেটারি ছিলেন এবং তিনি ১৯৯৭ সালে দলের নাম পরিবর্তন করে স্টেট পিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল (এসপিডিসি) রাখেন। তিনি বিভিন্ন জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে আলোচনার মাধ্যমে একটি মৌখিক যুদ্ধবিরতির ব্যবস্থা করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App