×

আন্তর্জাতিক

কাশ্মীর হতে পারে আগামীর ইসরাইল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:৪৭ পিএম

কাশ্মীর হতে পারে আগামীর ইসরাইল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক ও গবেষক ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ কাশ্মীরিদের ন্যায্য অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, ভারতের হিন্দুত্ববাদী পলিসির মাধ্যমে কাশ্মীর হতে পারে আগামীর ইসরাইল। তিনি বলেন, কাশ্মীরের অধিবাসীদের মানবাধিকার সংরক্ষণ এবং দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের জন্য কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

আজ সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) কাশ্মীর সংহতি দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদে সাউথ এশিয়ান ইয়ুথ রিসার্চ সেন্টারের উদ্যোগে 'আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য কাশ্মীর সমস্যার সমাধান অপরিহার্য' শীর্ষক আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সঞ্চালনা ও সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংস্থার গবেষণা পরিচালক মো. ইসরাফিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর বলেন, ২৭শে অক্টোবর সারা বিশ্বে 'কালো দিবস' হিসেবে পালন করা হয়, কারণ এই দিনে ভারত কোনো আইনি যুক্তি ছাড়াই জোরপূর্বক জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। কাশ্মীর সংহতি দিবস জম্মু ও কাশ্মীরে যারা ন্যায়বিচার এবং স্বাধীনতার জন্য অবিরত সংগ্রাম করে আসছে তাদের কণ্ঠস্বরকে বাড়িয়ে তোলে। এটি কাশ্মীরি জনগণের ন্যায্য অধিকারের সংগ্রামে পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতিকে নির্দেশ করে।

ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আর্টিকেল ৩৭০ পুনঃপ্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ভারতকে কাশ্মীরি জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। হিন্দুত্ববাদী পলিসির মাধ্যমে কাশ্মীর হতে পারে আগামীর ইসরাইল। ফিলিস্তিনের ভাগ্য বরণ করতে হতে পারে কাশ্মীরিদের। ৩৭০ বাতিল করার মধ্য দিয়ে সকল ভারতীয় কাশ্মীরে জমি ক্রয় করতে পারবে। এই নীতির কারণে অদূর ভবিষ্যতে নিজ ভূমে পরবাস হতে পারে কাশ্মীরের মুসলিম জনতা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শুধু পাকিস্তান ও ভারতকে সংযত থাকার অনুরোধ করে, কিন্তু কাশ্মীরের প্রকৃত সমস্যা সমাধানের জন্য কেউ কাজ করে না। দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা রক্ষায় এবং শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের জন্য জাতিসংঘকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

সভায় নিরাপত্তা বিশ্লেষক কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত আশরাফ আল দ্বীন বলেন, ফিলিস্তিনের মুসলমানদের উপর নির্যাতনের সংবাদ যেভাবে প্রচারিত হয় কাশ্মীরের মুসলমানদের উপর নির্যাতনের সংবাদ সেভাবে প্রচার হয় না। এখানে অধিকাংশ মুসলিম নিয়মিত নির্যাতিত হচ্ছে। এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ সকল রাষ্ট্রের জনগণের সোচ্চার হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে সার্ক-কে কার্যকরী করার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বারোপ করেন। কাশ্মীরের অধিবাসীদের মানবাধিকার সংরক্ষণ এবং সংঘাতমুক্ত কাশ্মীর প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘ এবং ভারতের ভূমিকার উপর তিনি গুরুত্ব দেন। তিনি কাশ্মীরিদের ন্যায্য অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন আর্টিকেল ৩৭০ পুনঃপ্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ভারতকে কাশ্মীরি জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। কাশ্মীর যতক্ষণ পর্যন্ত দেশ না হবে ততদিন পর্যন্ত কাশ্মীরের মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পাবে না বলেও মনে করেন তিনি। কাশ্মীরি জনগণের প্রতি বঙ্গবন্ধুর যে সমর্থন তা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণের উচিৎ কাশ্মীরিদের পাশে দাঁড়ানো।

কাশ্মীর সংকট দক্ষিণ এশিয়া তথা সারা বিশ্বের জন্য হুমকি স্বরূপ বলে মন্তব্য করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্যারিস্টার মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) এম. সরওয়ার হোসেন। তিনি বলেন, কাশ্মীরিদের যে বিশেষ স্বায়ত্তশাসন (আর্টিকেল ৩৭০) তা রদ করে ভারত এই অঞ্চলকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলেছে। ভারত সরকারকে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছেড়ে কাশ্মীরের জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণের উচিৎ কাশ্মীরিদের পাশে দাঁড়ানো। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে গণভোট অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা রক্ষায় কাশ্মীর সংকটের সমাধান করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী জনগোষ্ঠীর পাশে দেশের সরকার এবং রাজনৈতিক দল সমূহকে সহায়তা করার আহ্বান জানান। জাতিসংঘের মাধ্যমে গণভোট আয়োজনের মধ্য দিয়ে কাশ্মীরীদের মতামত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিৎ বলে তিনি মনে করেন। মানবাধিকার সংরক্ষণ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীল শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দ্রুত কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের কথা বলেন এবং সেখানে যুব সমাজের দুর্দশা ও তাদের উপর সশস্ত্র বাহিনীর নির্মমতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন যে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কাশ্মীরে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতন ইত্যাদি মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কাজের জন্য ভারতকে দায়ী করেছে এবং নিন্দা জানিয়েছে।

সাউথ এশিয়ান ইয়ুথ রিসার্চ সেন্টার এর গবেষণা পরিচালক মো. ইসরাফিল বলেন, কাশ্মীরের সংকটের ভুক্তভোগী আমরা সবাই। কাশ্মীরের সমস্যা সমাধানে আজকের এই দিবসে আমাদের সবাইকেই একত্রিত হওয়া উচিত। কারফিউ, অবৈধ আটক, খুন, সুপরিকল্পিত হত্যা, অবরোধ, বসতবাড়িতে আগুন, নির্যাতন, গুম, ধর্ষণ, মুসলিম নারীদের উপর নির্যাতন এবং নকল এনকাউন্টারের মাধ্যমে হত্যা কাশ্মীরের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে উঠেছে। এসব মৃত্যু এবং নির্যাতন বন্ধের জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সুশীল সমাজ এবং জাতিসংঘের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন। কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী জনগোষ্ঠীর পাশে দেশের সরকার এবং রাজনৈতিক দল সমূহকে সহায়তা করার আহ্বান জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App