লাক্ষা দ্বীপ ভ্রমণে ভারতীয়রা পড়তে পারেন সমস্যায়!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:৫৭ এএম
ভারতের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে বিপদ বেড়েছে মালদ্বীপের। ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারত মহাসাগরের উপরে অবস্থিত ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রটি এতদিন ভারতীয়দের ভ্রমণের স্বপ্নরাজ্য ছিল, সেই মালদ্বীপকে বয়কটের ডাক দিয়েছেন ভারতীয়রা।
‘বয়কট মালদ্বীপ’ আওয়াজ তুলেছেন, ভারতীয় চলচ্চিত্র জগৎ থেকে শুরু করে ক্রিকেট মহলের সব তারকারা। যে তারকারা ছুটি কাটাতে মালদ্বীপে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকতেন, তারাও মালদ্বীপ সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। মালদ্বীপ না গিয়ে ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জগুলিতে ছুটি কাটানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা। এই আবহে ভারতবাসীর নজর এখন দেশের অন্যতম পর্যটনস্থল লাক্ষা দ্বীপ।
লাক্ষা দ্বীপ, ভারতের ক্ষুদ্রতম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। এটি ৩৬টি আলাদা আলাদা দ্বীপ নিয়ে গঠিত। যার মোট আয়তন ৩২ বর্গ কিলোমিটার। এবার লাক্ষা দ্বীপকে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগ নিয়েছে ভারত সরকার।
লাক্ষা দ্বীপ ৩৬টি দ্বীপের সমন্বয়ে তৈরি হলেও এর মধ্যে কাভারত্তি, আগত্তি, বাঙ্গারাম, কদমত এবং মিনিকয় এই ৫টি দ্বীপেই ভ্রমণ করার অনুমতি রয়েছে পর্যটকদের। লাক্ষা দ্বীপের দ্বীপগুলিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বহু আদিবাসী উপজাতিদের বাস। তাদের সুরক্ষা, নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তার কথা মাথায় রেখেই সব দ্বীপে পর্যটকদের যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয় না।
সম্প্রতি লাক্ষা দ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। লাক্ষা দ্বীপের সমুদ্রে প্রধানমন্ত্রী মোদির স্নর্কেলিং করা, সাদা বালির উপর ভ্রমণ বা বিশাল নীল সৈকতে বিশ্রাম নেওয়ার ছবি প্রকাশ্যে আসার দিনই ৫০ হাজার মানুষ লাক্ষা দ্বীপ নিয়ে গুগলে অনুসন্ধান চালিয়েছেন। ফলে মনে করা হচ্ছে চলতি বছর থেকে ভিড় আরও বাড়বে লাক্ষা দ্বীপের সমুদ্রসৈকতে।
লাক্ষা দ্বীপে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়লে, পানির সমস্যা আবারো তীব্র আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে পানির সমস্যা দূর করতে উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে ইসরায়েল। তাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমুদ্রের নোনা পানি পানযোগ্য করা যাবে। ইসরায়েলের সেই প্রযুক্তিই এবার কাজে লাগানো হবে লাক্ষা দ্বীপে। গত মঙ্গলবার থেকে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজও শুরু হয়েছে।
সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে একটি পোস্টে ইসরায়েলি দূতাবাস লিখেছে, ‘ভারত সরকারের অনুরোধে খাবার পানি পরিশোধন প্রকল্প শুরু করার জন্য আমরা গত বছর লাক্ষা দ্বীপে গিয়েছিলাম। ইসরায়েল মঙ্গলবার থেকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে প্রস্তুত।’
উল্লেখ্য, মালায়লাম এবং সংস্কৃত ভাষায় লাক্ষা দ্বীপ কথার অর্থ লক্ষ দ্বীপের সমন্বয়। এই দ্বীপপুঞ্জ পশ্চিমে আরব সাগর এবং পূর্বে লাক্ষা দ্বীপ সাগরের মধ্যে সামুদ্রিক সীমানা হিসেবে কাজ করে। চারদিকে সমুদ্র দিয়ে ঘেরা। তাই বাইরে থেকে খাবার পানি সরবরাহ করে সমস্যা মেটানো এক প্রকার অসম্ভব। তাই লাক্ষা দ্বীপের দ্বীপগুলিতে প্রযুক্তির সাহায্যেই পানীয় খাবার পানির সমস্যা দূর করার চেষ্টা চলছে।
সম্প্রতি লাক্ষা দ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রশাসনিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি কেন্দ্রশাসিত দ্বীপরাজ্যের সমুদ্রসৈকতেও কিছুটা সময় কাটিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ফিরে এসে সেই সফরের স্মৃতিচারণাও করেছেন মোদি। সফরে কাটানো মুহূর্তের প্রচুর ছবিও তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন।
এর পরেই মোদি ও ভারতকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন মালদ্বীপ সরকারের তিন মন্ত্রী। অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী ছবিগুলি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করার পর মালদ্বীপ সরকারের তিন মন্ত্রী মরিয়ম শিউনা, মালশা শরিফ এবং মাহজুম মাজিদ সেই ছবিগুলি নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য করেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে ‘জোকার’ এবং ‘ইসরায়েলের দাস’ বলেও অপমান করা হয়েছে। কটাক্ষ করা হয়েছে ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়েও। এর পরেই বিতর্কের মুখে পড়েন ওই তিন মন্ত্রী এবং মালদ্বীপ সরকার। বিতর্কের মুখে পড়ে নিজেদের পোস্টগুলিও মুছে ফেলেন তারা। চাপের মুখে ওই ৩ মন্ত্রীকে সাসপেন্ড করেছে মোহাম্মদ মুইজ্জুর সরকার।
এতেই বয়কট মালদ্বীপের ডাক ওঠে ভারতে। প্রধানমন্ত্রী মোদির পাশে দাঁড়ান ক্ষয় কুমার, সচিন টেন্ডুলকর, সালমান খান, কঙ্গনা রনৌত, জন আব্রাহাম, শ্রদ্ধা কাপুর, হার্দিক পান্ডিয়ার মতো তারকারা। মালদ্বীপ যেতে বারণ করার পাশাপাশি, দেশবাসীকে ভারতীয় দ্বীপগুলি ভ্রমণ করার বার্তা দিয়েছেন তারা।
সেই বিতর্কের মাঝেই লাক্ষা দ্বীপকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করছে ভারত। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন হোটেল, রিসোর্ট, বিমানবন্দর। পাশাপাশি, খাবার ও পানি সমস্যার সমাধানে তৎপর হয়েছে সরকার।