×

আন্তর্জাতিক

ম্যালেরিয়াবাহী মশার প্রজাতি নিশ্চিহ্ন করার কৌশল উদ্ভাবন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:৩১ পিএম

ম্যালেরিয়াবাহী মশার প্রজাতি নিশ্চিহ্ন করার কৌশল উদ্ভাবন

আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসোর বিজ্ঞানী আবদৌলায়ে দিয়াবাতে এমন এক কৌশল উদ্ভাবন করছেন, যার মাধ্যমে জিন পরিবর্তন করে ম্যালেরিয়া সংক্রমণকারী মশার প্রজাতিকে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব।

সাধারণত আক্রান্ত স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া ছড়ায়। পুরুষ মশা কামড়ায় না, তাই সেগুলো ম্যালেরিয়া ছড়াতে পারে না।

সিএনএনের প্রতিবেদন অনুসারে, 'জিন ড্রাইভ' নামে একটি পদ্ধতির মাধ্যমে জিন এডিটিং করে পরিবেশে বন্ধ্যা পুরুষ মশা ছেড়ে দেয়া হয়। যার মাধ্যমে রোগ-বাহক স্ত্রী মশা আর সন্তান ধারণ করতে পারে না। দিয়াবাতে বলেন, 'এভাবে স্ত্রী মশার সংখ্যা কমে যায় এবং ম্যালেরিয়া সংক্রমণও নিয়ন্ত্রণে আসে।'

অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী দিয়াবাতের এই গবেষণার জন্য তাকে ২০২৩ সালে 'ফলিং ওয়ালস প্রাইজ ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইনোভেশন ম্যানেজমেন্ট' পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। তার কাজটি ম্যালেরিয়ার জেনেটিক সমাধানে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত কয়েকটি কাজের একটি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ম্যালেরিয়ার কারণে দিয়াবাতের জীবন হুমকির মুখে পড়েছিল। মশাবাহিত রোগটি থেকে দিয়াবাতে অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও রক্ষা পায়নি তার তিন-চার বছর বয়সী চাচাতো ভাইয়েরা। বর্তমানে দিয়াবাতে বুরকিনা ফাসোর স্বাস্থ্য বিজ্ঞান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব এবং পরজীবীবিদ্যা মেডিকেলের প্রধান।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, ম্যালেরিয়া বুরকিনা ফাসোতে মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ। যেখানে দেশটির ২ কোটি ২০ লাখ বাসিন্দার প্রায় সকলেই, বিশেষ করে শিশুরা এই রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। আফ্রিকায় ডব্লিউএইচও'র আঞ্চলিক অফিসের তথ্যানুসারে, ২০২১ সালে ম্যালেরিয়ার কারণে বুরকিনা ফাসোতে প্রায় ১৯ হাজার লোক মারা যায়। ২০২১ সালে ম্যালেরিয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৬ লাখ ১৯ হাজার মানুষ মারা যায়। যেখানে এই মৃত্যুর প্রায় ৯৬ শতাংশই ঘটেছে আফ্রিকায় এবং মৃতের ৮০ শতাংশ ছিল ৫ বছরের কম বয়সী শিশু।

বহু বছর ধরে কীটনাশকযুক্ত মশারি ব্যবহার ম্যালেরিয়া আক্রান্ত দেশগুলোতে সংক্রমণ এবং মৃত্যু কমাতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু ডব্লিউএইচও'র তথ্যানুসারে, ২০১৫ সাল থেকে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ ক্রমাগত বাড়তে শুরু করে। এর কারণ হিসেবে তারা ক্রমবর্ধমান ব্যয় বৃদ্ধি, ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি এবং ভেক্টর মশার কীটনাশকের প্রতি প্রতিরোধ ক্ষমতা বিকাশের কথা উল্লেখ করে।

দিয়াবাতে বলেন, 'ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণের সরঞ্জাম উদ্ভাবনই এই রোগকে জয় করার একমাত্র উপায়।'

তিনি বলেন, 'যদিও মশারি চমৎকার কাজ করছে… তবে এখন বিভিন্ন প্রজাতির মশার মধ্যে ব্যাপক কীটনাশক প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে, বিশেষ করে যেগুলো ম্যালেরিয়া ছড়ায়। এসব প্রচলিত সরঞ্জামের সাহায্যে ম্যালেরিয়াকে পরাস্ত করা কঠিন। এ কারণে নতুন সরঞ্জাম উদ্ভাবন এবং পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা বিদ্যমান সরঞ্জামগুলোর পরিপূরক হতে পারে। (অন্যথায়) আমরা কোনোভাবেই ম্যালেরিয়াকে পরাজিত করতে পারব না।'

দিয়াবাতে বলেন, তিনি আশাবাদী যে, ম্যালেরিয়ার জন্য তার ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ সরঞ্জাম 'জিন ড্রাইভ প্রযুক্তি' যখন উন্মোচন করা হবে, তখন এটি হবে একটি 'গেম-চেঞ্জার'।

তিনি বলেন, 'জিন ড্রাইভ আরও টেকসই এবং বাজেট-বান্ধব ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। এখানে জিনগতভাবে পরিবর্তিত মশাই আপনার জন্য কাজ করে। যেখানে অন্য (ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ) পদ্ধতিতে মানুষকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় দৌড়াতে হয়।'

দিয়াবাতে আরও বলেন, 'এটি খরচ সাশ্রয়ী এবং টেকসই হওয়ার পাশাপাশি আফ্রিকার দুর্গম এবং প্রবেশ করা কঠিন এমন অঞ্চলগুলোতেও সহজে স্থাপন করা যাবে। তবে আফ্রিকাতে জিন ড্রাইভ প্রযুক্তি চালু করতে আরও কয়েক বছর সময় লাগতে পারে।'

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App