×

আন্তর্জাতিক

কালকাতা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের মামলা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ পিএম

কালকাতা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের মামলা

ছবি: আনন্দবাজার

সাম্প্রতিক কলকাতা হাইকোর্টের একটি রায়ের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।

 

শনিবার ( ৯ ডিসেম্বর) দুপুরে সেই মামলার শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

সুপ্রিম কোর্ট স্পটতই জানিয়ে দিয়েছে; যৌন নিগ্রহের একটি মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ সম্প্রতি যে মন্তব্য করেছে, তা ‘খুবই আপত্তিকর’ এবং একই সঙ্গে অনাবশ্যক। কলকাতা হাই কোর্টে আলোচিত ওই মামলার রায়ে কিশোর-কিশোরীদের যৌন আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন দুই বিচারক।

ওই মন্তব্য নিয়েই আপত্তি তুলে সুপ্রিম কোর্ট বলে, বিচারপতিরা তাদের ব্যক্তিগত মতামত বা দর্শনের ভিত্তিতে এ ধরনের আপত্তিকর মন্তব্য করতে পারেন না। কিন্তু কী কারণে কলকাতা হাই কোর্টের দুই বিচারপতি এমন আপত্তিকর মন্তব্য করলো সেটি চিন্তার বিষয়।

যে মামলাটি নিয়ে এত সমালোচনা ও বিতর্ক, সেই মামলার রায় গত অক্টোবরে দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাস এবং বিচারপতি পার্থসারথি সেনের দ্বৈত ডিভিশনের বেঞ্চ।

তবে ঘটনার সুত্রপাত আরও ৪ মাস আগে। কলকাতা হাই কোর্টে যাতায়াতের পথে প্রতিদিন একজন কমবয়সি মাকে শিশু কোলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাস। উসকোখুসকো চুলের মেয়েটির পরনের মলিন শাড়ি নিয়ে আদালতের বারান্দায় অপেক্ষায় থাকতেন ।

এভাবে কয়েকদিন দেখার পর একদিন মেয়েটিকে এজলাসে ডেকে কথা বলেন বিচারপতি দাস। জানতে চান, তাঁর সমস্যা সম্পর্কে। তিনি কি কোনও মামলা করতে চান বা করেছেন কিনা সে সম্পর্কে।

মেয়েটি বিচারপতি দাসের সামনে দাঁড়িয়ে ঘটনা খুলে বলে। কিন্তু বাংলা না জানায় তার কথার এক বর্ণও প্রথমে বুঝতে পারেননি বিচারপতি দাস। পরে আদালতের এক আইনজীবীর সাহায্য নিয়ে জানতে পারেন, মেয়েটি যৌন নির্যাতিতা, তবে তিনি নির্যাতনকারীর হয়েই কথা বলতে আদালতে এসেছেন । আদালতকে তিনি জানাতে চান, নির্যাতনকারীর কোনো দোষ নেই। তিনি যা করেছেন, তা নিজের সম্মতিতেই করেছেন!

শুনে বিস্মিত হয়েছেন বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাস । নির্যাতিতা জানান, নির্যাতনকারী আসলে তার স্বামী। কোলের সন্তানটি তাঁদের দুজনেরই। পরিবারের অমতে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন দুজন। কিন্তু সে নাবালিকা হওয়ায় তার স্বামীকে পকসো আইনে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

নিম্ন আদালত ভুক্তভোগীর স্বামীকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে তিনি জেলে আছেন, আর এখন জুলাই মাস।

আদালতকে ওই নাবালিকা আরও জানান, গত ১০ মাস স্বামীকে ছাড়া শিশু সন্তান এবং শাশুড়িকে নিয়ে কিভাবে থেকেছেন তিনি। শাশুড়ি ক্যানসারে আক্রান্ত, শেষ স্টেজ। অভিভাবক বলতে এখন তিনিই, এমন পরিস্থিতিতে কোনও বিপদ এলে তাদের সাহায্য করার কেউ নেই।

উপর্জন না থাকায় বাড়িতে তিন জনের খরচ চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতির কারনেই তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন মামলার সমাধান চাইতে।

নির্যাতিতার বক্তব্য শোনার পর এনিয়ে মামলা হয় হাই কোর্টে। মামলা চলাকালীন আদালতকে নির্যাতিতা জানিয়েছেন, আইন সম্পর্কে তাঁরা জানতেন না বলেই ভুল করে ফেলেছেন। জানলে হয়তো করতেন না।

সম্প্রতি সেই মামলাতেই পকসো আইনে ২০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ওই যুবককে বেকসুর খালাস দেন দুই বিচারপতি। একই সঙ্গে নিগৃহীতার উদ্দেশে তারা বলেন, ‘কিশোরীদের নিজের শরীরে অধিকার, সম্মান এবং নিজের মূল্য রক্ষা করতে হবে। যৌন উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, কারণ দুই মিনিটের সুখের জন্য সেই নিয়ন্ত্রণ হারালে তাকে সমাজের চোখে অপরাধী হতে হবে।

নিজের গোপনীয়তা এবং শরীরের অধিকার নিজেকেই রক্ষা করতে হবে। হাই কোর্টের এই নির্দেশ এবং মন্তব্য নিয়েই আপত্তি তুলে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, মামলা শোনার পর ন্যায্য রায়ই দেয়া উচিত বিচারপতিদের। সেই রায় যেন কখনওই বিচারপতির ব্যক্তিগত মতামত বা দর্শন দ্বারা প্রভাবিত না হয়।

সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, হাই কোর্টের রায়ের নথিতে নানা জায়গায় ‘আপত্তিকর এবং অনাবশ্যক’ বক্তব্য রয়েছে। যা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১-এ বর্ণিত কিশোর-কিশোরীদের অধিকারের ‘পরিপন্থী’। স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে দায়ের হওয়া মামলায় নোটিসও দেয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার, অভিযোগকারিণী এবং অভিযুক্তকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App