×

আন্তর্জাতিক

গোলাবর্ষণ আর বিদ্যুৎহীন গাজায় নারীর সন্তান প্রসব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:১৫ পিএম

গোলাবর্ষণ আর বিদ্যুৎহীন গাজায় নারীর সন্তান প্রসব

ছবি: সংগৃহীত

এক মাস আগে গাজার বাসিন্দা জুমানা এমাদ গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে ছিলেন। আনন্দের সঙ্গে সন্তান জন্মের অপেক্ষায় থাকা এই মা তার গর্ভাবস্থার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শেয়ার করেছিলেন। তিনি জানতেন তার একটি মেয়ে হবে। তার স্বামী অনাগত সন্তানের জন্য অধীর অপেক্ষায় ছিলেন, হাসপাতালের ব্যাগ তৈরি ছিল আর তাদের চার বছরের মেয়ে তুলিনের তার বোনের সঙ্গে দেখা করার তর সইছিল না। কিন্তু তারপরই সব বদলে গেল। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় এক হাজার চারশো'র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়, আর ২২৩ ইসরায়েলিকে তারা জিম্মি করে। এর পাল্টা জবাবে গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত আট হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জুমানা গণমাধ্যমকে বলেন, আমি ভয়ে ছিলাম, টানা গোলাগুলির মধ্যেই আমার প্রসব যন্ত্রণা ওঠে। গাজার উত্তরাঞ্চল ছেড়ে যাওয়ার ইসরায়েলি নির্দেশনা মেনে বাড়ি ছাড়েন ২৫ বছর বয়সী এই ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। ইসরায়েলের হামলা শুরুর দুই দিন পর তিনি গাজা শহর ছেড়ে দক্ষিণ দিকে চলে যান। ভীত ও নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা জুমানা তার মেয়েকে এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যান। সঙ্গে নেন মেয়ের জন্য কেবল একটা কাপড়, এক প্যাকেট দুধ আর একটা ছোট ব্যাগ। তিনি বলেন, আমরা রাতে ঘুমাইনি। সেখানে প্রচুর গোলাবর্ষণ হওয়ায় আমাদের অন্য জায়গায় যেতে হয়েছিল। আমার মতো গর্ভবতী নারীদের হাঁটতে বের হওয়া উচিত কিন্তু যুদ্ধের কারণে আমরা খাবার কিনতেও বাইরে যেতে পারছি না। এই কঠিন পরিস্থিতিতে সন্তান জন্ম দেয়া নিয়ে ভয় আর উদ্বেগের পাশাপাশি বারবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়া, ইন্টারনেট বিঘ্নিত হওয়া ও পানি স্বল্পতার কথা বলেছিলেন জুমানা। তেরোই অক্টোবর শুক্রবার জুমানার প্রসব বেদনা শুরু হয়। তার পরিকল্পনা ছিল গাজা শহরের একটি বড় হাসপাতাল আল-শিফায় যাওয়া, কিন্তু তাকে জানানো হয় যে হাসপাতালের অবস্থা খুবই কঠিন। তার পরিবর্তে গাজা উপত্যকার মাঝখানে নুসেইরাতের একটি ছোট হাসপাতাল আল-আওদায় যান জুমানা। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোও কঠিন ছিল। প্রসব যন্ত্রণার মধ্যে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাউকে খুঁজে পেতেও হিমশিম খাচ্ছিলেন জুমানা।ট্যাক্সি চালকরা ভীত ছিলেন আর মা হতে যাওয়া একজন নারীর জন্য অ্যাম্বুলেন্সও ছিল না। প্রসব বেদনার সময়টিকে কঠোর ও ভয়ঙ্কর হিসেবে বর্ণনা করেন জুমানা।হাসপাতালের পাশের একটি বাড়িতে তীব্র গোলাবর্ষণ হচ্ছিল, আর সেই শব্দ এতোটাই জোরে ছিল যে আমি ভেবেছিলাম গোলাগুলি হাসপাতালেই হচ্ছিল। অনবরত আহত মানুষরা আসছিল। আমি চারদিক থেকে চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি আমার বড় মেয়ের কথাও ভাবছিলাম। সে আমার থেকে দূরে থাকায় তাকে নিয়ে চিন্তিত ছিলাম।আমি কেবল ভেবেছিলাম যাই হোক না কেন আমি আমার সন্তানকে জন্ম দিতে চাই। সেদিনই সন্ধ্যার কয়েক ঘণ্টা পর একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন জুমানা। তিনি তার নাম রাখেন তালিয়া। সেই সময়ের অনুভূতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, তার কান্না শুনে মনে হচ্ছিল তখনও আমরা সবাই বেঁচে আছি। প্রসবের পরপরই জুমানার জন্য কোনও বিছানা পাওয়া যায়নি। ব্যথা ও রক্তপাতের মধ্যেই তাকে একটি বিছানা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছিল। আমি ভাগ্যবান ছিলাম যে আমার জন্য একটি বিছানা পাওয়া গিয়েছিল, অন্য নারীরা সন্তান জন্ম দেয়ার পর হাসপাতালের করিডোরের সোফা আর মেঝেতে শুয়েছিল, বলেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App