ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের নজিরবিহীন হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে ইসরাইল। এই ব্যর্থতার জেরে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিদায় ঘণ্টা বাজতে পারে। অন্তত ইসরাইলি ইতিহাস এ কথাই বলছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এমনটাই উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন পর্যালোচনায় বলা হয়, তিন দশকের বেশি সময় ধরে ইসরাইলি রাজনীতিতে আছেন নেতানিয়াহু। এই সময়কালে তিনি কিছু ‘ডাকনাম’ অর্জন করেছেন। যেমন-পরাজয়ের মুখ থেকে বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার অদ্ভুত ক্ষমতার জন্য নেতানিয়াহু ‘দ্য ম্যাজিশিয়ান’ নাম পেয়েছেন। আবার ইসরাইলি রাজনীতিতে অন্য কারও চেয়ে বেশি সময় ধরে সক্রিয় থাকার জন্য নেতানিয়াহু পেয়েছেন ‘কিং বিবি’ নাম।

নেতানিয়াহুর আরেকটি ডাকনাম আছে—‘মিস্টার সিকিউরিটি’। এই নাম তিনি উপভোগ করে আসছিলেন। তবে এখন তার এই ডাকনাম প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

গত শনিবার (৭ অক্টোবর) সকালে ইসরাইলে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় হামলা চালায় হামাস। ফিলিস্তিনের গাজা থেকে ইসরাইলে কয়েক হাজার রকেট ছোড়ে তারা। একই সঙ্গে ইসরাইলি ভূখণ্ডে ঢুকে তারা হামলা চালায়, অনেককে জিম্মিও করে।

হামাসের হামলায় এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ ইসরাইলি নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। অন্যদিকে গাজায় ইসরাইলের পালটা হামলায় ৯০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

ইসরাইলে হামাসের এক হাজারের বেশি যোদ্ধা কীভাবে এত বড় হামলা চালাতে সক্ষম হলেন, তা এখনো অস্পষ্ট। হামাসের হামলার মাত্রায়, ভয়াবহতায় ইসরাইল হতভম্ব। ইসরাইলের সাবেক প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগ লিখেছেন, হলোকাস্টের পর একদিনে এত বেশিসংখ্যক ইহুদি আর কখনো প্রাণ হারান নি।

আপাতত ইসরাইলের বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানাচ্ছে না। ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান বিরোধী নেতা ইয়ার লাপিদ বলেছেন, কাকে দায়ী করা হবে, তা নিয়ে এখন তারা আলোচনা করছেন না। কারণ এখন এই আলোচনার সময় নয়।

সিএনএনের বিশ্লেষণে বলা হয়, তবে সেই সময় আসবে। ইসরাইলের চ্যানেল ১২-এর প্রধান রাজনৈতিক ভাষ্যকার অমিত সেগালের মতে, এ ঘটনার জেরে নেতানিয়াহুর প্রধানমন্ত্রিত্ব যদি টিকে যায়, তা হলে তিনি অবাকই হবেন। আর তেমনটা হলে তা একটি নজির স্থাপন করবে।

অমিত সেগাল সিএনএনকে বলেন, ‘ইসরাইলের ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে যে প্রতিটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ও সংকট সরকারকে পতনের দিকে নিয়ে গেছে।’

ইতিহাসের নজির হিসেবে ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর গোল্ডা মেয়ার, ১৯৮২ সালে প্রথম লেবানন যুদ্ধের পর মেনাখেম বেগিন এবং ২০০৬ সালের দ্বিতীয় লেবানন যুদ্ধের পর এহুদ ওলমার্টের সরকারের পতনের কথা বলেন অমিত সেগাল।

উপাদানগুলো টেনে অমিত সেগাল বলেন, এখন নেতানিয়াহুর ক্ষেত্রে ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করছে।