×

আন্তর্জাতিক

অত্যাধুনিক পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষার দাবি পুতিনের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:২৮ পিএম

অত্যাধুনিক পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষার দাবি পুতিনের

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের ‘চূড়ান্ত সফল পরীক্ষা’ চালানোর দাবি করেছেন। ‘বুরভেস্টনিক’ নামের এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা আগে অনেকবার ব্যর্থ হওয়ার খবর এসেছিলো।

যদিও ‘বুরভেস্টনিক’ নামে পরিচিত এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষার বিষয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের একটি রিপোর্টকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তার মুখপাত্র। তবে তিনি প্রত্যাখ্যান করার কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই দাবি করলেন পুতিন। খবর বিবিসির।

২০১৮ সালে প্রথম এই পরীক্ষামূলক অস্ত্রের কথা ঘোষণা করা হয়েছিলো, যেটি তার সীমাহীন পাল্লা বা মাত্রার জন্য বিশেষভাবে প্রশংসিত। অর্থাৎ এর মাত্রা নির্দিষ্ট করা নয়।

তবে সরকারিভাবে এর সক্ষমতা সম্পর্কে কমই জানা যায়। তবে এর আগে এর পরীক্ষাগুলো ব্যর্থ হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছিলো।

প্রেসিডেন্ট পুতিনের বক্তব্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি এবং রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও এখন পর্যন্ত কোন বক্তব্য আসেনি।

যদিও উপগ্রহ থেকে তোলা কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছিলো গত মাসে যেখানে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে সোভিয়েত যুগে পরমাণু পরীক্ষা চালানো হতো এমন একটি প্রত্যন্ত দ্বীপ এলাকায় রাশিয়া নতুন করে কিছু স্থাপনা নির্মাণ করছে।

ওই ছবি গুলোতে দেখা যায় যে বারেন্টস সাগরের উত্তরাঞ্চলে নোভায়া জেমলিয়া দ্বীপপুঞ্জে কিছু নির্মাণ কাজ চলছে।

আমরা অত্যাধুনিক কৌশলগত অস্ত্রের কাজ শেষ করে এনেছি। যেটা সম্পর্কে আমি আগেই বলেছি এবং কয়েক বছর আগে ঘোষণা দিয়েছিলাম, পুতিন সোচির কৃষ্ণ সাগর রিসোর্টে এক সভায় বলছিলেন। সভাটি রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক মাত্রার পারমাণবিক শক্তিধর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র-বুরভেস্টনিকের চূড়ান্ত সফল পরীক্ষা চালানো হয়েছে।

বুরভেস্টনিক ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে যা জানা যায় তা হলো এটা শুধু পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম নয়, বরং এটি নিজেই পারমাণবিক শক্তিধর-যা সামুদ্রিক পাখির মতো খুব নীচ দিয়েও উড়ে যেতে সক্ষম।

নেটো এই ক্ষেপণাস্ত্রের কোডনেম দিয়েছে ‘স্কাইফল’। এটি নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর চালিত, যা সলিড ফুয়েল রকেট বুস্টারের মাধ্যমে নিক্ষেপের পর সক্রিয় হওয়ার কথা।

নিউইয়র্ক টাইমস অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রচারণায় নিয়োজিত ‘দি নিউক্লিয়ার থ্রেট ইনিশিয়েটিভ’কে উদ্ধৃত করে বলেছে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এর অন্তত তেরটির পরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছিলো।

পুতিন অবশ্য বলেছেন সারমাত নামের আন্ত:মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের কাজও এখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।

তিনি গত বছর বলেছিলেন, সারমাত নামের পরমাণু বোমা বহনকারী আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি বিশ্বের সবচেয়ে সেরা এবং এটি বিশ্বের যেকোনো ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পরাস্ত করতে সক্ষম।

পশ্চিমা গণমাধ্যমে সারমাত ক্ষেপণাস্ত্রটিকে "সেটান টু" বা শয়তান দুই নামে অভিহিত করে আসছে।

তবে এসব ঘোষণা সত্ত্বেও পুতিন জানিয়েছেন যে রাশিয়ার ঘোষিত পরমাণু ডকট্রিন বদলানোর কোন চিন্তা ভাবনা নেই-অর্থাৎ আক্রমণের শিকার হলে বা কেবল বাধ্য হলেই এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হতে পারে।

তিনি বলেন, রাশিয়ার অস্তিত্ব হুমকির মুখে নয় এবং কোন সুস্থ মানুষই রাশিয়ার বিরুদ্ধে পরমাণু আক্রমণের চিন্তা করতে পারে না।

তবে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা নিষিদ্ধ করতে করা ১৯৯৬ সালের চুক্তির অনুসমর্থন তার দেশ প্রত্যাহার করতে পারে।

তার যুক্তি হলো যুক্তরাষ্ট্র এটিতে স্বাক্ষর করলেও এখনো র‍্যাটিফাই বা অনুসমর্থন করেনি। সে কারণেই রাশিয়াও একই পথে এগুতে চায়।

পুতিন সম্প্রতি বিমান দুর্ঘটনায় ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিনসহ নিহতদের সম্পর্কে বলেছেন যে তাদের শরীরে হ্যান্ড গ্রেনেডের টুকরো পাওয়া গেছে। তদন্ত কমিটির প্রধান আমাকে তার রিপোর্ট দিয়েছেন।

তিনি অবশ্য ব্যাখ্যা দেননি যে কিভাবে বিমানে থাকা অবস্থায় গ্রেনেড বিস্ফোরণ হতে পারে। তবে তিনি বলেছেন যে তার চিন্তা ছিলো যে তদন্তকারীরা নিহতদের শরীরে অ্যালকোহল বা মাদকের বিষয়ে তদন্ত করবেন।

তবে ওই বিমান দুর্ঘটনা সম্পর্কে সরকারি কোন রিপোর্ট এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে যা জানা যায় ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন এই ক্ষেপণাস্ত্রের সমকক্ষ আর একটিও এখন পৃথিবীতে নেই এবং আসছে বহু বছরেও তা হবে না।

এটি আসলেই একটি অদ্বিতীয় অস্ত্র। এটি রাশিয়ার যুদ্ধের সক্ষমতা অনেক শক্তিশালী করবে। যারা ক্ষিপ্তভাবে উগ্র ও আগ্রাসী কথাবার্তা বলে রাশিয়াকে হুমকি দেবার চেষ্টা করছে তাদের এখন থেকে দ্বিতীয়বার চিন্তা করতে হবে।

বহু বছর ধরে চলেছে ক্ষেপণাস্ত্রটি তৈরির কাজ। বেশ কবার এর উৎক্ষেপণ পেছানোর পর ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার দুই মাসের মাথায় এর সফল পরীক্ষা চালানো হয়েছিলো।

বহু বছর চেষ্টার পর ক্ষেপণাস্ত্রটির উৎক্ষেপণ রাশিয়ার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে তখন বলা হয়েছিলো, এটি চলার পথ পরিবর্তন করে তার লক্ষ্যে আঘাত করতে পারে। এটি উৎক্ষেপণ করতে যে যানটি সাহায্য করে সেটি শব্দের চেয়ে বেশি গতিতে চলে। এর ওয়ারহেডগুলো আলাদা আলাদা লক্ষে আঘাত হানতে পারে। এতে যে কটি ওয়ারহেড রয়েছে, যে গতিতে এটি যাত্রা করে তাতে সারমাত বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ক্ষেপণাস্ত্র। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম। রাশিয়ার মিসাইল রেজিমেন্টকে নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সমৃদ্ধ করার কাজ চলমান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App