×

আন্তর্জাতিক

কেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাননি মহাত্মা গান্ধী?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১১:৩৩ এএম

কেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাননি মহাত্মা গান্ধী?

মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। ভারতের এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তি। নোবেল পুরস্কারের জন্য একাধিকবার নাম সামনে আসলেও কোনোবারই নোবেল শান্তি পুরস্কার পাননি মহাত্মা গান্ধী। অহিংস আন্দোলনের জন্য বিশ্বনন্দিত এই নেতাকে কেন নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়নি? তার জন্মদিন (২ অক্টোবর) উপলক্ষে সেই ইতিহাস ও অজানা সব তথ্য তুলে ধরেছে নোবেল পুরস্কারের দায়িত্ব প্রাপ্ত প্যানেল।

সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ নোবেল প্রাইজ প্যানেল জানিয়েছে, ১৯৩৭, ১৯৩৮, ১৯৩৯, ১৯৪৭ এমন কী মৃত্যুর কয়েকদিন আগে ১৯৪৮ সালেও নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মহাত্মা গান্ধীর নাম মনোনীত করা হয়। কিন্তু একবারও তার হাতে পুরস্কার ওঠেনি। ১৯৪৮ সালে হত্যার আগে গান্ধীকে শান্তি পুরস্কার না দেয়ার সিদ্ধান্তও বড় ভুল বলে মনে করেন অনেকে।

নোবেল প্রাইজ প্যানেলের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৩৭ সালে নরওয়ের সংসদের এক সদস্য ওলে কোলবজর্নসেন প্রথমবার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মহাত্মা গান্ধীর নাম প্রস্তাব করেন। সম্ভাব্য পুরস্কার প্রাপক হিসেবে চূড়ান্ত ১৩ জনের তালিকাতেও নাম ছিল মহাত্মা গান্ধীর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার হাতে ওঠেনি নোবেল শান্তি পুরস্কার। কারণ পুরস্কার প্রাপকের নাম বেছে নেয় যে প্যানেল, সেখানে মহাত্মা গান্ধীর সমালোচকদের বক্তব্য ছিল, গান্ধীর বেশ কিছু অহিংস আন্দোলনই পরবর্তী সময়ে হিংসাত্মক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ১৯২০-২১ সালে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন গোরক্ষপুরে বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মীকে হত্যা করে উন্মত্ত জনতা।

আবার নোবেল শান্তি পুরস্কার প্যানেলের কয়েকজন সদস্যের মত ছিল, গান্ধীর নীতি বা মতাদর্শ ভারতীয় পরিস্থিতির জন্য উপযুক্ত ছিল, কিন্তু তা গোটা বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য নয়। নোবেল কমিটির পরামর্শদাতা জেকব এস ওর্ম মুলার দাবি করেছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকাতেও তার দীর্ঘ অহিংস আন্দোলনও মূলত ছিল ভারতীয়দের জন্যই।

১৯৩৮ এবং ১৯৩৯ সালে ফের মহাত্মা গান্ধীর নাম নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। কিন্তু দুবারই তার নাম বাদ দেয় নোবেল কমিটি। এর প্রায় দশ বছর পরে ১৯৪৭ সালে নোবেল কমিটির বেছে নেয়া ছয় জনের তালিকায় নাম ছিল মহাত্মা গান্ধীর। কিন্তু সেই সময় ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের পরিবেশে পাঁচ জনের কমিটির মধ্যে তিন জনই মহাত্মা গান্ধিকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়ার বিপক্ষে ছিলেন।

এর পর ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি খুন হন মহাত্মা গান্ধী। এর ঠিক দুদিন পরই ছিল নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য নাম প্রস্তাব করার শেষ দিন। দেখা যায়, মহাত্মা গান্ধীকে শান্তি পুরস্কার দেয়ার প্রস্তাবসহ ছটি চিঠি নোবেল কমিটির কাছে জমা পড়েছে। যারা মহাত্মা গান্ধীর নাম প্রস্তাব করেছিলেন, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপকও ছিলেন।

কিন্তু সেই সময় মরণোত্তর নোবেল শান্তি পুরস্কার কেউ পাননি। নোবেল ফাউন্ডেশনের তৎকালীন বিধি অনুযায়ী, নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্রেই মরণোত্তর নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়ার সুযোগ ছিল।

নরওয়ের নোবেল ইনস্টিটিউট-এর ডিরেক্টর অগাস্ট স্কোউ এ নিয়ে সুইডেনের পুরস্কার প্রদানকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মতামত চান। তারা জানায়, মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যুর আগে যদি তাকে মরণোত্তর নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা হত, তা হলে কিছু বলার ছিল না। কিন্তু মৃত্যুর ঠিক পরে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক হবে না বলেই মত দেয় ওই প্রতিষ্ঠানগুলো। শেষ পর্যন্ত ১৯৪৮ সালে কাউকেই নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়নি। কারণ নরওয়ের নোবেল কমিটির মনে হয়েছিল, ওই সময় এই পুরস্কারের যোগ্য প্রাপক কেউ ছিলেন না।অনেকেই মনে করেন মহাত্মা গান্ধীর নাম নোবেল প্রাপকদের তালিকায় থাকা উচিত ছিল, সম্ভবত সেই আবেগকে সম্মান দিয়েই নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপকদের তালিকায় একটি জায়গা মহাত্মা গান্ধিকে সম্মান জানিয়েই ফাঁকা রেখে দেয়া হয়েছিল।

এদিকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত কেবলমাত্র আমেরিকান এবং ইউরোপিয়ানদেরই নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হত। নোবেল পুরস্কার দেয়ার সঙ্গে যুক্ত প্যানেলও জানায়, মহাত্মা গান্ধী অতীতের নোবেল পুরস্কার জয়ীদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি কোনও রাজনীতিবিদ অথবা আন্তর্জাতিক আইন নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিত্ব ছিলেন না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App