×

আন্তর্জাতিক

কারাবাখ থেকে আতঙ্কে পালাচ্ছে আর্মেনীয়রা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৭ এএম

কারাবাখ থেকে আতঙ্কে পালাচ্ছে আর্মেনীয়রা

আজারবাইজান সামরিক অভিযান চালিয়ে বিতর্কিত অঞ্চল নাগোরনো-কারাবাখের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়ার পর এলাকাটি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার জাতিগত আর্মেনীয় নাগরিক।

আজারবাইজানের নিয়ন্ত্রণে থাকতে অনিচ্ছুক এসব আর্মেনীয়দের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার ইতোমধ্যেই আর্মেনিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন। খবর বিবিসির।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজারবাইজান এলাকাটি দখলে নেয়ার পর প্রায় ৩০ হাজার জাতিগত আর্মেনীয় নাগরিক নাগোরনো-কারাবাখ থেকে পালিয়ে গেছে। এটি গত সপ্তাহে আজারবাইজানের দখল করা এই ছিটমহলের জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ।

কারাবাখ থেকে আর্মেনিয়ার দিকে যাওয়ার রাস্তায় শত শত গাড়ির লাইনও পড়ে গেছে। আজারবাইজান বলছে, তাদের অধীনে কারাবাখের বাসিন্দারা নিরাপদ থাকবে, কিন্তু আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দাবি, সেখানে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ শুরু হয়ে গেছে।

নাগোরনো-কারাবাখ আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অংশ হিসাবে স্বীকৃত হলেও গত তিন দশক ধরে জাতিগত আর্মেনিয়ানদের শাসনে এই অঞ্চলটি পরিচালিত হয়ে আসছিল। গত সপ্তাহে ককেশাস অঞ্চলের দেশ আজারবাইজান বিতর্কিত এই অঞ্চলে সামরিক অভিযান চালায়।

এই ভূখণ্ডের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বাকুর সামরিক অভিযান শুরু করার ২৪ ঘণ্টা পর নাগোরনো-কারাবাখের আর্মেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর সদস্যরা আত্মসমর্পণ এবং অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে রাজি হয়। গত বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টা থেকে ওই চুক্তি কার্যকর হয়।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, নাগোরনো-কারাবাখে আর্মেনিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীকে নিরস্ত্র এবং ভেঙে দেয়া হবে। সর্বশেষ এই সংঘাতে অন্তত ২০০ জাতিগত আর্মেনিয়ান এবং কয়েক ডজন আজারবাইজানি সৈন্য নিহত হয়েছে।

আজারবাইজান বলছে, তারা কারাবাখের জাতিগত আর্মেনিয়ানদের দেশের নাগরিক হিসাবে সমান অধিকার নিশ্চিত করতে চায়। প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভও এই অঞ্চলে বসবাসরত জাতিগত আর্মেনিয়ানদের অধিকার ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু বছরের পর বছর ধরে চলা সংঘাতে নানা ঘৃণামূলক বক্তব্য এবং সহিংসতা সেখানে গভীর দাগ ফেলেছে।

মুসলিম প্রধান আজারবাইজান অবশ্য এটিও বলেছে, আর্মেনীয়রা- যারা খ্রিস্টান- তারা চাইলে নাগোরনো-কারাবাখ থেকে চলে যেতে পারে।

মঙ্গলবার সীমান্ত অতিক্রম করার সময় হাজার হাজার জাতিগত আর্মেনিয়ান আজারবাইজানি সীমান্তে কঠোর তল্লাশির মুখে পড়েন। আজারবাইজানীয় কর্তৃপক্ষ ‘যুদ্ধাপরাধে’ জড়িত সন্দেহভাজনদের খোঁজ করছে বলে দাবি করেছে।

আজারবাইজানের একটি সরকারি সূত্র বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, কারাবাখে নিজেদের অস্ত্র জমা দেয়া আর্মেনিয়ান যোদ্ধাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করতে চায় তারা। তবে কারাবাখ যুদ্ধের সময় যারা যুদ্ধাপরাধ করেছে তাদের অবশ্যই আমাদের হাতে তুলে দিতে হবে।

এই পরিস্থিতিতে শত শত গাড়ি ও বাস সীমান্তের ওপারে আর্মেনিয়ার গোরিস শহরে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

এদিকে মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভকে ‘বেসামরিক নাগরিকদের জন্য নিঃশর্ত নিরাপত্তা এবং চলাফেরার স্বাধীনতা’ প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন এবং ‘নাগোরনো-কারাবাখে মানবিক সহায়তার বাধাহীন প্রবেশাধিকার’ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

অন্যদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও উভয় পক্ষকে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন।

বিবিসি বলছে, কারাবাখের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়া এবং নিরস্ত্রীকরণে সম্মত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৭০ টন খাদ্য বিতরণের অনুমতি দেয়া হয়েছে। আজারবাইজান ঘোষণা করেছে, আরও ৪০ টন ময়দা এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সরঞ্জামসহ আরেকটি কনভয় এই অঞ্চলের দিকে যাচ্ছে।

অবশ্য জাতিগত আর্মেনিয়ান নেতারা বলছেন, হাজার হাজার মানুষ এখন খাবার বা আশ্রয়হীন এবং তারা বেসমেন্ট, স্কুল ভবন বা বাইরে ঘুমাচ্ছেন। এছাড়া মঙ্গলবার আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের রাষ্ট্রদূত ইউরোপীয় ইউনিয়ন মধ্যস্ততায় আলোচনার জন্য ব্রাসেলসে মিলিত হন।

বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান কয়েক দশক ধরে বিবাদে লিপ্ত রয়েছে। নাগোরনো-কারাবাখ আজারবাইজানের ভূখণ্ডের ভেতরে অবস্থিত হলেও ১৯৯৪ সালের এক যুদ্ধের পর থেকে আর্মেনিয়ার সমর্থনে জাতিগত আর্মেনীয় বাহিনী ওই অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল।

ইতোমধ্যে নাগোরনো-কারাবাখ ঘিরে দুই প্রতিবেশী আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়া অন্তত দুবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর প্রথমবার যুদ্ধে জড়ায় দেশ দুটি।

সাবেক সোভিয়েত এ দুই রাষ্ট্র বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে ২০২০ সালে ফের প্রাণঘাতী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। দুই দেশের সৈন্যদের হামলা-পাল্টা হামলায় সেই যুদ্ধে উভয়পক্ষের সাড়ে ৬ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

যুদ্ধের পর আর্মেনিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া নাগোরনো-কারাবাখে কয়েক হাজার শান্তিরক্ষী মোতায়েন করে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেখান থেকে শান্তিরক্ষীদের পরে প্রত্যাহার করে নেয় মস্কো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App