×

আন্তর্জাতিক

বাইডেনের ২০ কেজি ওজনের ব্রিফকেসে কী আছে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:১৫ পিএম

বাইডেনের ২০ কেজি ওজনের ব্রিফকেসে কী আছে?

বাইডেন বা ট্রাম্পের মতো নির্দিষ্ট কেউ নন, আমেরিকার সব প্রেসিডেন্টের সঙ্গেই সর্বক্ষণ থাকে এই ২০ কেজির কালো ব্রিফকেস।

বাইডেনের ২০ কেজি ওজনের ব্রিফকেসে কী আছে?

এই ব্রিফকেসের নাম হলো ‘নিউক্লিয়ার ফুটবল’

বাইডেনের ২০ কেজি ওজনের ব্রিফকেসে কী আছে?

আমেরিকান প্রেসিডেন্ট যদি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে একমাত্র তাঁর নির্দেশে এই ব্রিফকেস খোলা হবে।

হেঁটে যাচ্ছেন কালো কোট, কালো বুট পরা প্রেসিডেন্ট। তার ঠিক পিছনে কিছুটা দূরত্বে হাঁটছেন আরো একজন। তারও পরনে স্যুট-বুট। তবে এই পিছনের ব্যক্তির হাতের দিকে তাকালে চোখ আটকে যেতে বাধ্য। মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওই সহকারির হাতে ঝোলানো কালো রঙের একটি ব্রিফকেস। ওজন প্রায় ২০ কেজি। কালোর উপর সোনালি রঙের তালাটিও চোখে পড়ার মতো। কথা হচ্ছে আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে নিয়ে। বাইডেন বা ট্রাম্পের মতো নির্দিষ্ট কেউ নন, আমেরিকার সব প্রেসিডেন্টের সঙ্গেই সর্বক্ষণ থাকে এই ২০ কেজির কালো ব্রিফকেস। ব্রিফকেসটি বহন করার দায়িত্বে থাকেন একজন সামরিক কর্মী। এই ব্রিফকেসের নাম হলো ‘নিউক্লিয়ার ফুটবল’। আমেরিকার রাজনীতিতে এই বিশেষ ‘ফুটবলের’ অনেক তাৎপর্য রয়েছে। খেলাধুলার ফুটবলের সঙ্গে নিউক্লিয়ার ফুটবলের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একটি ব্রিফকেস, যার মধ্যে লুকনো আছে আমেরিকার পরমাণু হানার মন্ত্র। [caption id="attachment_463575" align="aligncenter" width="2000"] এই ব্রিফকেসের নাম হলো ‘নিউক্লিয়ার ফুটবল’[/caption] মার্কিন প্রেসিডেন্টের ব্রিফকেসে যা যা আছে উপাদান বেশি নয়। মাত্র চারটি। দু’টি বই, একটি ফাইল এবং একটি কার্ড। তা দিয়েই যে কোনও মুহূর্তে পরমাণু আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হতে পারেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। নিউক্লিয়ার ফুটবলের প্রথম উপাদানের নাম ‘দ্য ব্ল্যাক বুক’। এই বইয়ের দৈর্ঘ্য ১২ ইঞ্চি, প্রস্থ ৯ ইঞ্চি। এতে রয়েছে-কালো এবং লাল রঙে ছাপা ৭৫টি খোলা পাতা। শত্রুকে কীভাবে আক্রমণ করা যায়, তারই কিছু বিকল্প এই বইতে রয়েছে। ব্রিফকেসের দ্বিতীয় উপাদান আরো একটি বই। এর আকারও ‘ব্ল্যাক বুক’-এর মতোই। এই বইতে তালিকার আকারে রয়েছে নিরাপদ কিছু ঠিকানা, জরুরি পরিস্থিতিতে যেখানে প্রেসিডেন্ট আশ্রয় নিতে পারেন। এই বইয়ের পৃষ্ঠাগুলি সম্পূর্ণ কালো রঙে ছাপা। নিউক্লিয়ার ফুটবলে রয়েছে একটি ফাইল, যার নাম ম্যানিলা ফোল্ডার। এতে আট থেকে দশটি খোলা পাতা পিন করা রয়েছে। আপৎকালীন সতর্কতা ব্যবস্থা (এমার্জেন্সি অ্যালার্ট সিস্টেম) ব্যবহারের বর্ণনা রয়েছে এই ফাইলে। এছাড়াও প্রেসিডেন্টের ব্রিফকেসে একটি ছোট কার্ড থাকে। তার দৈর্ঘ্য ৫ ইঞ্চি, প্রস্থ ৩ ইঞ্চি। এই কার্ডে বিভিন্ন অথেন্টিকেশন কোড লেখা থাকে। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট যদি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে একমাত্র তাঁর নির্দেশে এই ব্রিফকেস খোলা হবে। সঙ্গে সঙ্গে সতর্কবাণী পৌঁছে যাবে দেশের প্রতিরক্ষা প্রধানের কাছে। ‘বিস্কুট’ নামের একটি প্লাস্টিকের কার্ডে লেখা বিশেষ কিছু কোড রয়েছে। সেই সংকেতের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের পরিচয় যাচাই করবেন আমেরিকার সেনাকর্তারা। নির্দেশদানকারীর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হলে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করা ছাড়া প্রতিরক্ষা প্রধানের সামনে আর কোনো উপায় থাকে না। পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করার প্রতি ধাপে নিরাপত্তা সংক্রান্ত একাধিক স্তর পেরিয়ে আসতে হয়। বারংবার যাচাই না করে কোনো পদক্ষেপ করা যায় না। একমাত্র প্রেসিডেন্টই পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিতে পারেন। আর কারো সেই ক্ষমতা নেই। আমেরিকার আইন অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের হাতেই পরমাণু আক্রমণের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে আইনে এ-ও বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট কোনও বেআইনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। যদি তাঁর সিদ্ধান্ত বেআইনি হয়, সেনারা তা অমান্য করতে পারেন। [caption id="attachment_463576" align="aligncenter" width="960"] আমেরিকান প্রেসিডেন্ট যদি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে একমাত্র তাঁর নির্দেশে এই ব্রিফকেস খোলা হবে।[/caption] আমেরিকার ছ’টি সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি শাখা থেকে এক জন করে পালা অনুযায়ী নিউক্লিয়ার ফুটবল বহন করে থাকেন। এই বহনকারী বার বার পরিবর্তিত হয়। কে কখন এই দায়িত্ব পাবেন, কেউ ঘুণাক্ষরেও আগে থেকে টের পান না। আমেরিকার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নিউক্লিয়ার ফুটবলের সংখ্যা অবশ্য একটি নয়। একই ধরনের তিনটি ব্রিফকেস রয়েছে। একটি প্রেসিডেন্ট এবং একটি ভাইস প্রেসিডেন্টের কাছে থাকে। যদিও এ সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন প্রেসিডেন্টই। কোনও কারণে প্রেসিডেন্ট সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম হলে ভাইস প্রেসিডেন্টের হাতে সেই ক্ষমতা হস্তান্তরিত হবে। এ ছাড়া, তৃতীয় ফুটবলটি রাখা থাকে আমেরিকার প্রশাসনিক দফতর হোয়াইট হাউসে। ফুটবলের মধ্যের কার্ডটিতে যে সংকেত লেখা থাকে, একমাত্র প্রেসিডেন্টই তা ব্যবহার করতে পারেন। নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট বদল হলে নিজে থেকেই সঙ্কেতগুলি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য আবার তা সক্রিয় করা হয়। পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করার মতো পরিস্থিতি সাধারণত আসে না। অতি সন্তর্পণে এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয় প্রেসিডেন্টকে। কারণ পরমাণু আক্রমণের অর্থই হল সার্বিক ধ্বংস।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App