×

আন্তর্জাতিক

মরক্কোতে মৃতের সংখ্যা ছাড়ালো ২ হাজার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:২৩ এএম

মরক্কোতে মৃতের সংখ্যা ছাড়ালো ২ হাজার
মরক্কোতে মৃতের সংখ্যা ছাড়ালো ২ হাজার

ছবি: বিবিসি

উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কোতে বিগত ছয় দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী এক ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এতে নিহতের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য জানায় তারা। খবর বিবিসির।

স্মরণকালের ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে আহত হয়েছেন তিন হাজারের মতো মানুষ। ধ্বংস হয়েছে অসংখ্য বাড়িঘর। গত শুক্রবার গভীর রাতে মরক্কোর মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ওই শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে।

মরক্কোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূমিকম্পে আহত ২ হাজার মানুষের মধ্যে ১৪০০ জনেরও বেশি মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন। আর সবচেয়ে বেশি হতাহত হয়েছেন মারাক্কেশের দক্ষিণে অবস্থিত প্রদেশগুলোতে। ভয়াবহ এই ভূমিকম্প ও হতাহতের ঘটনায় রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদ দেশটিতে তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন এবং বেঁচে যাওয়াদের আশ্রয়, খাবার ও অন্যান্য সাহায্য দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অবশ্য ভূমিকম্পে বাড়িঘর হারিয়ে অনেকেই তাদের টানা দ্বিতীয় রাত খোলা জায়গায় কাটাচ্ছেন।

ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে থেকে জানা যায়, শুক্রবার রাতে আঘাত হানা ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মারাক্কেশ শহর থেকে ৭১ কিলোমিটার দূরে এটলাস পর্বতমালা এলাকার ১৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার গভীরে। স্থানীয় সময় রাত ১১.১১ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন।

এছাড়া ভূমিকম্পটির ১৯ মিনিট পর আবারও ৪ দশমিক ৯ মাত্রার ভূ- কম্পন অনুভূত হয়। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বেশ কিছু গ্রাম পুরোপুরি সমতল হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। এছাড়া রাজধানী রাবাতের পাশাপাশি কাসাব্লাঙ্কা, আগাদির এবং এসসাউইরাতেও কম্পন অনুভূত হয়।

মরক্কোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, দেশটির আল হাউজ প্রদেশে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, আর এর পরে রয়েছে তারউদান্ত প্রদেশ। মারাক্কেশে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম, যদিও ইউনেস্কো-সুরক্ষিত পুরোনো এই শহরটিও ভূমিকম্পে যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

পাহাড়ের গ্রামগুলোতে সাধারণ মাটির ইট, পাথর এবং কাঠের তৈরি বাড়িগুলো ভেঙে পড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ধ্বংসের মাত্রা মূল্যায়ন করতে কিছুটা সময় লাগবে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত একটি গ্রাম থেকে বিবিসির রিপোর্টার নিক বেক বলছেন, আফটারশকের আশঙ্কায় অনেক লোক সেখানে রাতের (ঘুমানোর) জন্য ক্যাম্পিং করছে।

জাতিসংঘ বলেছে, তারা মরক্কো সরকারকে উদ্ধার প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে প্রস্তুত। এছাড়া স্পেন, ফ্রান্স এবং ইসরায়েলসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে একই ধরনের প্রতিশ্রুতি এসেছে।

এছাড়া প্রতিবেশী আলজেরিয়ার সঙ্গে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মরক্কোর বৈরী সম্পর্ক থাকলেও ভূমিকম্পের পর এখন মরক্কোতে মানবিক সহায়তাবাহী ফ্লাইটের জন্য দেশটি তার আকাশসীমা খুলে দিয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, তাদের খাদ্য ও পানির তীব্র সংকট রয়েছে। কিন্তু এই ধরনের জায়গায় খাবার ও পানি পৌঁছানো কঠিন। মূলত পাহাড়ি রাস্তাগুলোতে পাথর এবং অন্যান্য ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকায় জরুরি পরিষেবার দলগুলোর জন্য সেখানে পৌঁছানো কঠিন।

মরক্কোর রাজপ্রাসাদ এক বিবৃতিতে বলেছে, আগামী তিন দিন দেশের সব সরকারি ভবনে পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। এছাড়া উদ্ধারকারী দলকে সহায়তা করার জন্য রাজা সশস্ত্র বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন এবং মরক্কোর নাগরিকরা ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য রক্ত ​​দান করছেন।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বলছে, ১৯৬০ সালের পর শুক্রবার এই ভূমিকম্প দেশটিতে সবচেয়ে প্রাণঘাতী। ওই বছর দেশটিতে শক্তিশালী এক ভূকম্পনে কমপক্ষে ১২ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। তবে শুক্রবারের ভূমিকম্পটি মরক্কোতে গত এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প ছিল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App