×

আন্তর্জাতিক

হাজার হাজার ইহুদির প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন যে মুসলমানরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৩, ১২:৪০ পিএম

হাজার হাজার ইহুদির প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন যে মুসলমানরা

ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে আলবেনিয়া এমন একটি দেশ যেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে ইহুদি জনসংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল।

অর্থাৎ যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগের তুলনায় সেসময় দেশটিতে ইহুদিদের সংখ্যা বেড়ে যায়।

নাৎসি শাসনের নিপীড়নের শিকার হয়ে হাজার হাজার ইহুদি জার্মানি এবং অস্ট্রিয়ার মতো দেশ থেকে পালাতে শুরু করে।

তখন আলবেনীয় পরিবারগুলো তাদের বাড়িতে ইহুদিদের আশ্রয় দেয়, পালিয়ে আসা শরণার্থীদের প্রাণ রক্ষা করে তারা। খবর বিবিসির।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেই, ১৯৩৮ সালে আলবেনিয়ার রাজা প্রথম জোগ ৩০০ জনেরও বেশি ইহুদিকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছিলেন, যাদের এমনকি আলবেনীয় নাগরিকত্বও দেয়া হয়েছিল।

কিন্তু নিজ ক্ষমতায় তাদেরকে রক্ষা করা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৩৯ সালে ইতালি আলবেনিয়া আক্রমণ করে এবং দেশটিকে তারা নিজেদের রক্ষাকারী স্থান হিসেবে ঘোষণা করে। রাজা প্রথম জোগকে ইতালি পালিয়ে যেতে বাধ্য করে।

বেনিতো মুসোলিনির নেতৃত্বে আলবেনিয়ায় ইহুদিদের প্রবেশ তখন আরও কঠিন হয়ে পড়ে।

এরপর ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন শেষ পর্যায়ে তখন আলবেনিয়ার ভূখণ্ডে তিন হাজারেরও বেশি ইহুদি শরণার্থীর বসবাস ছিল।

এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে জায়গা দেয়ার বিষয়টিকে আলবেনিয়ার নাগরিকদের ঐতিহ্যগত সংহতি এবং ‘বেসা’ নামক মর্যাদার রীতি হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়।

যারা শরণার্থীদের সাহায্য করেছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন সাধারণ মানুষ। অর্থাৎ যারা কোন ধরণের রাজনীতি বা সামাজিক আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন না। কিন্তু তাদের মধ্যে একটা জিনিসই ছিল, মানবতা।

দেশটিতে ইহুদিদের কোন সাহায্য দেয়া জাতীয় সম্মানের বিষয় হিসাবে বিবেচিত হত।

আলবেনীয়দের মানবিক চরিত্রের স্বীকৃতি দিতে, হলোকস্টের শিকারদের জন্য ইসরায়েলে ইয়াদ ভাশেম নামে একটি স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলা হয়েছে।

সেখানে ইহুদি সম্প্রদায়কে রক্ষা করার জন্য যারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিল এমন প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিল সবচেয়ে কঠিন সময়, তবে নাৎসি শাসনের নিপীড়নই আলবেনিয়ার জন্য প্রথম বা শেষ চ্যালেঞ্জ ছিল না।

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। সময় এবং ভুক্তভোগী পরিবর্তন হলেও ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বেশ কয়েক বছর পর, ১৯৯০-এর দশকে, পাঁচ লাখেরও বেশি উদ্বাস্তু, যাদের বেশিরভাগই জাতিগত আলবেনীয়, তারা সার্ব সামরিক বাহিনীর নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আলবেনিয়ার উদ্দেশ্যে কসোভো ছেড়ে যায়।

নেভিলা মুকা, একজন আলবেনীয় নারীর নাতনি, তিনি একটি উদ্বাস্তু পরিবারকে উদ্ধার করেছিলেন। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, সেসময় আলবেনিয়ান পরিবারগুলো কসোভার শরণার্থী শিবিরে যেতো, একটি পরিবারকে খুঁজে বের করে তাদেরকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে আসতো।

তারা তাদের আত্মীয় বা বন্ধু না, তারা অপরিচিত, কিন্তু আলবেনীয়রা তাদের স্বাগত জানাত, তাদের খাওয়াত, পরাত। তাদের সাথে এমনভাবে আচরণ করত যেন তারা তাদেরই পরিবারেরই অংশ।

যখন নেভিলাকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, তার দাদী যে এমনটা করেছেন সেটা কেন করেছেন বলে মনে হয়?

তখন তিনি কাঁধ তুলে জবাব দেন, ‘এটা আলবেনিয়ান রীতি।’

মুকা বিবিসিকে ব্যাখ্যা করেছেন যে 'বেসা' আলবেনীয়দের জন্য এমন এক রীতি, "যদি কেউ আপনার কাছে সাহায্যের জন্য আসে, আপনাকে তাদের থাকার জায়গা দিতে হবে।"

যদিও 'বেসা'র আরও কিছু দিক সময়ের সাথে সাথে ম্লান হয়ে গেছে, তারপরেও আলবেনিয়ান সমাজে কর্তব্য এবং আতিথেয়তার সাধারণ অনুভূতিগুলো এখনও টিকে আছে।

আলবেনিয়া এখনও বহু মানুষকে আশ্রয় দিচ্ছে।

এবার মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা মানুষদের তারা জায়গা করে দিচ্ছে। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সেনাবাহিনী দ্রুত প্রত্যাহার করে নিলে দেশটির ক্ষমতা পুনর্দখল করে তালেবান। সে সময় বহু আফগান আলবেনিয়ায় পালিয়ে যায়।

আলবেনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওল্টা জাক্কা সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন যে আলবেনিয়া "স্বেচ্ছায় এবং গর্বের সাথে চার হাজার আফগান শরণার্থীকে আতিথ্য দেবে। আলবেনিয়া কখনই বড় এবং ধনী দেশগুলোর অভিবাসন বিরোধী নীতির কেন্দ্র হবে না।"

এইভাবে আলবেনিয়া, ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে একটি ছোট এবং দরিদ্র দেশ হলেও বারবার তাদের আতিথেয়তার শপথ পূরণ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App