ভারতের উত্তর প্রদেশে এক প্রবীণ মুসলিম দম্পতিকে তাদের হিন্দু প্রতিবেশীরা ঘিরে ধরে পিটিয়ে হত্যা করেছে। হিন্দু প্রতিবেশীরা অভিযোগ করেছেন, ওই দম্পতির এক ছেলে সন্তান কয়েক বছর আগে মহল্লার একটি হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন।

নৃশংস এই ঘটনা উত্তরপ্রদেশের সীতাপুর জেলার রাজ্যেপুর গ্রামে গত শুক্রবার (১৮ আগস্ট) রাতে ঘটেছে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত দম্পতির নাম আব্বাস ও কামরুল নিশা- তাদের দুজনেই পঞ্চাশোর্ধ্ব। এছাড়া, তবে পুরো ঘটনা যে হিন্দু ও মুসলিম পরিবার থেকে আসা দুই তরুণ-তরুণীর প্রেম এবং পালিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করেই ঘটেছে- বিষয়টি স্বীকার করেছে পুলিশ। খবর বিবিসির।

ভারতে মুসলিম যুবকরা যখনই কোনো হিন্দু মেয়ের সঙ্গে প্রেম অথবা বৈবাহিক সম্পর্কে জড়ান, দেশের হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলো তার নামকরণ করেছে ‘লাভ জিহাদ’। এ ঘটনাও তার ব্যতিক্রম নয়।

সীতাপুরের প্রকৃত ঘটনা বছর তিনেক আগে রাজ্যেপুর গ্রামের যুবক শওকত তাদের পাড়ারই একটি হিন্দু মেয়ে রুবির প্রেমে পড়ে। তাদের বিয়েতে পরিবার সম্মতি দেবে না- এটা বুঝে দুজনই একসঙ্গে পালিয়ে যায়। কিন্তু ২০২০ সালে ওই ঘটনার সময় রুবি তখনো অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল। ফলে তার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে শওকতের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা রুজু করে পুলিশ।

ওই মামলায় অভিযুক্ত শওকতকে জেলেও যেতে হয়েছিল। গত সপ্তাহে শওকত জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার গ্রামে ফিরে গেলে দুই পরিবারের মধ্যে নতুন করে বিরোধ মাথাচাড়া দেয়।

সেই অনুযায়ী শৈলেন্দ্র জয়সোয়াল ও তার বেশ কয়েকজন সঙ্গীসাথী লোহার রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে শুক্রবার শওকতদের বাড়িতে হানা দেন। ঘটনার সময় শওকত বাড়িতে ছিল না, কিন্তু ছিলেন তার মা-বাবা আব্বাস ও কামরুল নিশা। হামলাকারীদের বাধা দিতে গিলে তাদের দুজনকেই বেধড়ক মারধর করা হয়, মাথায় লোহার রডের বাড়ি মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়।

প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়। হামলাকারীরাও এর পরেই এলাকা ছেড়ে পালায়।

পুলিশ পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত দম্পতির দেহ উদ্ধার করেছে ও ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে এলাকাজুড়ে চিরুনি তল্লাশিও শুরু হয়ে যায় শনিবার থেকে।

ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করে পুলিশ সুপার চক্রেশ মিশ্রা সংবাদমাধ্যমকে যে ব্রিফিং করেন, তার একটি ভিডিও এদিন টুইট করেছেন ওই রাজ্যের সাংবাদিক পীযূষ রাই।

তিনি সেখানে জানিয়েছেন, জোড়া খুনের এই ঘটনায় শৈলেন্দ্র জয়সোয়াল, পল্লু ও অমরনাথ নামে তিনজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরো দুজন হামলাকারীর খোঁজে অভিযান চলেছে।

এ ঘটনার পর রাজ্যেপুর গ্রামে পুলিশ চৌকিও বসানো হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে।