×

আন্তর্জাতিক

থাইল্যান্ডের সড়কে যে কারণে ‘জেব্রা প্রতিমা’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৫৪ পিএম

থাইল্যান্ডের সড়কে যে কারণে ‘জেব্রা প্রতিমা’

ফাইল ছবি

ব্যাংককের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে ফুটপাতে সর্বাগ্রে যে জিনিসটি চোখে পড়ে, তা হলো জেব্রার প্রতিমা। অনেক জেব্রার গলায় মালাও ঝুলতে দেখা যেতে পারে। আবার বেশ কয়েকটি জেব্রার সামনে সফট ড্রিংকস ‘ফান্টা’ রাখার বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হতে পারে।

ব্যাংককের ব্যস্ত সড়ক লাডপ্রাওয়ে এটি একটি সাধারণ চিত্র। কথিত আছে, কেউ একজন একটি জেব্রার প্রতিমা এনে সড়কের পাশে রেখেছিলেন। তার দেখাদেখি পরে অন্যরাও জেব্রার প্রতীমা রাখতে শুরু করেন। বিষয়টি কৌতূহলপ্রদ। কেন শুধু জেব্রা? হাতি, ঘোড়া কিংবা অপরাপর চতুষ্পদ জন্তু নয় কেন?

আমরা সবাই জানি যে, থাইল্যান্ড বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। কিন্তু বুদ্ধের কোনো বাণীতে কিংবা তার শিষ্যদের সাক্ষাতে জেব্রার কোনো বিশেষত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। আবার থাই রাশিফলে বাঘ, সিংহ, শূকর, মুরগীর প্রতীক থাকলে জেব্রার কোনো প্রতীক নেই। অথচ সেই জেব্রাই কেন ব্যাংককের পথে-প্রান্তরে রাখার প্রচলন রয়েছে? পথেঘাটে জেব্রার প্রতিমা রাখার এই প্রবণতা মাঝেমধ্যে শহরটিতে যাতায়াতে অসুবিধার সঞ্চার করে থাকে বলেও শোনা যায়। প্রায় ছয় বছর আগে ব্যাংককের রাচাদা সড়কে জেব্রা প্রতিমার কারণে এমনই প্রতিবন্ধকতা দেখ দিয়েছিল। তখন লরিতে করে জেব্রার প্রতিমা সরাতে হয়েছিল।

অনেক সময় জেব্রার প্রতীমা জড়ো হতে হতে এমনকি কোনো কোনো সড়ক বন্ধ হওয়ারও উপক্রম হয়। প্রায় ৬ বছর আগে ব্যাংককের রাচাদা সড়কে জেব্রার প্রতীমার কারণে চলাচলের অসুবিধা তৈরি হয়েছিল। তখন সড়কটি চলাচলের উপযোগী করতে ট্রাক লরি এনে জেব্রার প্রতীমা সরাতে হয়েছিল।

থাইল্যান্ডের সড়কগুলোতে এত প্রাণী রেখে কেন জেব্রার প্রতিমাকেই বেছে নেয়া হলো এবং জেব্রাকেই বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে থাই সাংবাদিক জ্যাং বলেন, এই রীতির নির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই। থাইল্যান্ডের মানুষের কিছু অদ্ভুত বিশ্বাস রয়েছে। যেখানে এমন জেব্রার ভাস্কর্য দেখবেন, ধরে নিতে হবে সেখানে কখনো কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছিল বা কয়েকটি দুর্ঘটনার ফলে সেটিকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা মনে করা হচ্ছে। জেব্রা ক্রসিং থেকেই হয়তো জেব্রার ওপর বিশ্বাস তৈরি হয়েছে। এজন্যই হয়তো জেব্রাকে ‘সড়কে নিরাপত্তার প্রতীক’ হিসেবে বিবেচিত হয়।

থাইল্যান্ডে বৌদ্ধ, হিন্দু দেবতা ও প্রেতলোকের আরাধনা করা হয়। ধারণা করা হয়, যেসব এলাকার ওপর প্রেতলোক কিংবা কোনো অশরীরী শক্তি ক্ষুব্ধ, সেগুলোকেই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ মনে করা হয়। তাই এই অশুভ শক্তিকে শান্ত রাখতে জেব্রার প্রতিমা রাখার আয়োজন বলে জানান তিনি।

থাইল্যান্ডে এই মতাবলম্বীরা এভাবেই যাত্রাপথে জেব্রা রেখে নিজের নিরাপদ ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রার্থনা করেন। আবার যারা হয়তো জেব্রার প্রতিমা আনতে অপারগ হন, তারা জেব্রার গলায় দেয়ার জন্য মালা নিয়ে আসেন, প্রার্থনা করে সামনে লাল বা কমলা রঙের ‘ফান্টা’ রেখে দেন।

প্রার্থনা স্থানে লাল বা কমলা রঙের কোমল পানীয় ‘ফান্টা’ দেয়ার বিষয়টি সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। দেশটির বেশিরভাগ মানুষের অভিমত এই যে, ‘একজন অপরজনের দেখাদেখি জেব্রার প্রতিমার সামনে ফান্টা রাখা হয়ে থাকে।

থাইল্যান্ডে অপরকে অনুসরণ করে ধর্মীয় চর্চা খুবই প্রচলিত একটি ব্যাপার। দেশটিতে ভ্রমণে গেলে একাধিক স্থানেই মুরগির ভাস্কর্য কিংবা কচ্ছপের ভাস্কর্য চোখে পড়বে আপনার। হয়তো কেউ একজন রাস্তার পাশের ফুটপাতে কিংবা খোলা মাঠের কোনায় একটি কুমিরের ভাস্কর্য রেখে দিয়েছে, স্বল্প সময়ের মধ্যেই তার দেখাদেখি আরো অনেক মানুষ কুমিরের ভাস্কর্য এনে রাখা শুরু করে। তাই এই ধরনের আচার ‘ব্যাখ্যাতীত’ বিষয়রূপেই পরিগণিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App