অক্সফোর্ড থেকে খেলার মাঠ, যৌবনের উত্তাল সে দিনগুলোতে হাজার রমণীর মনসওয়ার পাকিস্তানের বাইশ গজের জাদুকর ইমরান খান (৭০) জীবনের শেষবেলায় এসে ‘স্ত্রৈণ’ হয়ে পড়েছিলেন? সকাল-সন্ধ্যা স্ত্রীর কথায়ই উঠতেন আর বসতেন। ঘুম থেকে উঠেই কী খাবেন, পরের ঘণ্টায় কী কাজ, এমনকি দেশ পরিচালনার পরামর্শও অন্দরমহল থেকেই পেতেন পিটিআই প্রধান। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া তার তৃতীয় স্ত্রী বুশরা বিবির (৪৮) এক ডায়েরিতে সে ইঙ্গিতই মিলেছে।

বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানকে আটক কারাগারে দেখতে যান বুশরা। পরদিন হঠাৎই পাকিস্তানের আলোচনার মধ্যমণি হয়ে ওঠে বুশরা বিবির একটি ব্যক্তিগত রোজনামচা। তাতেই উঠে আসে খানের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনে বুশরার প্রভাব খাটানোর কথা। জীবনের অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি অনেক নির্দেশনাও দিতেন বুশরা। আর ইমরান খান নাকি সেই দিকেই ছুটতেন। পা ফেলতেন বুশরার দেখানো পথেই। দেশও চালাতেন সেই ‘ঘরণী দর্শনেই’। ইমরান খানের বন্দিদশার মধ্যেই নতুন এই খবর পাকিস্তানের রাজনৈতিক দৃশ্যপট আবারো মুখরোচক হয়ে উঠেছে। খবর জিও নিউজ, ডনের।

পাকিস্তানের প্রথম পর্দানশীন ফার্স্ট লেডি বুশরা বিবি। ছিলেন ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতার অধিকারী। আধ্যাত্মিকতার এক রহস্যময়ী রূপ। পাকিস্তানের অনেকেই বিশ্বাস করেন বুশরার আধ্যাত্মিক ক্ষমতা রয়েছে। ইমরান খানও বুশরাকে তার ‘আধ্যাত্মিক নেতা’ আখ্যা দিয়ে থাকেন। তার সঙ্গে বিয়ের আগেই সেই প্রমাণ দেন বুশরা। এই নেতা বলেন, ইমরান খান যদি প্রধানমন্ত্রী হতে চান তাহলে তাকে বুশরা বিবির বংশের একজন নারীকে বিয়ে করতে হবে। স্বপ্নে দেখেন, ইমরান খানকে অবশ্যই একজন বিবাহিত মহিলা ও পাঁচ সন্তানের মাকে বিয়ে করতে হবে। আর তখন বুশরাও ছিলেন পাঁচ সন্তানের মা। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক মাস পরই ইমরান খান প্রধানমন্ত্রিত্ব লাভ করেন। বুশরা বিবির এই আধ্যাত্মিক শক্তিতে মুগ্ধ হয়েই তাকে বিয়ে করেন ইমরান খান। সরকার পরিচালনার নেপথ্যের এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ফাঁস হতেই দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, হতে পারে বুশরার আধ্যাত্মিক শক্তির কারণেই তার সব নির্দেশ মেনে নিতেন ইমরান খান।

রোজনামচায় লেখা উদ্ধৃতিগুলো টেলিভিশন চ্যানেল ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরালও হয় নিমিষেই। কথিত রোজনামচার শুরুতেই বুশরার একটি ছবি দেখা যায়। এরপর থেকেই খানের বিভিন্ন রাজনৈতিকসহ ব্যক্তিগত জীবনের কথা তুলে ধরা হয়। খানকে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যেমন বিচার বিভাগ ও সেনাবাহিনীর ওপর কখন চাপ দিতে হবে, সে পরামর্শ দিতেন বুশরা। এছাড়া, গভর্নরের শাসন জারি করা হলে কী করতে হবে তার কৌশলও লেখা ছিল রোজনামচায়। প্রয়োজনে পুরো শহর বন্ধ করে দেয়াসহ অপরাপর কর্মকাণ্ডের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানানোর কথা লেখা রয়েছে। রোজনামচায় লেখা থেকে বোঝা যায়, খানের মনে রাজনৈতিক বিপ্লবের ধারণা দেয়ার জন্য বুশরার হাত ছিল অনেকটাই। আইনি কৌশল গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন বুশরা।

তবে রোজনামচার সত্যতা নিয়ে অস্বীকার করেছেন পিটিআই নেতারা। বলেন, খানের সুনাম নষ্ট ও পিটিআইয়ের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষুণ্ন করতেই এটি ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা হতে পারে। এদিকে পাকিস্তানের সাংবাদিক জাভেদ চৌধুরী রোজনামচাটি নিজেই দেখেছেন বলে দাবি করেন। পাকিস্তানের এক্সপ্রেস নিউজের একজন উপস্থাপকের সঙ্গে টেলিফোনে কথোপকথনের সময় বিস্ময়কর বিবরণ শেয়ার করেন। তিনি বলেন, রোজনামচায় খানের পার্টি পরিচালনার কৌশল থেকে শুরু করে দৈনন্দিন রুটিনের নির্দেশনাবলিও লেখা আছে। এমনকী ইমরান খানের খাদ্যাভ্যাসের নিয়ন্ত্রণও করতেন বুশরা। খানের সকালে কী খাওয়া উচিত, কখন জল পান করা উচিত, দুপুরের খাবারের তালিকা, এমনকি রাতে দুধ পান করার মতো নির্দিষ্ট সময়গুলো লিপিবদ্ধ করা আছে সেখানে।

রোজনামচায় বলা হয়, খান প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর চা, ফলের রস ও মধু খেতেন। দুপুরের খাবার হিসাবে মাছ, মাংস বা কাবাব খেতেন। রাত ১২টায় দুধ পান করতেন। এছাড়া, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সঙ্গে কিছু নফল নামাজ ও আরো কিছু নির্দিষ্ট নামাজ পড়ার বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা রয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে জাভেদ প্রকাশ করেন, পাঞ্জাবে গভর্নর শাসন জারি হলে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানোর নির্দেশনা ছিল রোজনামচায়।