×

আন্তর্জাতিক

অনাস্থা প্রস্তাব: নতুন মাত্রায় মোদি-রাহুল লড়াই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৩, ১২:৪১ পিএম

অনাস্থা প্রস্তাব: নতুন মাত্রায় মোদি-রাহুল লড়াই

প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছিল- ভারতের লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা বিতর্কের সূচনা করবেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। তবে গতকাল মঙ্গলবার তাকে সেই ভূমিকায় দেখা যায়নি। তার পরিবর্তে লোকসভার রীতি মেনে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের নোটিস জমা দেয়া আসামের কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈকে বিতর্কের প্রথম বক্তা হিসেবে দেখা গেছে। খবর আনন্দবাজারের।

কংগ্রেস সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিরোধী শিবির ‘ইন্ডিয়া’র শেষ বক্তা হিসেবে দেখা যাবে রাহুলকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জবাবি বক্তৃতার ঠিক আগেই অনাস্থা বিতর্কে অংশ নিতে পারেন ওয়েনাড়ের এই সাংসদ।

গত ২৩ মার্চ ‘মোদি’ পদবি অবমাননা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে ২ বছর জেলের সাজা পাওয়ায় সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যায় রাহুলের। গত শুক্রবারই সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে সেই শাস্তির নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়া হয়। সেই স্থগিতাদেশের ৪৮ ঘণ্টা পর রাহুলকে তার সাংসদ পদ ফিরিয়ে দেন লোকসভার স্পিকার। গত সোমবার দুপুর ১২টার কিছু আগে তিনি লোকসভায় এসেছিলেন। বিকালে বিরোধীদের জোট ‘ইন্ডিয়া’ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিরোধীদের পক্ষে অনাস্থা বিতর্কের সূচনা করবেন কেরালার ওয়েনাড়ের সাংসদ পদে প্রত্যাবর্তন করা রাহুল।

গতকাল সকালেও লোকসভা সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ জুলাই অনাস্থা প্রস্তাবের নোটিস জমা দেয়া আসামের কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ ‘প্রারম্ভিক বক্তা’ হিসেবে রাহুলের নাম জমা দিয়েছেন। কিন্তু দুপুর ১২টায় অনাস্থা বিতর্ক শুরুর পরেই জানা যায়, সংসদীয় রীতি মেনে বিরোধী জোটের পক্ষে বিতর্কের সূচনা করবেন গগৈ। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশীসহ কয়েকজন বিজেপি সাংসদ খোঁচাও দেন কংগ্রেসকে। জোশী বলেন, ‘হঠাৎ কী হলো? আমরা তো ওর (রাহুল) কথা শুনব বলেই বসে রয়েছি!’ তবে এদিন অনাস্থা বিতর্কে বক্তাদের তালিকায় রাহুলেরও নাম ছিল।

কেন অনাস্থা বিতর্কের সূচনা-বক্তৃতায় রাহুলের নাম তুলে ধরেও ‘পিছু হটল’ বিরোধীরা? কংগ্রেসের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কৌশলগত কারণেই আগামীকাল মোদির জবাবি বক্তৃতার ঠিক আগে অনাস্থা বিতর্কে বিরোধী শিবিরের শেষ বক্তা হিসেবে রাহুলের নাম ভাবা হচ্ছে। উদ্দেশ্য, বিজেপিবিরোধী জোটের ‘মুখ’ হিসেবে তাকে তুলে ধরা। সে ক্ষেত্রে লোকসভা ভোটের আগে ‘মোদি বনাম রাহুল’ লড়াই নতুন মাত্রা পাবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন।

বিতর্ক শেষে আগামীকাল লোকসভার সদস্যরা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট দেবেন। তবে ভারতের পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও এর মিত্রদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় এই ভোটাভুটিতে মোদি সরকার হারবে না বলেই ধরে নেয়া যায়। বিরোধী নেতারা বলছেন, এই বিতর্ক মণিপুর রাজ্যে চলমান জাতিগত দাঙ্গা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে মুখ খুলতে বাধ্য করবে।

প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির দাবি : অনাস্থা-আলোচনায় গতকাল গৌরব গগৈ বলেন, ‘বিরোধী জোটের অবস্থান স্পষ্ট। তারা চায় সংসদে মণিপুর নিয়ে বিবৃতি দেন প্রধানমন্ত্রী। এজন্যই অনাস্থা প্রস্তাব এনেছি আমরা। মণিপুরের বিচার চাই।’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করে গগৈ বলেন, ‘মণিপুরে গিয়েছেন রাহুল গান্ধী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ অন্যরাও। কেন যাননি প্রধানমন্ত্রী? মণিপুর নিয়ে ৩০ সেকেন্ডের জন্য মুখ খুলতে কেনো ৮০ দিন সময় নিলেন প্রধানমন্ত্রী? মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহকে কেন সরানো হল না এখনো? উনি (প্রধানমন্ত্রী) তো অতীতে গুজরাত, উত্তরাখণ্ড, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীদের সরিয়েছেন।’

ভারতীয় পার্লামেন্টের চলতি অধিবেশন ২০ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে। অধিবেশন শুরুর পর থেকেই বিরোধীরা মণিপুরের সহিংসতা নিয়ে মোদির বিবৃতির দাবি করতে থাকে। এই নিয়ে বিরোধীদের প্রতিবাদের মুখে বারবার অধিবেশন বিঘ্নিত হয়।

মে মাসের প্রথমদিক থেকে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে শুরু হওয়া জাতিগত দাঙ্গায় এ পর্যন্ত ১৫০ জনেরও বেশি নিহত ও কয়েক হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। রাজ্যটির সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি মেইতেইদের সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ কুকিদের সংঘর্ষ চলছে।

২০১৪ সাল থেকে একটানা ভারতের ক্ষমতায় আছে মোদি সরকার। এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এই সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হল। অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা দেয়ার ইস্যু নিয়ে ২০১৮ সালে এক আইনপ্রণেতা প্রথম মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন। সেবার ১২ ঘণ্টা বিতর্কের পর ওই প্রস্তাব মুখ থুবড়ে পড়ে।

সম্প্রতি ভারতের ২৬টি বিরোধী দল মিলে একটি জোট গঠন করেছে, যাকে ‘আইএনডিআইএ’ বা ‘ইন্ডিয়া’ বলে ডাকা হচ্ছে। তাদের আনা এই অনাস্থা বিতর্ক তাদের ঐক্য প্রদর্শনের একটি সুযোগ বলে মনে করেছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App