×

আন্তর্জাতিক

ঋষি সুনাকের শাশুড়ির মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্ক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৩, ১১:৪৬ এএম

ঋষি সুনাকের শাশুড়ির মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্ক
ঋষি সুনাকের শাশুড়ির মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্ক
ভারতের সফটওয়্যার বিলিওনিয়ার এনআর নারায়ণ মূর্তির মেয়ের স্বামী হচ্ছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। যেদিন থেকে ঋষি সুনাক প্রধানমন্ত্রী হলেন, সেদিন থেকে যেন নারায়ণ মূর্তি দম্পতির জীবন অনেক বেশি কড়া নজরে। খবর: বিবিসির। ভারতে রান্না বিষয়ক একটি জনপ্রিয় শো হচ্ছে 'খানা মে কিয়া হ্যায়', মোটাদাগে যার অর্থ লাঞ্চ বা ডিনারের জন্য কী আছে? এই অনুষ্ঠানে ঋষি সুনাকের শাশুড়ি ৭২-বছর বয়সী সুধা মূর্তি সম্প্রতি একটি মন্তব্য করেছিলেন, তারপর থেকে তিন দিন ধরে টুইটারে ট্রেন্ড করছে তার নাম। মিসেস মূর্তি নিজেকে একজন ‘বিশুদ্ধ নিরামিষভোজী’ বলে বর্ণনা করেছিলেন যিনি ডিম পর্যন্ত খান না। তিনি আরও বলেছিলেন, যখন তিনি বিদেশ ভ্রমণে যান, তখন অনেক সময় নিজের খাবার সঙ্গে নিয়ে যান। কারণ তার ভয় হয় যে, নিরামিষ খাবার এবং আমিষ রান্নার জন্য হয়তো 'একই চামচ ব্যবহার করা হয়েছে।' 'কাজেই যখন আমি বেড়াতে যাই, আমি একটি বিশুদ্ধ নিরামিষ রেস্টুরেন্ট খুঁজি। আর আমি খাবার ভর্তি একটা আস্ত ব্যাগও নিজের সঙ্গে রাখি। বহু দশক আগে আমার দাদা-দাদীরা যখন তাদের নিজেদের খাবার সঙ্গে বহন করতেন, তখন আমি তাদের খেপাতাম। আমি তাদের জিজ্ঞেস করতাম, এখানে যা খাবার পাওয়া যায় সেটা কেন তোমরা খাও না। কিন্তু আমি নিজেই সেই কাজ করি।' তার এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। আর এই মন্তব্যের পক্ষে বিপক্ষে যেন সমান ভাগে ভাগ হয়ে গেছে মানুষ। কেউ তার সমালোচনা করছেন, কেউ তার পক্ষ নিচ্ছেন। মিসেস মূর্তি নিজেকে ‘পিওর ভেজিটেরিয়ান’ বা বিশুদ্ধ নিরামিষভোজী বলে বর্ণনা করেছেন। ভারতে অনেক নিরামিষভোজী আছেন যারা ডিম খান। কাজেই এদের থেকে নিজেদের আলাদা করতে লাখ লাখ মানুষ নিজেদের ‘বিশুদ্ধ নিরামিষভোজী’ বলে থাকেন। তবে মিসেস মূর্তির এই মন্তব্যে ভারতে অনেকে বেশ ক্ষিপ্ত হয়েছেন। কারণ তারা মনে করেন ‘বিশুদ্ধ নিরামিষভোজীর’ ধারণার শেকড় আসলে প্রোথিত ভারতের হিন্দুদের বর্ণপ্রথার মধ্যে। এরমধ্য দিয়ে মিসেস মূর্তি তার উচ্চ বর্ণের ব্রাহ্মণ্যবাদী সংবেদনশীলতাই প্রকাশ করেছেন। ভারতের অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, অনেক অঞ্চলের ব্রাহ্মণরা মাংস খেতেন এবং অনেকে এখনো খান। কিন্তু তারপরও ‘নিরামিষভোজী’ হওয়াকে ভারতে ‘বিশুদ্ধতা’র সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা হয়। ভারতে নিরামিষাশী হতে গেলে যেসব জিনিস মানতে হয়, তার সঙ্গে কিন্তু সেখানকার বর্ণপ্রথা জড়িয়ে আছে। ব্যক্তিগত পছন্দের কারণে কেউ নিরামিষাশী হলে এর পক্ষে একটাই যুক্তি, এটা একটা অভ্যাস। এই অভ্যাস ভাঙ্গা কঠিন, যদিও অনেকে স্বীকার করেন যে এর মূলে আছে বর্ণপ্রথা'-এক টুইটে মন্তব্য করেছেন সমাজবিজ্ঞানী জানকী শ্রীনিবাসন। টুইটারে আরেকজন মন্তব্য করেছেন, সাবান জিনিসটা কী সেটা কি নিরামিষভোজীরা বোঝেন না? এই মাত্রার বিভ্রম আর ‘বিশুদ্ধতা’ এবং ‘কলুষতা’ নিয়ে এত বাড়াবাড়ি, এগুলো কিন্তু ব্রাহ্মণ্যবাদের সৃষ্টি। অনেকে আবার মিসেস মূর্তির ছবির পাশাপাশি ঋষি সুনাকের এমন ছবি শেয়ার করেছেন যেখানে মি. সুনাককে প্লেট ভর্তি রান্না করা মাংস নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। তবে সুধা মূর্তিকে যেরকম কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে, সেটাও ভারতে অনেক মানুষকে অবাক করেছে। ভারতের অন্তত বিশ শতাংশ মানুষ নিজেদের ‘নিরামিষভোজী’ বলে দাবি করেন। তারা কেবল উদ্ভিদজাত এবং দুগ্ধজাত খাবার খান। এদেরও কেউ কেউ স্বীকার করেছেন যে তারাও মিসেস মূর্তির মতো একই কাজ করেন। ঋষি সুনাকের শাশুড়ির মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্ক সাংবাদিক শীলা ভাট বলছেন, তিনি এমন অনেককে চেনেন যারা মিসেস মূর্তির মতো একই কাজ করেন। তিনি বলেন, মিসেস মূর্তিকে তার মতো থাকতে দিন। অনেকে আবার উল্লেখ করছেন যে বেশিরভাগ ভারতীয় মাংস খেলেও তারা কিছু নিয়ম এবং ঐতিহ্য মেনে চলেন। যেমন যে হিন্দুরা মাংস খান, তারা গরুর মাংস খান না। টুইটারে একজন আবার লিখেছেন, কেবল নিরামিষভোজীরাই যে এরকম সতর্ক তা নয়। যেমন ভারতের অনেক আমিষভোজী মানুষ গরুর মাংসের ঝোল দিয়ে তৈরি ফ্রেঞ্চ ওনিয়ন স্যুপ খান না। অনেকে গরুর চর্বি দিয়ে ভাজা বেলজিয়ান ফ্রাইজ খান না। আবার অনেক মুসলিম যখন কোন মাংস হালাল কি-না সেটা নিশ্চিত হতে পারেন না, তখন তারাও নিরামিষ খাবারই খান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App