×

আন্তর্জাতিক

২ নারীকে নগ্ন করে ঘুরানো ও ধর্ষণ, সেদিন যা ঘটেছিল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২৩, ১০:৩৯ এএম

২ নারীকে নগ্ন করে ঘুরানো ও ধর্ষণ, সেদিন যা ঘটেছিল
ভারতের মণিপুরে দুই নারীকে নগ্ন করে ক্যামেরার সামনে রাস্তায় প্রকাশ্যে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তাদের একটি মাঠে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সেখানকার আদিবাসী একটি সংগঠন। এ ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক নিন্দা চলছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জোরালো দাবি উঠেছে। এই ঘটনায় মূল হোতা সহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। আসলে কী ঘটেছিল সেইদিন গেল বুধবার থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ভারতের মণিপুরের রাস্তায় কুকি-জোমি সম্প্রদায়ের দুইজন নারীকে নগ্ন করে একদল লোক রাস্তায় হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের ক্রমাগত যৌন লাঞ্ছনা করা হচ্ছে। দুইজন নারীর একজনের বয়স ছিল মাত্র কুড়ি-বাইশ, অন্যজনের চল্লিশের আশেপাশে। ভিডিওতে দেখা যায়, জনতার মধ্যে অনেকেই ওই নারীদের শরীরের বিভিন্ন অংশ খামচে ধরছে। এরপর তাদের জোর করে একটি চাষের ক্ষেতের দিকে টেনে নিয়ে যেতেও দেখা যায়। পরে ১৮ মে তারিখে ওই ঘটনার যে এফআইআর করা হয়েছে, তাতে ভিক্টিমরা অভিযোগ করেছেন তুলনায় কম বয়সী মেয়েটিকে প্রকাশ্য দিবালোকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে গণধর্ষণ করা হয়েছিল। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ঘটনার দিন কাংপোকপি জেলায় তাদের গ্রাম যখন জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, তখন প্রাণে বাঁচতে তারা পরিবারের কয়েকজন মিলে কাছের জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পথে থৌবাল জেলার একটি পুলিশ ভ্যান তাদের উদ্ধার করে গাড়িতে তুলে নেয়। তবে পুলিশ যখন তাদের থানায় নিয়ে যাচ্ছিল, তখন থানা থেকে মাত্র দু’কিলোমিটার দূরে একদল উত্তেজিত জনতা তাদের ঘিরে ধরে। এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই ক্ষুব্ধ জনতা তাদের পুলিশের হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু ভিক্টিম দুইজন নারীর একজন গতকাল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাকে জানিয়েছেন, “পুলিশ আসলে হামলাকারীদের সঙ্গেই ছিল। ওরা বাড়ির বেশ কাছেই প্রথমে আমাদের গাড়িতে তুলে নেয়, তারপর গ্রামের একটু বাইরে গিয়েই রাস্তায় ছেড়ে দেয়। পুলিশই ওই জনতার হাতে আমাদের তুলে দিয়েছিল। অর্থাৎ ওই ভিক্টিম দাবি করেছেন, পুলিশের কাছ থেকে তাদের ছিনিয়ে নেয়া হয়নি – পুলিশই ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের ওই হামলাকারীদের হাতে তুলে দিয়েছে। ওই জনতা এরপর জোর করে নারীদের সব জামাকাপড় খুলতে বাধ্য করে। তাদের রাস্তা দিয়ে নগ্ন করে হাঁটানো হয়, এরপর পাশের ধানক্ষেতে নিয়ে গিয়ে যৌন নির্যাতন চালানো হয়। অভিযোগপত্রে লেখা হয়েছে, তিনজন নারী ও দুজন পুরুষ-সহ তারা দলে মোট পাঁচজন ছিলেন, যারা গ্রাম থেকে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। বছর পঞ্চাশের যে তৃতীয় নারী ছিলেন, তাকেও নগ্ন করে ঘোরানো হয়েছিল। দলের দু’জন পুরুষ ছিলেন সবচেয়ে কমবয়সী নারীটির বাবা ও ভাই। ধর্ষণে বাধা দেয়ায় তাদের দুজনকেই হামলাকারীরা হত্যা করেছে বলেও এফআইআরে জানানো হয়েছে। গত ৩ মে থেকে মণিপুরে সংখ্যাগুরু মেইতেই ও সংখ্যালঘু কুকিদের মধ্যে যে রক্তাক্ত জাতি-সংঘাত এবং অবাধ হত্যা-লুণ্ঠন-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগ শুরু হয়েছে, এই ঘটনা ছিল ঠিক তার দ্বিতীয় দিনেরই। তবে এই ঘটনার বীভৎসতা ও নৃশংসতা ঠিক কতখানি ছিল, তা সারা দেশ জানতে পারল ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার আড়াই মাস পর। ঘটনাটি পুলিশকে অগ্রাধিকারে ভিত্তিতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহ। তিনি বলেন, ঘটনাটি নিয়ে নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এ নিয়ে স্মৃতি ইরানি একটি টুইটও করেছেন। বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। যিনি আশ্বস্ত করেছেন, অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। টুইটে লিখেছেন, ‘দুই মহিলাকে যৌন নিপীড়নের ভয়াবহ ভিডিও নিন্দনীয় এবং অমানবিক। মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহ আমাকে জানিয়েছেন যে ঘটনাটির তদন্ত চলছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে কোনো ছাড় হবে না।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App