×

আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার হুমকির পর বাড়ছে গমের দাম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২৩, ০৮:৩৯ এএম

রাশিয়ার হুমকির পর বাড়ছে গমের দাম

ছবি: বিবিসি

ইউক্রেনের বন্দরের দিকে যাওয়া যে কোনো জাহাজ সামরিক হামলার নিশানা হিসেবে বিবেচিত হবে- রাশিয়ার এমন হুমকির পর থেকে বিশ্ববাজারে গমের দাম চড়তে শুরু করেছে। কৃষ্ণসাগর হয়ে নিরাপদে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি নিশ্চিতে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় হওয়া চুক্তি থেকে গত সোমবার রাশিয়া নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর টানা তিন রাত ধরে মস্কো ওডেসা ও অন্যান্য শহরে ইউক্রেনের শস্যকেন্দ্রগুলোয় লাগাতার বোমাবর্ষণ করে যাচ্ছে। বিবিসি

রাশিয়া গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছে, এখন থেকে ইউক্রেনের বন্দর অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা করা যে কোনো জাহাজকে ‘কিয়েভের শাসকদের সমর্থক’ হিসেবেই দেখা হবে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত বিবৃতিতে ইউক্রেনগামী আন্তর্জাতিক জাহাজগুলোর উদ্দেশে বলা হয়, ২০ জুলাই মধ্যরাত থেকে কৃষ্ণসাগরে কোনো নৌযান ইউক্রেনের বন্দরের উদ্দেশে রওনা হলে সেগুলোকে সামরিক উপকরণবাহী জাহাজ এবং ইউক্রেন সংঘাতে কিয়েভের পক্ষাবলম্বনকারী হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

এই পদক্ষেপের মাধ্যমে মস্কো মূলত বেসামরিক জাহাজে হামলা করে দায় ইউক্রেনের ওপর চাপানোর পরিকল্পনা করছে বলে ধারণা হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র অ্যাডাম হজের। তিনি বলেন, বেসামরিক জাহাজে হামলার অজুহাতে রাশিয়ার সমন্বিত উদ্যোগের অংশ হিসেবে মস্কো ইউক্রেনের বন্দরগুলোর আশপাশে অনেক বেশি সামুদ্রিক মাইন পেতে রেখেছে।

রাশিয়া শস্যচুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর বুধবার ইউরোপের স্টক এক্সচেঞ্জে গমের দাম আগের দিনের তুলনায় ৮ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে প্রতি টনের মূল্য দাঁড়ায় ২৮৪ ডলারে। একই দিন ভুট্টার দামও বাড়ে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রেও বুধবার গমের দাম ৮ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে।

এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তিনি ফের আন্তর্জাতিক ওই শস্যচুক্তিতে ফিরবেন যদি গত বছর চুক্তি হওয়ার সময় রাশিয়াকে যেসব আশ্বাস দেয়া হয়েছিল, সেগুলো মানা হয়। এসব আশ্বাসের মধ্যে আছে- রাশিয়ার শস্য ও সার বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা তোলা এবং রাশিয়ার কৃষি ব্যাংককে বৈশ্বিক পেমেন্ট সিস্টেমের সঙ্গে ফের যুক্ত করে নেয়া।

এদিকে টানা তৃতীয় রাতের মতো কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী শহরগুলোতে রাশিয়ার হামলা অব্যাহত আছে। আকাশপথে এসব হামলায় ওডেসা ও মাইকোলাইভে ২০ জনের বেশি আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। মাইকোলাইভের আঞ্চলিক গভর্নর ভিতালি কিম বলেছেন, আঞ্চলিক রাজধানীতে রুশ হামলায় শিশুসহ ১৯ জন আহত হয়েছে। একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে হামলা হয়েছে, একটি ভবনের দ্বিতীয় ও সবার উপরের তলার অংশবিশেষ ধ্বংস হয়ে গেছে। কিয়েভের দাবি, মস্কোর হামলায় ওডেসায় একটি ৪ তলা ভবনও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং একাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। বুধবার রাতে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা ক্রিমিয়াতেও হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শহরটিতে রাশিয়ার নিয়োগ করা কর্মকর্তা সের্গেই আকসিওনভ।

তিনি বলেন, উপদ্বীপটির উত্তর-পশ্চিমে ৪টি প্রশাসনিক ভবনে ড্রোন হামলা হয়েছে, হামলায় এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে টানা ৩ রাত ক্রিমিয়ায় হামলা হলো। এসব হামলাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ অভিহিত করে এগুলোর জন্য ইউক্রেনকে দুষছে ক্রেমলিন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, ওডেসার হামলায় প্রায় ৬০ হাজার টন শস্য ধ্বংস হয়েছে। তিনি দাবি করেন, শস্য রপ্তানি চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়ার পর রাশিয়া ইচ্ছা করেই ওডেসা বন্দরে হামলা চালাচ্ছে। তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে শস্য রপ্তানি কেন্দ্রে হামলা এবং ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে বিপদে ফেলার অভিযোগ এনেছেন।

পরে মস্কোর প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, বৃহস্পতিবার থেকে ইউক্রেনের বন্দর অভিমুখে যাওয়া জাহাজগুলোকে নিশানা হিসেবে এবং ওই জাহাজগুলোতে যেসব দেশের পতাকা থাকবে সেগুলোকে কিয়েভের শাসকদের সঙ্গী হয়ে ইউক্রেন সংঘাতে জড়িয়ে পড়া পক্ষ বলে বিবেচনা করা হবে।

বুধবার পুতিন পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে শস্যচুক্তিকে ‘রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইল’ হিসেবে কাজে লাগানোর অভিযোগ করেন। কৃষ্ণসাগর দিয়ে শস্য রপ্তানির পথকে ইউক্রেন ‘যুদ্ধের কাজে’ ব্যবহার করছে বলে আগে অনেকবারই অভিযোগ করেছিল তারা।

নৌপথ বন্ধ হয়ে যাওয়া ইউক্রেন চাইলে রেলপথে শস্য রপ্তানি করতে পারে, কিন্তু সেটি সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ। এদিকে পূর্ব ইউরোপের একাধিক দেশ নিজেদের কৃষকদের রক্ষায় ইউক্রেনের শস্যের ওপর বিধিনিষেধ দিয়ে রেখেছে। এ সমস্যার সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও তুরস্ককে শস্য রপ্তানি কাজে ব্যবহৃত জাহাজগুলোকে পাহারায় সামরিক বহর দিতে অনুরোধ করেছেন ইউক্রেনের সাংসদ ওলেকসি গনচারেনকো।

তিনি বলেছেন, সুস্পষ্টতই পুতিনের লক্ষ্য হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যাঘাত ঘটানো এবং বিশ্বে খাদ্যদ্রব্যের দাম চূড়ায় নিয়ে যাওয়া। এর ফলে উন্নত দেশগুলোতে হয়তো মূল্যস্ফীতি বাড়বে, কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দেখা দেবে সামাজিক অস্থিরতা, অনাহার- দেখা দেবে অভিবাসীদের নতুন ঢেউ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App