×

আন্তর্জাতিক

যে কারণে নিরপেক্ষতা ছাড়লো সুইডেন-ফিনল্যান্ড

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৩, ০১:০০ পিএম

যে কারণে নিরপেক্ষতা ছাড়লো সুইডেন-ফিনল্যান্ড
যে কারণে নিরপেক্ষতা ছাড়লো সুইডেন-ফিনল্যান্ড
যে কারণে নিরপেক্ষতা ছাড়লো সুইডেন-ফিনল্যান্ড

ন্যাটো। ফাইল ছবি

দীর্ঘ দিনের নিরপেক্ষ অবস্থান ছেড়ে এবার সুইডেনও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দিতে চলেছে। এর আগে ফিনল্যান্ডও জোটটিতে যোগ দেয়। সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে সম্প্রতি আপত্তি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান।

চলতি বছরের এপ্রিলে আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটো জোটে যোগদান করে ফিনল্যান্ড। দেশটিকে ন্যাটোর সদস্য দেশের সংখ্যা ৩১-এ উন্নীত হয়। এবার সুইডেন ন্যাটোতে যোগদান করলে এই সংখ্যা ৩২-এ উপনীত হবে। কিন্তু দীর্ঘ দিনের নিরপেক্ষ অবস্থান কোন মোহে পড়ে ছাড়লো এই দুই দেশ?

নর্ডিক অঞ্চলের এই দুই দেশ বেশ কয়েক দশক ধরে তাদের সামরিক নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছিল। কিন্তু ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যখন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করল রাশিয়া, তখন অবস্থান পরিবর্তন করে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইউক্রেন যুদ্ধকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এখন কেন ন্যাটোতে যাচ্ছে? উত্তর ইউরোপে দীর্ঘ সময় একটা যে ধরনের স্থিতিশীলতা ছিলো, ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার পর তা ভেঙে গেছে। এর ফলে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের মতো দেশও এখন মনে করছে তাদের দেশের নিরাপত্তা বেশ নাজুক হয়ে পড়েছে।

সাবেক ফিনিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সান্ডার স্টাব বলেন, গত বছর যখনই রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনে হামলা চালালো, তখনই প্রকৃতপক্ষে ঠিক হয়ে গেল যে ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগদান করবে।

ফিনল্যান্ডের অনেক মানুষকে এ ঘটনা আগের ‘ভীতিকর ইতিহাস’ মনে করিয়ে দিয়েছে।

সোভিয়েতরা ১৯৩৯ সালের শেষভাগে ফিনল্যান্ড আক্রমণ করেছিল। তিন মাস ধরে ফিনিশ সেনারা রুশদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ যুদ্ধ চালায়। যদিও তাদের সৈন্য সংখ্যা ছিল সোভিয়েতদের চেয়ে অনেক কম। ১৯৪০ সালের মার্চ পর্যন্ত ফিনিশ বাহিনী টিকে ছিল। কিন্তু ফিনল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ কারেলিয়া দখল করে নেয় তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন।

ফিনল্যান্ড হয়তো রাশিয়ার দখলে যায়নি, কিন্তু নিজ দেশের দশ শতাংশ সীমানা তারা হারিয়েছিল।

ইউনিভার্সিটি অব হেলসিংকির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইরো সারকা বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ দেখে মনে হচ্ছিল সেই পুরনো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।

ফিনল্যান্ডের মানুষ তখন রাশিয়ার সঙ্গে নিজেদের ১ হাজার ৩৪০ কিলোমিটার সীমানার দিকে তাকাচ্ছিলো আর ভাবছিলো, এটা কি আমাদের সঙ্গেও ঘটতে পারে?

সাম্প্রতিক সময়ে সুইডেনের মনে হচ্ছিলো যে, তারা হুমকিতে আছে।

২০১৩ সালে সর্বপ্রথম সুইডেনের সামরিক দুর্বলতা প্রকাশ হয়ে পড়ে, যখন রাশিয়ার বোমারু বিমান স্টকহোমের ওপর হামলার একটি মহড়া পরিচালনা করছিলো। তখন বাধ্য হয়েই সুইডেনকে ন্যাটোর কাছে রুশদের তাড়াতে সহায়তা চাইতে হয়।

২০১৪ সালে সুইডডিশরা একটি খবর শুনে স্তম্ভিত হয়ে যায়। স্টকহোম দ্বীপপুঞ্জের কাছেই অগভীর পানিতে নাকি রুশ সাবমেরিন ঘুরে বেড়াচ্ছে।

২০১৮ সালে সুইডেনে প্রতিটি ঘরে সেনাবাহিনীর একটি প্রচারপত্র পাঠানো হয়। ‘যদি যুদ্ধের মতো সংকট তৈরি হয়’- তখন কী করতে হবে তার বর্ণনা ছিলো এই প্রচারপত্রে। ১৯৯১ সালের পর এরকম প্রচারপত্র বিলির ঘটনা এটাই প্রথম।

এই দুটি দেশের সামরিক বাহিনী কত বড় ফিনল্যান্ডের জনসংখ্যা মাত্র ৫৫ লাখ। দেশটিতে সামরিক বাহিনীতে ডাক পড়লে যোগ দেয়া বাধ্যতামূলক। জনসংখ্যার অনুপাতে সামরিক বাহিনী বেশ বড় এবং বেশ প্রশিক্ষিত। প্রতিবছর ফিনল্যান্ডে ২১ হাজার মানুষকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং তাদের রিজার্ভ বাহিনীর সংখ্যা প্রায় নয় লাখ। দেশটির যুদ্ধকালীন সেনা সংখ্যা দুই লাখ ৮০ হাজারের মতো বলে অনুমান করা হয়।

সুইডেনের সামরিক ক্ষমতা অবশ্য ফিনল্যান্ডের চেয়ে অনেক কম। তাদের সৈন্য সংখ্যা মাত্র ৫৭ হাজার। কিন্তু ২০১৮ সালে সুইডেনেও সামরিক বাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর আগে ২০১০ সালে এই নিয়ম বাতিল করা হয়েছিলো। এখন বছরে ছয় হাজার মানুষের ডাক পড়ে সামরিক বাহিনীতে। ২০২৫ সাল হতে এটি বাড়িয়ে আট হাজারে উপনয়ন করা হচ্ছে।

সুইডেন তাদের সামরিক বাহিনীর আকার ছোট করতে থাকে ১৯৯০-এর দশক হতে। তখন থেকে তাদের সামরিক বাহিনী দেশ রক্ষার চেয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমেই বেশি মনোযোগ দিয়েছে। কিন্তু রাশিয়া যখন ২০১৪ সালে ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে ক্রিমিয়া দখল করে নিল, তখন সুইডেন তাদের এই নীতি পরিবর্তন করে। কারণ বাল্টিক অঞ্চলে তখন রাশিয়ার দিক থেকে নতুন হুমকি তৈরি হয়।

এখন কী পরিবর্তন দেখা যাবে? সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ১৯৯৪ সাল থেকেই ন্যাটোর আনুষ্ঠানিক সহযোগী দেশ। তখন তারা নেটো জোটের বিভিন্ন কার্যক্রমে বড় অবদানও রাখছে। স্নায়ু যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর সুইডেন ও ফিনল্যান্ড কয়েকটি নেটো মিশনে অংশগ্রহণও করেছে।

তবে নেটো জোটে যোগ দেয়ার পর সুইডেন ও ফিনল্যান্ড সংস্থার আর্টিকেল-৫ অনুযায়ী পরমাণু শক্তিধর দেশগুলোর কাছ থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাবে। কারণ ন্যাটোর এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জোটের যে কোনো একটি দেশের ওপর হামলা সব সদস্য দেশের ওপর হামলা বলে গণ্য হবে।

ইতিহাসবিদ হেনরিক মেইনানডার বলেন, ফিনল্যান্ডের জনগণ নেটোর সদস্য হওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলো। কারণ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ন্যাটো সদস্য হওয়ার লক্ষ্যে ফিনল্যান্ড ধারাবাহিকভাবে বেশ কিছু ছোট ছোট পদক্ষেপ নিয়েছে।

১৯৯২ সালে ফিনল্যান্ড ৬৪টি যুদ্ধ বিমান কেনে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। তিন বছর পর তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যোগ দেয়। তারপর থেকে ফিনল্যান্ডের প্রতিটি সরকার ন্যাটো জোটে যোগ দেয়ার বিষয়টি সব সময় বিবেচনায় রেখেছে।

ন্যাটোর সদস্য হতে হলে কোন দেশকে জিডিপির ২ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করতে হয়। ফিনল্যান্ড এরই মধ্যে সেই লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে। আর সুইডেন ২০২৬ সালের মধ্যে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ২ শতাংশ করার লক্ষ্য ঠিক করেছে।

স্নায়ুযুদ্ধকালীন সুইডেন হয়তো নিরপেক্ষ ছিলো, তবে তখনো বাল্টিক সাগরের দ্বীপ গোটল্যান্ডে ১৫ হাজার সেনা মোতায়েন রাখতো তারা। এখন সুইডেন আবারো সেখানে তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে শুরু করেছে। সুইডেন আশা করছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তারা তাদের নিয়মিত সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করতে পারবে, বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রিজার্ভ সেনা সংখ্যাও বাড়াতে পারবে।

এর ঝুঁকি কী? রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিশ্বাস ন্যাটোর এই সম্প্রসারণ তার দেশের জন্য প্রত্যক্ষ হুমকি। তিনি দাবি করেন, এ জন্যই ২০২২ সালে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে হামলা চালান তিনি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার এই কাজের উল্টো ফল হয়েছে, কারণ এর ফলে ন্যাটো জোটের সম্প্রসারণ আরো ত্বরান্বিত হয়েছে।

বিশেষ করে ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদানের ঘটনা রাশিয়ার জন্য বড় ধাক্কা। এর ফলে বাল্টিক অঞ্চলে ন্যাটো জোটের প্রভাব অনেক বর্ধিত হলো। অপরদিকে, এর ফলে ক্রেমলিন হুমকি দিচ্ছে, তারা এখন পাল্টা ‘সামরিক-কারিগরি’ ব্যবস্থা নেবে। তবে সেটি কী, তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেনি ক্রেমলিন।

তুরস্ক কেন সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের সদস্যপদের বিরোধিতা করেছিল এই দুই দেশের সদস্যপদের বিষয়ে তুরস্ক ও হাঙ্গেরি শুরুতে কিছু আপত্তি জানিয়েছিল। তুরস্কের অভিযোগ, এই দুই নর্ডিক দেশ, তাদের ভাষায়, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে সমর্থন করে। তুরস্ক প্রকৃতপক্ষে কুর্দি চরমপন্থী দল ‘পিকেকে’ ও ‘গুলেন আন্দোলনের’ কথা উল্লেখ করছিল। তুরস্কে ২০১৬ সালে এক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার জন্য গুলেন আন্দোলনকে দায়ী করা হয়।

কুর্দিরা তুরস্কের মোট জনসংখ্যার ১৫-২০ শতাংশ। কয়েক প্রজন্ম ধরে তারা তুরস্কে কর্তৃপক্ষের দিক থেকে নিপীড়নের শিকার বলে অভিযোগ করে। তবে সুইডেনের ব্যাপারেই বেশি আপত্তি ছিল তুরস্কের। কারণ কুর্দিরা সুইডেনের রাজনীতিতে বহু দশক ধরে তাদের পক্ষে বেশ জোরালো অবস্থান গড়ে তুলেছিল।

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এমন প্রশ্নও ছুঁড়ে দিয়েছিলেন, ‘যে দেশের রাস্তায় এরকম সন্ত্রাসবাদীরা ঘুরে বেড়ায়। সেই দেশ কিভাবে নেটোতে অবদান রাখবে?

তার প্রধান দাবি ছিলো, কুর্দিদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সমর্থন করা পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।

২০২৩ সালের জুনে সুইডেন তাদের সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক আইনে পরিবর্তন এনেছে ও যে কোনো ধরনের চরমপন্থী গ্রুপকে সমর্থন করা বা তাদের কাজে অংশগ্রহণ করা নিষিদ্ধ করেছে। এই আইনের পর এরই মধ্যে সেদেশে একজন কুর্দি পুরুষের জেল হয়েছে সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগানোর অভিযোগে।

তবে তুরস্কের এই আপত্তির পেছনে নাকি ছিল অন্য কারণ। কেউ কেউ ইঙ্গিত করেছেন যে তুরস্ক প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল, সেটা না পাওয়া পর্যন্ত তারা সুইডেনকে ন্যাটোর সদস্য করার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে যাচ্ছিল। তুরস্ক অবশ্য একথা অস্বীকার করেছে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড, এই দুই দেশকেই ন্যাটোতে যোগ দিলে তার পরিণতি কী হবে সে বিষয়ে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে।.

তুরস্কের সবুজ সংকেতের পর ন্যাটোতে যোগদানের পথে এখন সুইডেনের সামনে আর কোনো বাধা নেই। তবে ক্রেমলিনের ভাষ্য, ফিনল্যান্ডের বেলায় তারা যা বলেছিল, সুইডেনের ক্ষেত্রেও তারা একই ধরনের ব্যবস্থা নেবে।

রাশিয়ার এসব ব্যবস্থা কী হতে পারে তা এখনো অস্পষ্ট। রাশিয়া বলছে, তারা তাদের কিছু কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র বেলারুশে নিয়ে গেছে। সেখান থেকে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড এসব অস্ত্রের আওতার মধ্যে আসবে।

তবে সাবেক ফিনিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সান্ডার স্টাব হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, রাশিয়া হয়তো সাইবার হামলা, মিথ্যে প্রচারণা ও মাঝেমধ্যে আকাশসীমা লঙ্ঘনের মতো ব্যবস্থাই বেশি নেবে।

ন্যাটো কি সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে বাড়তি নিরাপত্তা দিতে পারবে? আর্টিকেল ৫ অনুযায়ী ফিনল্যান্ডের এরকম নিরাপত্তার গ্যারান্টি এখনই আছে। অপরদিকে, সুইডেনও শীঘ্রই এরকম অঙ্গীকার পাবে। কারণ নেটোর কোন একটি দেশ আক্রান্ত হলে, চুক্তি অনুযায়ী সব দেশকে সেই দেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। অন্যদিকে ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন নেটোতে যোগ দেয়ার ফলে নর্ডিক ও বাল্টিক অঞ্চলের প্রতিরক্ষার ব্যাপারটি এখন আরও পূর্ণাঙ্গ রূপ পেল।

তবে এই দুই দেশেই, বিশেষ করে সুইডেন, জনগণের সংখ্যালঘিষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ মনে করে, ন্যাটোর সদস্য হওয়ার পর বরং এর উল্টো প্রভাব পড়বে।

সুইডিশ পিস অ্যান্ড আরবিট্রেশন সোসাইটির ডেবোরাহ সলোমন বলেন, পরমাণু অস্ত্র দিয়ে শত্রুপক্ষকে নিরস্ত করার নেটোর কৌশলটি বরং উত্তেজনা বাড়াচ্ছে, রাশিয়ার সঙ্গে অস্ত্র প্রতিযোগিতার ঝুঁকি তৈরি করছে। তার মতে, এর ফলে শান্তি প্রচেষ্টার পথ জটিল হচ্ছে, এবং সুইডেনকে তা আরও নিরাপত্তাহীন করে তুলছে।

আরেকটি আশঙ্কা হচ্ছে, এই জোটে যোগ দেয়ার মাধ্যমে সুইডেন বিশ্বে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের আন্দোলনে তার নেতৃস্থানীয় ভূমিকা হারাতে পারে। নেটোর ব্যাপারে সুইডেনের যেসব মানুষ সন্দিহান, তারা ‘৬০-‘৮০-এর দশকের মধ্যবর্তী সময়ের কথা স্মরণ করছেন। তখন সুইডেন পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের চেষ্টায় মধ্যস্থতার জন্য তার নিরপেক্ষ অবস্থানকে কাজে লাগিয়েছিল।

সলোমন বলেন, ন্যাটো জোটে যোগ দেয়ার মানে হলো সুইডেনকে এই ভূমিকা পরিত্যাগ করতে হবে।

তবে ফিনল্যান্ডের নিরপেক্ষতা ছিল ভিন্ন ধরনের। কারণ তাদের এই নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে হয়েছিল ১৯৪৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে এক ‘মৈত্রী চুক্তিতে’ চাপিয়ে দেয়া শর্তের কারণে। তখন ফিনল্যান্ডের টিকে থাকার জন্য ও তাদের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য এটিকে একটি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ হিসেবেই দেখা হতো।

হেনরিক মেইনানডার বলেন, সুইডেনের জন্য এই নিরপেক্ষতা ছিল তাদের পরিচয় ও আদর্শের প্রশ্ন। অপরদিকে, ফিনল্যান্ডের বেলায় এটি ছিলো টিকে থাকার প্রশ্ন।

তিনি আরো বলেন, সুইডেন যে ন্যাটোর সদস্য হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে পেরেছিলো, তার কারণ হচ্ছে তারা ফিনল্যান্ড ও অপরাপর বাল্টিক দেশকে ‘বাফার জোন’ হিসেবে ব্যবহার করতে পেরেছিলো।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর নিরপেক্ষতার অবস্থান থেকে সরে আসে ফিনল্যান্ড। তখন তারা পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে তাকাতে শুরু করে ও সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব বলয় থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা শুরু করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App