×

আন্তর্জাতিক

ওয়াগনার ভাঙল, পুতিনের তিন বিকল্প

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৩, ১০:৩২ এএম

ওয়াগনার ভাঙল, পুতিনের তিন বিকল্প

ছবি: সংগৃহীত

মস্কোর সামরিক অধিনায়কদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনার গ্রুপ ভেঙে দেয়া হচ্ছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওয়াগনার গ্রুপের সেনাদের অস্ত্রশস্ত্র সামরিক বাহিনীর কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।এদিকে সশস্ত্র বিদ্রোহের পর ওয়াগনার প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানির (পিএমসি) যোদ্ধাদের সামনে ৩টি বিকল্প দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

গত সোমবার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে পুতিন বিকল্পগুলোর কথা উল্লেখ করেন। ওয়াগনারের বিদ্রোহের পর পুতিন গতকালই প্রথম জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তবে ৫ মিনিটের বক্তৃতায় পুতিন ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের নাম উচ্চারণ করেননি। তিনি বলেন, আমি ওয়াগনার গ্রুপের সেই সেনা ও কমান্ডারদের ধন্যবাদ জানাই, যারা একমাত্র সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তারা ভ্রাতৃঘাতী রক্তপাতে যায়নি, শেষ মুহূর্তে তারা থেমে গেছে।

পুতিনের ভাষণ অনুযায়ী, প্রথম বিকল্প হলো- ওয়াগনার যোদ্ধাদের রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বা অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে দেশের সেবা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকবে। দ্বিতীয় বিকল্প, ওয়াগনার যোদ্ধারা চাইলে তাদের পরিবার-পরিজন-বন্ধুদের কাছে ফিরতে পারবেন। আর তৃতীয় বিকল্প, ওয়াগনার যোদ্ধাদের কেউ চাইলে রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশ বেলারুশে চলে যেতে পারবেন।

ভাষণে পুতিন বলেন, সময় দরকার, অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে যারা ভুল করেছে তাদের নিজেদের জ্ঞান ফিরে আসার, তাদের কর্মকাণ্ড সমাজ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে এটি উপলব্ধি করার এবং যে অ্যাডভেঞ্চারে তারা জড়িয়ে পড়েছিল তা যে রাশিয়া ও আমাদের রাষ্ট্রের জন্য শোচনীয় ও ধ্বংসাত্মক পরিণতি বয়ে নিয়ে আসতো তা বোঝার সুযোগ দেয়া দরকার।

ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিন বিদ্রোহ ঘোষণা করে গত শনিবার তার বাহিনী নিয়ে ইউক্রেন সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ার রাজধানী মস্কো অভিমুখে অভিযাত্রা করেন। পরে বেলারুশের মধ্যস্থতায় তিনি এই অভিযাত্রা বন্ধ করেন। সমঝোতায় বলা হয়, প্রিগোশিন বেলারুশে চলে যাবেন। বিদ্রোহের কারণে আনা অভিযোগ প্রত্যাহার হবে।

পুতিনের উৎখাত চাইনি, দাবি প্রিগোশিনের : বিদ্রোহ থেকে সরে আসার পর সোমবার প্রথমবারের মতো অডিও বার্তা দেন প্রিগোশিন। তিনি বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পতন ঘটাতে তার সেনারা মস্কো অভিমুখে যাত্রা করেনি বরং তারা ওয়াগনারের ধ্বংস এড়াতে চেয়েছিল।

প্রিগোশিন জানান, ইউক্রেন যুদ্ধে ভুল করার জন্য তিনি যে নেতাদের দোষারোপ করেছিলেন তাদের জবাবদিহি করাতেই তার সেনারা মস্কোয় যাত্রা করেন। ন্যায়বিচারের জন্য ওয়াগনারের এই পদযাত্রার লক্ষ্য প্রেসিডেন্ট পুতিনকে উৎখাত করা ছিল না। তিনি আরো বলেন, বেলারুশের নেতৃত্ব এমন সমাধানের প্রস্তাব করেছে, যা ওয়াগনারকে আইন অনুযায়ী কর্মকাণ্ড পরিচালনার অনুমতি দেবে।

শনিবার বিদ্রোহের অবসানের ঘোষণা দেয়ার পর থেকে ওয়াগনারপ্রধানের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে বেলারুশের সামরিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী স্বতন্ত্র সংস্থা বেলারুসকি হাজুন বলেছে, মঙ্গলবার সকালের দিকে (গ্রিনিচ মান সময় ৪টা ৩৭ মিনিটে) মিনস্কে একটি বিজনেস বিমান অবতরণ করেছে। ওই বিমানটি প্রিগোশিন ব্যবহার করেন বলে জানা গেছে।

ওয়াগনারপ্রধানের মামলা প্রত্যাহার : বিদ্রোহের অভিযোগে ওয়াগনার ও এর প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের বিরুদ্ধে দায়ের করা ফৌজদারি অপরাধের মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে রাশিয়া। মঙ্গলবার রুশ কর্তৃপক্ষ বলেছে, ইয়েভগেনি ও ওয়াগনার সৈন্যদের বিরুদ্ধে আর কোনো অভিযোগ নেই। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি বলেছে, তদন্তে দেখা গেছে বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িতরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী, রুশ সেনাবাহিনীর কাছে ভারী সমরাস্ত্রগুলো হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করেছে ওয়াগনার গ্রুপ। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের টেলিগ্রাম চ্যানেলে এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

রাশিয়ার আইনে সশস্ত্র বিদ্রোহের অভিযোগে ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। দেশটির প্রসিকিউটরের কার্যালয় বলেছে, ওয়াগনার গ্রুপ ও প্রিগোশিনের বিরুদ্ধে দায়ের করা ফৌজদারি মামলাটি স্থগিত করা হয়েছে। রাশিয়ার আইনে এই ধরনের অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির ১২-২০ বছরের সাজা হতে পারে।

নিহত পাইলটদের প্রতি শ্রদ্ধা পুতিনের : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে নিহত পাইলটদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এতে এই প্রথম নিশ্চিত হলো বিদ্রোহী মিলিশিয়া বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ শনিবার মস্কোর দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় লড়াইয়ে রাশিয়ার পাইলটরা নিহত হয়েছেন।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, লড়াইয়ে ওয়াগনার বাহিনী রাশিয়ার বিমান ভূপাতিত করেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা এমন প্রতিবেদনগুলোও পুতিনের ভাষণের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে। পুতিন বলেন, নিহত বীর পাইলটদের সাহস ও আত্মত্যাগ রাশিয়াকে শোচনীয় বিধ্বংসী পরিণতি থেকে রক্ষা করেছে। বিদ্রোহীরা রাশিয়ার অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছিল এবং এর পেছনে যারা আছে তাদের শাস্তি দেয়া হবে।

তবে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে কতজন পাইলট নিহত হয়েছেন এবং কয়টি বিমান ভূপাতিত হয়েছে, এ বিষয়ে সরকারি কোনো ভাষ্য পাওয়া যায়নি। রাইবারসহ রাশিয়ার সামরিক তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করা কিছু রুশ টেলিগ্রাম চ্যানেল শনিবার জানিয়েছিল, দিনব্যাপী চলা ওই বিদ্রোহের সময় রাশিয়ার ১৩ জন পাইলট নিহত হয়েছেন। আর ৩টি এমআই-৮ এমটিপিআর ইলেকট্রনিক ওয়্যারফেয়ার হেলিকপ্টার এবং ক্রুসহ একটি ১১-১৮ বিমান ভূপাতিত হয়েছে।

এ বিষয়ে ওয়াগনারপ্রধান প্রিগোশিন তার প্রেস সার্ভিসের টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা ১১ মিনিটের একটি অডিও বার্তায় বলেন, তারা দক্ষিণাঞ্চল থেকে মস্কোর দিকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটারের মতো এগোনোর পর হেলিকপ্টার এসে তাদের ওপর হামলা চালায়, তখন তার যোদ্ধারা বাধ্য হয়ে সেগুলো গুলি করে ভূপাতিত করে।

প্রিগোশিন বলেন, রুশ কর্তৃপক্ষ আগামী ১ জুলাই থেকে ওয়াগনার গ্রুপ বন্ধ করে দিয়ে এর সৈন্যদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ওয়াগনার গ্রুপ এর বিরোধী ছিল এবং কমান্ডাররা কেউই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কোনো চুক্তি করতে রাজি হননি। তিনি আরো বলেন, ওয়াগনার গ্রুপকে সক্রিয় রাখার উপায় বের করতে বেলারুশের নেতা আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো সহায়তা করেছেন।

প্রিগোশিন তার বার্তায় রুশ সেনাবাহিনীর সমালোচনা করে দাবি করেন, ওয়াগনার গ্রুপকে প্রথম আক্রমণের দায়িত্ব দেয়া হলে অনেক আগেই ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শেষ হয়ে যেত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App