×

আন্তর্জাতিক

ওয়াগনার বিদ্রোহের পর স্বাভাবিক হচ্ছে রাশিয়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৩, ১০:১৯ এএম

ওয়াগনার বিদ্রোহের পর স্বাভাবিক হচ্ছে রাশিয়া

ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ায় ভাড়াটে আধাসামরিক বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহ অবসানের একদিন পর দেশটির সরকারি টিভিতে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুকে দেখা গেছে। সংবাদদাতারা বলছেন, পুতিন ও তার সরকার যে তাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম করে যাচ্ছেন এমন একটা চিত্রই তুলে ধরা হচ্ছে। ক্রেমলিন গতকাল সোমবার পুতিনের একটি ভিডিও বক্তৃতা অনলাইনে পোস্ট করেছে।

ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহ অবসান এবং এই গ্রুপের নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের রাশিয়া ত্যাগের পর এই প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট পুতিনকে কোনো ভিডিওতে দেখা গেল। এতে একটি যুব শিল্প ফোরামে আসা অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে রুশ প্রেসিডেন্টকে ভাষণ দিতে দেখা যায়। তবে তিনি ওয়াগনার গ্রুপ সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলির কোনো উল্লেখ করেননি।

এদিকে ক্রেমলিনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট পুতিন গতকাল ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। বিবৃতিতে ওয়াগনার বিদ্রোহের প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়, ইরানি প্রেসিডেন্ট রুশ নেতৃত্বের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেছেন।

রাশিয়ার যে শহরটি ছিল ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহী তৎপরতার কেন্দ্র- সেই রস্তোভ-অন-ডনে ঐক্যের ডাক ও রক্তপাতের বিরুদ্ধে সতর্কবাণী লেখা পোস্টার দেখা গেছে। টেলিগ্রামে স্থানীয় একটি চ্যানেলে এসব পোস্টারের ছবি দেখা যায়।

ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহ অবসান এবং এই গ্রুপের নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের রাশিয়া ত্যাগের পর গতকাল সোমবার প্রথমবারের মতো শোইগুকেও টিভিতে দেখা গেছে। তাকে ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ সৈন্যদের পরিদর্শন করতে দেখা যায়।

এরই মধ্যে রুশ প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন বলেছেন, রাশিয়ার স্থিতিশীলতা চ্যালেঞ্জের মুখে এবং দেশকে অবশ্যই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পেছনে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। গতকাল টিভিতে সম্প্রচারিত এক সরকারি বৈঠকে মিশুস্তিন বলেন, রাশিয়ার স্থিতিশীলতা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। আমাদের প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে একতাবদ্ধ হয়ে, একজোট হয়ে কাজ করা দরকার, সব বাহিনীর একতা রক্ষা করা দরকার।

ওয়াগনার বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়া ইয়েভগেনি প্রিগোশিন বেলারুশ চলে গেছেন বলে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হলেও তাকে এখন পর্যন্ত কোথাও দেখা যায়নি, এবং তিনি এ পর্যন্ত কোনো কথাও বলেননি। প্রিগোশিনের রাশিয়া ছাড়ার আগে শনিবার তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রত্যাহার এবং ‘এক সমঝোতার’ খবর পাওয়া গেলেও রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় বলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার সিদ্ধান্ত এখনো বহাল রয়েছে। প্রিগোশিনের বিরুদ্ধে ফেডারেল নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান তদন্ত করছে।

যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে বলেছে যে এই বিদ্রোহ ছিল রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতি এক সরাসরি চ্যালেঞ্জ এবং এতে স্পষ্ট হয়েছে যে তার নেতৃত্বে ফাটল ধরেছে। ওয়াগনারের বিদ্রোহের ব্যাপারে চীন এ কয়েকদিন নীরব থাকলেও রবিবার রাতে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়, যা ঘটেছে তা রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়। রাশিয়ার ‘বন্ধুসুলভ প্রতিবেশী’ এবং অংশীদার হিসেবে চীন রাশিয়াকে তার জাতীয় স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রয়াসে সমর্থন দেয়।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ গতকাল বলেছেন, ওয়াগনারের বিদ্রোহের সঙ্গে ওয়াশিংটন জড়িত নয় বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মস্কোয় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত। ওয়াগনারের বিদ্রোহকে রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয় বলেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন ট্রেসি। ল্যাভরভ আরো বলেন, ওয়াগনারের বিদ্রোহে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ভূমিকা আছে কি না, তা তদন্ত করে দেখছে রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

গত শনিবার হঠাৎ করেই ওয়াগনার সেনাদের একটি অংশ রাশিয়ার মস্কোর দিকে যাত্রা করে। ওয়াগনার প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিন রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বকে উৎখাতের হুমকি দেন। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ওয়াগনার সেনারা এক হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে মস্কোর ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছে যায়। পরিস্থিতি এমন জায়গায় রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ঠেলে দেয়, যে তিনি তার একসময়ের মিত্র প্রিগোশিনকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহের’ দায়েও অভিযুক্ত করেন। এই সশস্ত্র বিদ্রোহকে অভিহিত করেন ‘রাশিয়ার পিঠে ছুরিকাঘাত’ হিসেবে।

যদিও শেষ পর্যন্ত ঘটনা বেশি দূর এগোয়নি। কয়েক ঘণ্টার উত্তেজনার পর বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় তা প্রশমিত হয়। ওই সমঝোতা অনুযায়ী ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিনকে এখন রাশিয়া ছেড়ে বেলারুশে চলে যেতে হবে। নিজেদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেয়ে শনিবার বিকালে বিদ্রোহী সেনারা তাদের মস্কো যাত্রা বাতিল করে এবং পরে রস্তোভ-অন-ডন শহর ছেড়ে নিজেদের ক্যাম্পে ফিরে যায়।

এ বিদ্রোহের ঘটনা স্বল্প সময়ের হলেও তা রাশিয়ার মিত্র কিংবা শত্রু উভয় দেশের সরকারেই নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এমন বিদ্রোহের পর বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার থাকা দেশ রাশিয়ায় কী ঘটতে চলেছে সে প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছে সবাই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App