×

আন্তর্জাতিক

পবিত্র হজ আজ : ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৩, ০৯:৪৬ এএম

পবিত্র হজ আজ : ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’

ছবি: সংগৃহীত

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখর এখন সৌদি আরবের পবিত্র আরাফাতের ময়দান। বিশ্ব মুসলিমের মহাসম্মেলন। আজ ৯ জিলহজ মঙ্গলবার পবিত্র হজ। পাপমুক্তি আর আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ এই পবিত্র হজ পালন করছেন।

গোটা দুনিয়া থেকে আগত লাখ লাখ হজপালনকারী আজ ফজরের পর ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হয়েছেন। করোনা মহামারির কারণে ও পরবর্তী পরিস্থিতিতে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত তিন বছর নানা শর্তে সীমিত পরিসরে পবিত্র হজ পালনের সুযোগ দেয়া হলেও এবার বড় আয়োজনে হচ্ছে। এর আগে গত রবিবার মক্কার অদূরে মিনায় স্থাপিত তাঁবুতে অবস্থানের মধ্য দিয়ে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সেখানে নির্ধারিত তাঁবুতে অবস্থান করে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে সময় কাটাচ্ছেন তারা।

হজের নিয়ম অনুযায়ী- আজ ৯ জিলহজ মঙ্গলবার মূল হজের দিন হাজিরা আরাফাতের ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকবেন। চার বর্গমাইল আয়তনের এই বিশাল সমতল মাঠের দক্ষিণ দিকে মক্কা হাদা তায়েফ রিং রোড, উত্তরে সাদ পাহাড়। সেখান থেকে আরাফাত সীমান্ত পশ্চিমে আরো প্রায় পৌনে ১ মাইল বিস্তৃত। মুসলমানদের অতি পবিত্র এই ভূমিতে যার যার মতো সুবিধাজনক জায়গা বেছে নিয়ে তারা ইবাদত করবেন, হজের খুতবা শুনবেন এবং জোহর ও আসরের নামাজ পড়বেন। আল্লাহ তায়ালার জিকির-আসকারে মশগুল থাকবেন।

আরাফাত ময়দানের মসজিদে নামিরায় জোহরের নামাজের আগে খুতবা পাঠ করবেন গ্র্যান্ড ইমাম। এরপর তারা মুজদালিফার উদ্দেশে আরাফাত ময়দান ত্যাগ করবেন এবং মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে পড়বেন এবং পুরো রাত সেখানে অবস্থান করবেন। মিনায় জামারাতে নিক্ষেপ করার জন্য ৭০টি কংকর এখান থেকে সংগ্রহ করবেন। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে ১০ জিলহজ আগামীকাল বুধবার মিনার উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। মিনায় পৌঁছার পর হাজিদের পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। প্রথমে মিনাকে ডান দিকে রেখে হাজিরা দাঁড়িয়ে শয়তানকে (জামারা) পাথর নিক্ষেপ করবেন। দ্বিতীয় কাজ আল্লাহর উদ্দেশে পশু কুরবানি করা। অনেকেই মিনায় না পারলে মক্কায় ফিরে গিয়ে পশু কোরবানি দেন।

তৃতীয় পর্বে মাথা ন্যাড়া করা। চতুর্থ কাজ তাওয়াফে জিয়ারত। মিনায় রাত যাপন করে ১১ জিলহজ বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত হাজিরা বড়, মধ্যম ও ছোট শয়তানের ওপর সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করবেন। আর এ কাজটি করা সুন্নত। পরদিন ১২ জিলহজ শুক্রবার মিনায় অবস্থান করে পুনরায় একইভাবে হাজিরা শয়তানের ওপর পাথর নিক্ষেপ করবেন। শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা শেষ হলে অনেকে সূর্যাস্তের আগেই মিনা ছেড়ে মক্কায় চলে যাবেন। আর মক্কায় পৌঁছার পর হাজিদের একটি কাজ অবশিষ্ট থাকে। সেটি হচ্ছে কাবা শরিফ তাওয়াফ করা। একে বলে বিদায়ী তাওয়াফ। স্থানীয়রা ছাড়া বিদায়ী তাওয়াফ অর্থাৎ কাবা শরিফে পুনরায় সাতবার চক্কর দেয়ার মাধ্যমে হাজিরা সম্পন্ন করবেন পবিত্র হজ পালন।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অফিসের সর্বশেষ বুলেটিন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে এবার ১ লাখ ২২ হাজার ৮৩৩ হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার ৩২১ ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী ১ লাখ ১২ হাজার ৫৬২ জন। এদিকে পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরবে আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তায় শুরু থেকেই নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন স্তরের লক্ষাধিক কর্মী দায়িত্ব পালনে রয়েছেন হজের নির্ধারিত স্থানগুলোতে। তাঁবুর শহর মিনা সজ্জিত হয়েছে নতুনরূপে, আগের চেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে মুসল্লিদের জন্য। মিনার বিভিন্ন পয়েন্টে কয়েক হাজার অটো ইলেকট্রিক গাড়ি সেবা দেবে হাজিদের। এছাড়া আরাফাতের নির্ধারিত স্থানে সৌদি সেনা সদস্যদের কয়েক প্লাটুন মোতায়েন রয়েছে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায়।

এর আগে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহবিষয়ক মন্ত্রী ডা. তৌফিক আল রাবিয়া বলেন, এবার বিশ্বের লাখো লাখো মুসলিমের লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত হবে মক্কা। এ বছর ৩২ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী হজযাত্রীদের সেবা দেবেন। হজ পালনে আল্লাহর অতিথিদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে সরকার ও সৌদির জনগণ অংশ নেবে। অপরদিকে হজযাত্রীদের দিকনির্দেশনা দিতে এবারো বেশ কিছু রোবট মোতায়েন করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। পবিত্র কাবাঘরের আঙিনায় কিং আব্দুল আজিজ কমপ্লেক্সের সামনেও দেখা গেছে এমনই একটি রোবট। কিসওয়া (বিশেষ কালো কাপড় যা দিয়ে কাবাঘর আচ্ছাদিত করা হয়) গায়ে রোবটটি হজযাত্রীদের স্বাগত জানাচ্ছে। এছাড়া হজযাত্রীদের বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনাও দিচ্ছে। রোবটটি বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আরবিতে দর্শনার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। এটি বিশ্বের ১১টি ভাষায় যোগাযোগ করতে পারে। ভাষাগুলো হলো- আরবি, ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, রুশ, ফার্সি, তার্কিশ, চাইনিজ, বাংলা ও হাউসা ইত্যাদি।

সৌদির পরিসংখ্যান অনুসারে- গত বছর ৯ লাখ ২৬ হাজারেরও বেশি লোক হজ পালন করেছেন। এর আগের বছর ২০২১ সালে প্রায় ৫৯ হাজার জন হজ পালন করেন। আর ২০২০ সালে শুধু সৌদিতে অবস্থানরত ১০ হাজার মুসলিম হজের সুযোগ পেয়েছিলেন। অথচ করোনা মহামারির আগে ২০১৯ সালে প্রায় ২৫ লাখ লোক হজ পালন করেন। এবার কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ সম্পূর্ণভাবে তুলে নেয়া হয়েছে এবং বয়সের সীমা বাতিল করা হয়েছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, এবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২৫ লাখ মুসলিম পবিত্র হজ পালন করবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App