×

আন্তর্জাতিক

মোদী-বাইডেন বৈঠকে থাকছে কি বাংলাদেশ প্রসঙ্গ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৩, ১২:০৪ এএম

মোদী-বাইডেন বৈঠকে থাকছে কি বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
মোদী-বাইডেন বৈঠকে থাকছে কি বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
যুক্তরাষ্ট্র সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ শেষ পর্যন্ত থাকছে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক সচেতেন মহলে বেশ কৌতুহল কাজ করছে। তাদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ঘিরে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আসা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে নানারকম তথ্য ওঠে এসেছে। তবে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ভারত সূত্রে কেউ কোনো মন্তব্য করেনি। মঙ্গলবার (২০ জুন) রাজধানী ঢাকায় এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও মোদী-বাইডেন বৈঠক প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি অবশ্য স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন, সেই বৈঠকের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই। ওবায়দুল কাদের বলেন, মোদীর-যুক্তরাষ্ট্র সফরের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী, বাইরের কোনো শক্তির পরামর্শে নয়। তিনি আরও বলেন, মোদীর-যুক্তরাষ্ট্র সফরের সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচনের সম্পর্ক কী, তা আমার জানা নেই। মোদী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কী নিয়ে আলোচনা করবেন, সেটা তার নিজস্ব বিষয়। বিশ্বে অস্থিরতা, যুদ্ধ, মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি সংকট এসব বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হবে। বাংলাদেশ নিয়ে কোনো কথা হবে কি না, তা আমার জানা নেই। আমরাও মোদীর কাছে এমন কোনো প্রস্তাব পাঠাইনি বাইডেনকে বোঝানোর জন্য।’ এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে গত সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কী আলোচনা করবেন, সেটা তাঁদের বিষয়। সেখানে বাংলাদেশের ওকালতি করার প্রয়োজন নেই। এসব মন্তব্যের ফলে বাইডেন-মোদী বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক মহলে বেশ কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। টাইম ম্যাগাজিন জানায়, রাষ্ট্রীয় এ সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছ থেকে ফ্রান্সের ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ও দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়োন সুক ইয়োলের মতো কূটনৈতিক সংবর্ধনা পাওয়ার পর থেকে নরেন্দ্র মোদী বিবেচিত হবেন তৃতীয় বিশ্বের নেতা হিসেবে। ভারত বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে জনবহুল দেশ। এটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর অন্যতম। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি ও নতুন আবিষ্কারেও পিছিয়ে নেই দেশটি। বাইডেন প্রশাসন আশা করে, ভারত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু হিসেবে ইন্দো-প্যাসিফিকে চীনাদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে মোকাবিলা করতে পারবে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব জ্য পিয়েরে বলেন, এই সফর দুই দেশের শক্তিকে আরও বাড়াবে। উন্মুক্ত আলোচনার সুযোগ থাকার পাশাপাশি দুই দেশের উন্নয়নের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে ইন্দো-প্যাসিফিকের নিরাপত্তা, কৌশল-প্রযুক্তিগত বন্ধুত্ব, প্রতিরক্ষা, বিশুদ্ধ জ্বালানি এবং মহাকাশ নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে প্রতিরক্ষা এবং উৎপাদন নিয়ে যে সম্পর্ক আছে তা পুনরায় মজবুত করা হবে। সম্প্রতি ওয়াশিংটন ও দিল্লি যৌথভাবে জেট ইঞ্জিন উৎপাদন, দূরপাল্লার কামান ও সামরিক যান নির্মাণ করতে যাচ্ছে। গত মে মাসে ভারত বাইডেনের ১৪ সদস্য বিশিষ্ট ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফোরামে যোগ দিয়েছে। কোনো আনুষ্ঠানিক বাণিজ্য চুক্তি ছাড়াই চীনাদের অর্থনৈতিক আধিপত্য কমানোর লক্ষ্য নিয়েই এই জোট গঠন করা হয়েছে। আমেরিকার ‘জেনারেল ইলেকট্রিক’-এর ভারতে সামরিক বিমান উৎপাদনের কথা রয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সেমিকন্ডাক্টর এবং চিপ উৎপাদনকারী বাস্তুতন্ত্র গড়ে তোলার প্রয়াস চালাচ্ছে। চীনাদের ওপর নির্ভরতা কমাতেই ভারতে প্রযুক্তি সংক্রান্ত এই বাস্তুতন্ত্র গড়ে তুলতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, ২ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করে ভারত দুই ডজনের বেশি ড্রোন কেনার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে। সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অপতৎপরতা ঠেকাতে এগুলো ব্যবহার হবে। কার্নেজিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ এশিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক মিলান বৈষ্ণব বলেন, ভারত আশা করছে আরও মার্কিন ডলার, মার্কিন কোম্পানি তাদের দেশে আসুক। মার্কিন উদ্যোক্তারা ভারতকে তাদের অগ্রগতির কেন্দ্রীয় অংশ হিসেবে বিবেচনা করুক। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন,বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারের পথে চীনারা বড় বাধা। ২০২০ সালে ভূমি নিয়ে চীনাদের আক্রমণাত্মক আচরণ, হিমালয়ের সীমান্ত নিয়ে বিরোধ ও লাদাখে চীনা সৈন্যদের সঙ্গে লড়াইয়ে ২০ ভারতীয় সেনার মৃত্যু, পাকিস্তানের সঙ্গে চীনাদের গভীর সম্প্রীতি বিষিয়ে তুলেছে দুই দেশের সম্পর্ককে। এদিকে মিলান বৈষ্ণব বলেন, ওয়াশিংটন প্রকৃতপক্ষেই চীনাদের বাধা দিতে চায়। এ জন্য ভারতকে অপরিহার্য এক উপাদান হিসেবেই দেখছে ওয়াশিংটন। বিগত বছরগুলোয় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যহারে পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৯০ সালের আগ পর্যন্তও দুই দেশই বিচ্ছিন্ন গণতন্ত্রের দেশ ছিল মন্তব্য করেছেন সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেনিস কুক্স। তবে ২০০০ এর পর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতের শক্তিশালী অবস্থানকে স্বীকার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। সেই থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন থেকে শুরু করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করেছেন। ২০০৫ সালে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক চুক্তির করে। তখন থেকে ভারতকে কার্যত পারমাণবিক শক্তির ধারক রাষ্ট্র বিবেচনা করা হয়। এছাড়া সম্প্রতি কোয়াডে ভারতের অংশগ্রহণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে যায়। কোয়াড মূলত যুক্তরাষ্ট্র এবং তার বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর (জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত) একটি জোট। এদিকে ভারত বাইডেনের ১৪ সদস্যবিশিষ্ট ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফোরামে যোগ দেওয়ার পর চীনা উৎপাদনের ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরতা কমবে। মোদী-বাইডেন বৈঠকে থাকছে কি বাংলাদেশ প্রসঙ্গ 
এদিকে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধাদানকারী কোনো বাংলাদেশিকে ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। এই মর্মে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য পৃথক ভিসানীতি ঘোষণা করে। এরপর থেকে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলসহ সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশর ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশি ভারত। তাই এবার মোদী-বাইডেন বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ থাকবে কিনা তা নিয়ে কৌতুহল দেখা দিয়েছে অনেকের মধ্যে। এ বৈঠকের দিকে এখন তাকিয়ে আছে আন্তর্জাতিক মহল। আন্তর্জাতিক সাময়িকী ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ও এই আসন্ন সফরের পটভূমিতে লিখেছে, ভারত যদিও পশ্চিমাদের পছন্দ করে না, আমেরিকার কাছে আজ তারা অপরিহার্য’, আর এই সফরে এরই প্রতিফলন ঘটতে চলেছে। দ্য ওয়াশিংটন পোস্টও মন্তব্য করেছে, চীনের বিরুদ্ধে একটি কার্যকর ‘প্রতিরোধ’ গড়তে ভারতকে আজ যতোটা প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের, ততটা আগে কখনোই ছিল না। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াটরা সোমবার দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ভারত ও আমেরিকার মধ্যে রাজনৈতিক স্তরে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতার একটা প্রভাব অবশ্যই এই সফরে পড়বে। নরেন্দ্র মোদী ও জো বাইডেনের মধ্যে ব্যক্তিগত স্তরেও একটা ‘লিডারশিপ কানেক্ট’ গড়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App